'Pygmalion Effect'-একটা ছোট্ট বিশ্বাস যা বদলে দিতে পারে পুরো জীবন!জেনে নিন কিভাবে

'Pygmalion Effect'-একটা ছোট্ট বিশ্বাস যা বদলে দিতে পারে পুরো জীবন!জেনে নিন কিভাবে
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

"তুমি পারবে"-এই ছোট্ট বাক্যটিই কারও জীবন বদলে দিতে পারে। শুধু উৎসাহ নয়, মানুষের উপর ইতিবাচক প্রত্যাশা তার আচরণ, পারফরম্যান্স, এমনকি আত্মপরিচয় (self-image) পর্যন্ত পাল্টে দিতে পারে। এই মস্তিষ্ক-বিকাশক সামর্থ্যের প্রক্রিয়াটিই মনোবিজ্ঞানে পরিচিত Pygmalion Effect নামে।

Pygmalion Effect কী?

এটি একটি মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব, যেখানে একজন ব্যক্তি যদি অনুভব করেন যে, অন্যরা তার কাছ থেকে ভালো কিছু আশা করছে, তাহলে সে নিজের অজান্তেই সেই প্রত্যাশা পূরণ করার মতো আচরণ ও প্রচেষ্টা দেখাতে শুরু করে।

এই প্রভাবটি প্রথম চিহ্নিত হয় শিক্ষাক্ষেত্রে, কিন্তু পরে প্রমাণিত হয়েছে যে এটি পরিবার, কর্মক্ষেত্র, সামাজিক সম্পর্ক এমনকি আত্মউন্নয়নেও গভীরভাবে কাজ করে।
 

এর পেছনে কাজ করে যেসব মনোবৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়াগুলো:

১. Self-Fulfilling Prophecy (স্ব-সম্পাদন ভবিষ্যদ্বাণী):
যখন কেউ বিশ্বাস করে, "আমি এটা পারবো" সে সে অনুযায়ী কাজ করতে শুরু করে। আবার যদি বিশ্বাস করে, "আমি ব্যর্থ হবই"—তাহলে সেই বিশ্বাস নিজেই ব্যর্থতার রাস্তায় নিয়ে যায়।

 

২. Social Feedback Loop (সামাজিক প্রতিক্রিয়া চক্র):
আপনার উপর যদি কেউ বিশ্বাস রাখে, তাহলে তারা আপনাকে বেশি মনোযোগ দেয়, আপনার ভুলকে সহানুভূতির চোখে দেখে, আপনাকে পরামর্শ দেয়। এসব প্রতিক্রিয়া আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং আপনাকে আরও দক্ষ করে তোলে।
 

৩. Cognitive Dissonance Reduction (জ্ঞানগত দ্বন্দ্ব হ্রাস):
যখন কেউ আমাদের 'স্মার্ট', 'যোগ্য' বা 'দায়িত্বশীল' বলে মনে করে, তখন আমাদের মস্তিষ্ক সে ধারণার সঙ্গে নিজের বাস্তব অবস্থার মিল আনতে চায়। ফলে, আমরা চেষ্টা করি সেই ভাবমূর্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে।
 

৪. Neurological Activation (স্নায়বিক উত্তেজনা):
ইতিবাচক প্রত্যাশা মানুষের prefrontal cortex ও limbic system-এ ডোপামিন রিলিজ বাড়িয়ে দেয়, যা সিদ্ধান্ত গ্রহণ, পরিকল্পনা এবং মোটিভেশনে সহায়তা করে। এটিই মোটিভেশনাল সাইকোলজির মূলে।
 

রোজেনথাল-জ্যাকবসনের ক্লাসরুম এক্সপেরিমেন্ট:

১৯৬৮ সালে দুই মনোবিজ্ঞানী রবার্ট রোজেনথাল ও লেনোর জ্যাকবসন একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গবেষণা চালান।
তারা শিক্ষকদের একটি ভুল তথ্য দেন যে কয়েকজন ছাত্র বিশেষভাবে মেধাবী (অথচ বাস্তবে তারা ছিল গড়পড়তা)।
একবছর পর দেখা যায়, ওই ছাত্ররা অন্যদের তুলনায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। কারণ কী?
শিক্ষকেরা তাদেরকে বেশি উৎসাহ দিয়েছেন, ভালো ফল আশা করেছেন, ভুল হলেও ধৈর্য ধরেছেন। ফলে শিশুরা নিজের অজান্তেই সেই 'প্রতিভাবান' ভাবনার বাস্তব রূপ দিতে পেরেছে।
 

পরিবারে Pygmalion Effect: 

পিতামাতা যদি সন্তানকে ভালোবাসা, ভরসা ও উৎসাহ দেন, তাহলে শিশুর মস্তিষ্কে "আমি পারি" ধারণাটি গেঁথে যায়। এটি নিউরোপ্লাস্টিসিটির মাধ্যমে তার মানসিক স্থিতি, সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা ও আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। অন্যদিকে যদি বারবার বলা হয় "তুই তো কিছুই পারিস না", "তোর দ্বারা কিচ্ছু হবে না", তখন শিশুর Self-Efficacy ধ্বংস হয়ে যায়। শিশুটি নিজেকে অক্ষম ভাবতে শুরু করে, এবং সত্যিই সে অক্ষম হয়ে পড়ে।

 

কর্মক্ষেত্রে Pygmalion Effect:

একজন টিম লিডার বা ম্যানেজার যদি মনে করেন, তার টিমমেটরা দক্ষ, দায়িত্বশীল তবে তিনি তাদের প্রতি ইতিবাচক আচরণ করেন। এতে কর্মীরাও নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে, দায়িত্বশীলতা বাড়ায়, এবং ফলাফলও উন্নত হয়। এটাকে বলা হয় Leadership Pygmalion Effect। এর মাধ্যমে একজন নেতা অন্যকে সেরা কর্মী বানিয়ে তুলতে পারে শুধুমাত্র বিশ্বাস ও সহানুভূতির মাধ্যমে।
 

Golem Effect: 

এটি Pygmalion-এর বিপরীত। যখন কেউ অন্যকে দেখে 'অযোগ্য', 'অদক্ষ' বা 'ভবিষ্যতহীন' বলে ধরে নেয়, তখন সে ব্যক্তি সত্যিই সেই ধারণার মধ্যে আটকে পড়ে।
এর ফলাফল:

⇨ কর্মক্ষেত্রে ডি-মোটিভেশন

⇨ পারিবারিক সম্পর্কে আত্মবিশ্বাসহীনতা

⇨ ছাত্রজীবনে কর্মক্ষমতা হ্রাস

⇨ মানসিক চাপ, হতাশা, ও ব্যর্থতা

Golem Effect মানুষকে ভেঙে ফেলে, Pygmalion Effect তাকে গড়ে তোলে।
 

পিগমেলিয়ন ইফেক্টের অন্তর্নিহিত কার্যপ্রক্রিয়ায় কাজ করে-

☞ Mirror Neuron Theory: মানুষ আশেপাশের মানুষের মনোভাবকে নিজের মধ্যে শোষণ করে।

☞ Labeling Theory: কাউকে বারবার একটি বিশেষ ট্যাগ দিলে সে সেটিকে নিজের আত্মপরিচয় হিসেবে গ্রহণ করে।

☞ Positive Reinforcement Cycle: ইতিবাচক ফিডব্যাক ও সমর্থন মানুষের শেখার ও বিকাশের গতিকে ত্বরান্বিত করে।
 

যেভাবে এই জ্ঞানের ব্যবহারিক প্রয়োগ সম্ভব:

✔ সন্তানকে গঠনমূলক প্রশংসা করুন, শুধুমাত্র ফল নয় বরং তার প্রচেষ্টাকে সম্মান দিন।

✔ শিক্ষকরা যদি ছাত্রদের "বিশেষ" ভাবেন, তারা সত্যিই সেই অবস্থানে পৌঁছাতে পারে।

✔ কর্মক্ষেত্রে বিশ্বাস ও দায়িত্ব ভাগাভাগি করে দিলে কর্মীরা নিজেদের আরও পরিণত করে গড়ে তোলে।

✔নেতিবাচক মন্তব্য বা 'লেবেলিং' থেকে বিরত থাকুন-এটি মানুষকে গুঁড়িয়ে দিতে পারে।
 

বিশ্বাস একধরনের মানসিক সার, যা মানুষকে বদলে দেয়। আপনি যদি চান আপনার সন্তান, সহকর্মী, ছাত্র বা বন্ধু উন্নতি করুক—তাহলে তার মধ্যে সম্ভাবনা খুঁজুন। তাকে জানান, আপনি বিশ্বাস করেন। কারণ আপনার সেই ভরসাই হতে পারে তার ভেতরে সেরা মানুষটিকে জাগিয়ে তোলার সবচেয়ে শক্তিশালী উপাদান। একটি মানুষ নিজের চেষ্টাতেই সফল হয় না সেই চেষ্টা শুরু হয় তখনই, যখন কেউ বলে—"তুমি পারবে।"

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ