হজম ও ডায়রিয়ার ঘরোয়া সমাধান: পলাশ গাছের অজানা ঔষধি গুণ যা আপনি জানেন না!

হজম ও ডায়রিয়ার ঘরোয়া সমাধান: পলাশ গাছের অজানা ঔষধি গুণ যা আপনি জানেন না!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

এক সময় বসন্ত এলেই বাংলার মাঠ, প্রান্তর, বনভূমি জ্বলে উঠত আগুনরাঙা পলাশ ফুলে। লাল-কমলা পুষ্পে আচ্ছাদিত পলাশ গাছ শুধু প্রকৃতিকে নয়, বাংলার সাহিত্য, সংস্কৃতি ও জীববৈচিত্র্যকে আলাদা মাত্রা দিত।

কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে যেতে বসেছে সেই পলাশ বন। বনসৃজন ও বনায়ন কর্মসূচির আলোচনায় পলাশের নাম আজ প্রায় অনুপস্থিত। অথচ এই একটি গাছ একসময় ছিল বাংলা অঞ্চলের খরা-সহিষ্ণু ও প্রকৃতিবান্ধব উদ্ভিদের অন্যতম।
 

'পলাশ' গাছ: বৈজ্ঞানিক পরিচিতি ও বৈশিষ্ট্য

◑ বৈজ্ঞানিক নাম: Butea monosperma

◑ পরিচিত নাম: পলাশ, খাকশির, ফ্লেম অফ দ্য ফরেস্ট

◑ প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য: শুষ্ক মাটিতেও বেড়ে উঠতে পারে, পাতাঝরা গাছ

◑ জীবনচক্র: বসন্তকালে পাতা ঝরিয়ে ফুল ফোটে, মার্চ-এপ্রিল সময়টা পিক ব্লুমিং সিজন
 

পলাশের ঐতিহাসিক ও সামাজিক গুরুত্ব:

১. লোকসংস্কৃতি ও সাহিত্য-

বাংলা কবিতা, গান ও শিল্পে পলাশ বারবার এসেছে ঋতুরূপ, প্রেম, বিদ্রোহ ও স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনায় পলাশের রঙ প্রকৃতির রূপান্তরের চিহ্ন হয়ে উঠেছে।
 

২. প্রাকৃতিক রং ও উপকরণ-

পলাশ ফুল থেকে তৈরি হতো গাঢ় কমলা রং—যা ব্যবহৃত হতো উৎসবের পোশাক বা কাপড় রঙ করতে।
এছাড়া এর ছাল দিয়ে বানানো হতো প্রাকৃতিক আঠা ও রঙিন কাগজ।
 

৩. আয়ুর্বেদিক গুণাবলি-

⇨ফুল, ছাল ও বীজের নির্যাস চর্মরোগ, ক্ষত ও হজমে ব্যবহৃত হতো

⇨ পলাশ বীজ প্রাকৃতিক কীটনাশক হিসেবেও গ্রামবাংলায় পরিচিত ছিল

⇨ শুকনো ছাল দিয়ে জ্বর ও ডায়রিয়ার চিকিৎসা করা হতো স্থানীয় চিকিৎসা পদ্ধতিতে
 

বিলুপ্তির কারণসমূহ:

☞ অব্যবস্থাপনায় বন কাটাকাটি ও শহরায়ণ
অপরিকল্পিত রাস্তা, বসতি ও শিল্প এলাকা তৈরি করতে গিয়ে বহু প্রাকৃতিক পলাশ বন কেটে ফেলা হয়।
 

☞ প্রাকৃতিক বনকে অগ্রাধিকার না দেওয়া
সামাজিক বনায়নে ইউক্যালিপটাস, আকাশমণি ও রাবার গাছের মতো উচ্চমূল্য কাঠদ্রব্য গাছ প্রাধান্য পাচ্ছে। এতে পলাশের মতো "অর্থনৈতিকভাবে কম লাভজনক" গাছ বাদ পড়ে যাচ্ছে।
 

☞ প্রাকৃতিক রঙের প্রতি আগ্রহ কমে যাওয়া
কেমিক্যাল রঙের সস্তা বিকল্প পাওয়ায় পলাশের রঙের চাহিদাও হ্রাস পেয়েছে।
 

কি কি ক্ষতি হবে পলাশ গাছ হারিয়ে গেলে?

১. প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ক্ষয়

বসন্ত ঋতুর নিজস্ব রঙ হারিয়ে যাবে। গ্রামবাংলার ঋতুবৈচিত্র্য অনেকটাই নিষ্প্রভ হবে।
 

২. জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য নষ্ট

পলাশ গাছ মৌমাছি, পাখি, প্রজাপতির আশ্রয়স্থল। এগুলোর বিলুপ্তি ইকোসিস্টেমে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।
 

৩. ঔষধি সম্পদের ক্ষতি

আধুনিক চিকিৎসা গবেষণাও আজ প্রাকৃতিক উপাদান পুনরুদ্ধারের দিকে ঝুঁকছে। পলাশ হারালে হারাবে সম্ভাব্য বহু ভেষজ সম্ভার।
 

৪. লোকজ জ্ঞান ও ঐতিহ্যের বিলুপ্তি

পলাশ শুধু গাছ নয় একটি জাতির রূপ-রস-গন্ধের অংশ। এটি হারালে লোকসংস্কৃতি চুপসে যাবে।
 

সমাধান ও করণীয়

⇨ স্কুল-কলেজে বনসংরক্ষণ পাঠ্যক্রমে পলাশ গাছের অন্তর্ভুক্তি

⇨ প্রতিটি ইউনিয়ন বা গ্রামে 'ঐতিহ্য বৃক্ষ' রোপণ প্রকল্প

⇨ প্রাকৃতিক রঙ ব্যবহারে উৎসাহ দেওয়া, যেমন উৎসব বা কারুশিল্পে

⇨ আধুনিক গবেষণায় পলাশের ঔষধি সম্ভাবনা পুনঃআবিষ্কারে উদ্যোগ
 

পলাশ গাছ হারানো মানে শুধু একটি উদ্ভিদ প্রজাতির বিলুপ্তি নয় এ এক সাংস্কৃতিক, পরিবেশগত ও ঐতিহাসিক ক্ষতি। এখনই যদি সচেতন উদ্যোগ না নেওয়া হয়, তাহলে পলাশ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য শুধুই হয়ে থাকবে বইয়ের পাতায় ছাপা একটি নাম।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ