শিক্ষকের বেতন বৃদ্ধিই কি শিক্ষার উন্নতির চাবিকাঠি? না শুধু ভঙ্গুর এক অজুহাত!

শিক্ষকের বেতন বৃদ্ধিই কি শিক্ষার উন্নতির চাবিকাঠি? না শুধু ভঙ্গুর এক অজুহাত!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

একদিকে শিক্ষক সমাজের দৈন্যদশা, অন্যদিকে শিক্ষার মান অবনতির অভিযোগ—দুটি বিষয় যেন এক সুতোয় গাঁথা, অথচ সমাধান যেন বহু দূরের স্বপ্ন। প্রশ্ন উঠছে—শিক্ষকের সামান্য মাসিক আয়ে কি মানসম্পন্ন শিক্ষা আশা করা বাস্তবসম্মত? আর যদি তা-ই হয়, তবে এত দশক ধরে শিক্ষা খাতে বাজেট বাড়িয়েও কেন মানে তেমন উন্নতি আসছে না?

বাংলাদেশের বহু বেসরকারি বিদ্যালয়-কলেজ বা মাদ্রাসায় শিক্ষকরা মাসে ৫ থেকে ১৫ হাজার টাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেন। জাতীয়করণ না হলে অধিকাংশেরই কোনো বেতন কাঠামো নেই। সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষকরাও শুরুতে পান ১৬০০০–২২০০০ টাকার মতো, যা জীবনযাত্রার ব্যয় বিবেচনায় যথেষ্ট নয়।

এই পরিস্থিতিতে একজন শিক্ষক কীভাবে মনোযোগ দিয়ে পাঠদানে মনোযোগী হবেন, গবেষণা করবেন, কিংবা নিজের দক্ষতা বাড়াবেন?
 

শিক্ষার মানে অবনতি কি শুধু বেতনই দায়ী?

না, বিষয়টি একমাত্র আর্থিক নয়। শিক্ষার মান নিম্নমুখী হওয়ার পেছনে রয়েছে আরও নানা জটিলতা-

১। প্রশিক্ষণের ঘাটতি: অধিকাংশ শিক্ষক আধুনিক শিক্ষাদান পদ্ধতি বা বিষয়ভিত্তিক গভীর প্রশিক্ষণ পান না।

২। অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষের চাপ: একটি ক্লাসে ৬০–৮০ জন শিক্ষার্থী, যাদের আলাদা করে শেখানো প্রায় অসম্ভব।

৩। পরীক্ষা নির্ভর শিক্ষা: শেখার চেয়ে 'পাশ করানো' লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

৪। প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনা: নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি ইত্যাদিতে ন্যায়সংগত মানদণ্ডের অভাব।
 

তবে আর্থিক নিরাপত্তার অভাবের কারণে শিক্ষকরা প্রাইভেট টিউশন, কোচিং অথবা অন্য পার্ট-টাইম কাজের দিকে ঝুঁকছেন, যা শিক্ষাকেন্দ্রিক মনোযোগ সরিয়ে নিচ্ছে।
 

মেধাবীরা শিক্ষকতাকে কেন বেছে নিচ্ছেন না?

কোনো শিক্ষার্থী যখন উচ্চতর শিক্ষা শেষে চাকরির বাজারে নামেন, তখন শিক্ষকতা তাঁর কাছে "শেষ অপশন" হয়ে ওঠে!!

কারণ-

⇨ সম্মান আছে, কিন্তু জীবিকা চলে না।

⇨ পেশাগত উন্নতির সুযোগ সীমিত।

⇨ সৃজনশীলতার জায়গা অনেক ক্ষেত্রে অবরুদ্ধ।
 

ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে যোগ দিচ্ছেন না সমাজের সেরা মেধাবীরা, যা শিক্ষার মানে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলছে।
 

সামঞ্জস্যহীনতার মূল কারণগুলো :

⇨ বেতন কাঠামো ও জীবনযাত্রার ব্যয়ের মধ্যে ব্যবধান।

⇨ প্রশিক্ষণ ও পেশাগত উন্নয়নের অভাব।

⇨ নীতি-নির্ধারণে শিক্ষকদের মতামতের অনুপস্থিতি।

⇨ শিক্ষা বাজেটের অপর্যাপ্ততা বা অকার্যকর ব্যয়।

⇨ প্রযুক্তি, পাঠ্যক্রম ও বাস্তব জীবনের মধ্যে অসংগতি।
 

সমাধান:

⇨ একটি স্থায়ী ও সম্মানজনক বেতন কাঠামো প্রণয়ন।

⇨ শিক্ষকদের বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণ এবং ক্যারিয়ার গ্রোথ নিশ্চিত করা।

⇨ শিক্ষা প্রশাসন ও নীতিনির্ধারণে শিক্ষকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ।

⇨ স্কুলভিত্তিক মানোন্নয়ন পরিকল্পনা—জায়গাভেদে চাহিদা অনুযায়ী ব্যবস্থা।

⇨ শিক্ষাব্যবস্থাকে টেস্ট-নির্ভরতা থেকে শেখা-নির্ভরতায় রূপান্তর।
 

শিক্ষকতা শুধু পেশা নয়—এটি একটি দায়িত্ব, যা জাতি গঠনের ভিত্তি। আর এই দায়িত্ব পালন তখনই সম্ভব, যখন শিক্ষক নিজেই সম্মানজনক জীবনযাপন করতে পারবেন। সম্মান শুধু মুখের কথা নয়—এটা নীতিগত ও আর্থিক স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য শিক্ষককে 'প্রদানকারী' নয়, 'প্রধান চালক' হিসেবে দেখতে শিখতে হবে আমাদের।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ