সফটওয়্যার সেক্টরের দ্রুতগতির যাত্রা - জানুন কী কারণে থেমে যাচ্ছে এ গতি!!

সফটওয়্যার সেক্টরের দ্রুতগতির যাত্রা - জানুন কী কারণে থেমে যাচ্ছে এ গতি!!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

বাংলাদেশের সফটওয়্যার খাত বর্তমানে দেশের অন্যতম দ্রুত বিকাশমান শিল্পে পরিণত হয়েছে। এক দশক আগেও যেটি ছিল প্রান্তিক ও সম্ভাবনাময়, এখন সেটিই রপ্তানি আয়ের নতুন স্তম্ভ হয়ে উঠছে। তবে এই অগ্রগতির পেছনে যেমন ইতিবাচক চালক রয়েছে, তেমনি রয়েছে একাধিক কাঠামোগত ও বাস্তবসম্মত বাধাও।

দ্রুত বিকাশের কারণগুলো :

১. সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও নীতিগত সহায়তা-

'ডিজিটাল বাংলাদেশ' ধারণার অধীনে সরকার তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেয়। আইসিটি ডিভিশনের সহযোগিতায় Hi-Tech Park, Start-up Bangladesh, Learning & Earning Development Project (LEDP) সহ নানা প্রকল্প এই খাতের ভিত্তি গড়ে দেয়।
 

২. যুবশক্তি ও প্রযুক্তি-সচেতন জনসংখ্যা- বাংলাদেশের বিপুল তরুণ জনগোষ্ঠী-যাদের গড় বয়স ২৭-এর নিচে। এদের অনেকেই তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষতা অর্জন করছে, যা সেক্টরটিকে এগিয়ে নিচ্ছে।
 

৩. আউটসোর্সিং ও ফ্রিল্যান্সিং সাফল্য-

বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ফ্রিল্যান্সিং দেশ। ছোট ছোট ফার্ম ও ব্যক্তি উদ্যোগে আউটসোর্সিং ভিত্তিক সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট গড়ে উঠেছে, যার কারণে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
 

৪. কম খরচে দক্ষ জনশক্তি-

বাংলাদেশে কম খরচে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট করা সম্ভব হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা সহজ হয়েছে।
 

৫. ডোমেস্টিক মার্কেটের প্রসার-

ব্যাংকিং, ই-কমার্স, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, রিটেইল খাতে দেশীয় সফটওয়্যারের ব্যবহার বাড়ছে, যা স্থানীয় বাজারে চাহিদা তৈরি করছে।
 

প্রতিবন্ধকতা কোথায়?

১. মানসম্মত শিক্ষার অভাব

বিশ্বমানের সফটওয়্যার তৈরির জন্য প্রয়োজন গভীর প্রোগ্রামিং জ্ঞান, সফটওয়্যার আর্কিটেকচার বোঝা এবং প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট দক্ষতা। কিন্তু অনেক আইটি ইনস্টিটিউট থেকে বের হওয়া তরুণদের দক্ষতা সেই মানে পৌঁছায় না।
 

২. ভাষা ও যোগাযোগ দক্ষতায় সীমাবদ্ধতা

আন্তর্জাতিক ক্লায়েন্টের সঙ্গে কাজ করতে হলে ইংরেজিতে সাবলীল যোগাযোগ ও ক্লায়েন্ট হ্যান্ডলিং স্কিল জরুরি। এটি অনেক ক্ষেত্রেই বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
 

৩. পুঁজি ও বিনিয়োগের ঘাটতি

দেশীয় সফটওয়্যার কোম্পানিগুলোর অনেকেই ছোট পরিসরে কাজ করছে। বড় প্রজেক্ট নিতে বা R&D করতে প্রয়োজন হয় বিনিয়োগ—যেটার অভাব এখনো প্রকট।
 

৪. সাইবার নিরাপত্তা ও আইনি কাঠামোর দুর্বলতা

ডেটা প্রটেকশন, সাইবার অপরাধ, ই-চুক্তি ইত্যাদি বিষয়ে সুস্পষ্ট আইন না থাকায় বিদেশি ক্লায়েন্ট অনেক সময় আস্থা রাখতে পারেন না।
 

৫. বাজারে প্রবেশ ও রপ্তানিতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা

সফটওয়্যার পণ্য রপ্তানিতে ট্যাক্স ইস্যু, রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া, বৈদেশিক মুদ্রা আয় নিয়ে দীর্ঘসূত্রতা-সবই উদ্যোক্তাদের জন্য বাধা।
 

বাংলাদেশ সফটওয়্যার শিল্পে এগোচ্ছে ঠিকই, কিন্তু সেই গতি টেকসই করতে হলে প্রয়োজন-

☞ শিক্ষার মানোন্নয়ন

☞ দক্ষতার প্রশিক্ষণ

☞ আন্তর্জাতিক মানের আইন এবং 

☞ পুঁজির প্রবাহ নিশ্চিত করা।
 

নতুন প্রযুক্তির যুগে প্রবেশের আগে দরকার ভীত শক্ত করা, যাতে শুধু কল্পনা নয়-বাস্তবতাও সফটওয়্যার শিল্পে এক নতুন বিপ্লব আনতে পারে।

বিশ্বব্যাপী সফটওয়্যার ও আইটি খাতে ট্রিলিয়ন ডলারের বাজার গড়ে উঠছে। বাংলাদেশ এর খুব অল্প অংশই ধরতে পেরেছে। তবে উদ্ভাবনী শক্তি, তরুণ প্রজন্মের আগ্রহ, উদ্যোক্তা সংস্কৃতির বিকাশ এবং রাষ্ট্রীয় সহায়তা যদি সমন্বিত হয়, তাহলে এই খাত হতে পারে তৈরি পোশাকের পরেই দেশের সবচেয়ে বড় বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী শিল্প।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ