রান্নাঘরেই রেস্তোরাঁর রাজকীয় স্বাদ-বানিয়ে ফেলুন বিখ্যাত পাকিস্তানি হালিম

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
পাকিস্তানি হালিম শুধু একটি রান্না নয়, এটি দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিম সংস্কৃতির গর্ব এবং ধর্মীয় উৎসবের অন্যতম মুখ্য খাবার। মূলত মধ্যপ্রাচ্যের "হারিসা" থেকে উদ্ভূত হলেও, পাকিস্তানি হালিম সময়ের সাথে নিজস্ব স্বাদ ও রান্নার পদ্ধতি তৈরি করেছে। এটির নরম আর ক্রিমি গঠন, মসলা আর মাংসের সমন্বয় একে বিশেষ করে তোলে।
হালিমের বৈশিষ্ট্য ও ইতিহাস
হালিমের মূল উপকরণ হলো গম, বিভিন্ন ডাল এবং মাংস। এটি অনেক সময়ের জন্য ধীরে ধীরে রান্না করা হয় যাতে উপাদানগুলো ভালোভাবে মিশে যায় এবং গুঁড়ার মতো মসৃণ হয়। পাকিস্তানে বিশেষ করে রমজান মাসে ইফতারের সময় এই খাবারটি অত্যন্ত জনপ্রিয়। কারণ এটি দেহে দ্রুত শক্তি যোগায় এবং দীর্ঘক্ষণ ক্ষুধা ও পেট ভরা রাখে।
স্বাস্থ্য উপকারিতা:
হালিমে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ফাইবার ও কার্বোহাইড্রেট থাকে। গম ও ডালের কারণে এটি হজমে সহায়ক, রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, আর মাংস থেকে প্রোটিনের সরবরাহ হয় যা পেশী গঠন ও শক্তির জন্য অপরিহার্য। গরম মসলা শরীরকে উষ্ণ রাখে এবং রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। এতে থাকা ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।
প্রয়োজনীয় উপকরণ:
⇨ গম (বার্লি বা হালিম গম) – ১ কাপ
⇨ মসুর ডাল – ১/২ কাপ
⇨ মুগ ডাল – ১/২ কাপ
⇨ চানা ডাল – ১/২ কাপ
⇨ মটর ডাল – ১/২ কাপ
⇨ মুরগির বা গরুর মাংস – ৫০০ গ্রাম
⇨ পেঁয়াজ – ২ টি মাঝারি, কুচি করা
⇨ আদা-রসুন বাটা – ২ টেবিল চামচ
⇨ টমেটো – ২ টি, কুচি করা
⇨ তেল – ১/২ কাপ
⇨ ঘি – ২ টেবিল চামচ
⇨ হালকা শুকনো মরিচ গুঁড়া – ১ টেবিল চামচ
⇨ ধনে গুঁড়া – ১ টেবিল চামচ
⇨ জিরা গুঁড়া – ১ চামচ
⇨ গরম মশলা গুঁড়া – ১ চা চামচ
⇨ কাঁচা ধনে পাতা – সজ্জার জন্য
⇨ লেবুর রস – পরিমাণমতো
⇨ নুন – স্বাদমতো
⇨ পানি – প্রয়োজনমতো
বিস্তারিত রান্নার পদ্ধতি:
১. প্রথমেই বিভিন্ন ডাল এবং গম ভালো করে ধুয়ে ৪-৫ ঘণ্টা বা এক রাত ভিজিয়ে রাখুন।
২. পাত্রে সমস্ত ডাল ও গমের সাথে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি দিয়ে সিদ্ধ হতে দিন যতক্ষণ না সবগুলো ডাল নরম হয়ে গুঁড়া অনুরূপ বনে যায়। মাঝেমধ্যে নেড়ে নিতে হবে যাতে ডাল পাত্রের তলায় লেগে না যায়।
৩. অন্য একটি পাত্রে তেল গরম করে পেঁয়াজ সোনালি হওয়া পর্যন্ত ভাজুন। এরপর আদা-রসুন বাটা দিয়ে ভালোভাবে কষিয়ে নিন।
৪. এখন মাংস দিয়ে ভালো করে ভাজুন যতক্ষণ না মাংস সোনালী রঙ ধারণ করে।
৫. মাংসে টমেটো, নুন, মরিচ গুঁড়া, ধনে গুঁড়া, জিরা গুঁড়া দিয়ে কিছুক্ষণ কষাতে থাকুন যতক্ষণ না টমেটো নরম হয়ে মিশে যায়।
৬. মাংস সিদ্ধ হয়ে গেলে ডাল-মিশ্রণটিকে মাংসের সঙ্গে মিশিয়ে নিন এবং কম আঁচে ঢেকে রান্না হতে দিন। মাঝে মাঝে নেড়ে নিন যেন ঝোল পাত্রের নিচে লেগে না যায়।
৭. সব কিছু একত্রে এক ঘণ্টার মতো ভালো করে রান্না হলে ঘি এবং গরম মশলা যোগ করুন। আরও ৫-১০ মিনিট রান্না দিন।
৮. পরিবেশনের সময় উপরে কাঁচা ধনে পাতা এবং লেবুর রস ছিটিয়ে দিন।
✪ বিশেষ টিপস ও পরিবেশন-
হালিম সেদ্ধ পেঁয়াজের সঙ্গে পরিবেশন করলে স্বাদের ভিন্ন মাত্রা আসে।
সাধারণত এটি নান, পরোটা কিংবা পোলাওর সঙ্গে খাওয়া হয়।
দীর্ঘ সময় ধীর আগুনে রান্না করা হালিম স্বাদের জন্য অপরিহার্য, তাই তাড়াহুড়ো না করে ধৈর্য্য ধরে রান্না করুন।
কেন পাকিস্তানি হালিম আলাদা?
পাকিস্তানি হালিমের মশলা ও রান্নার পদ্ধতি বাংলাদেশ বা ভারতের থেকে কিছুটা আলাদা। এখানে গরম মশলা বেশি ব্যবহার করা হয় এবং মাংসের স্বাদ একটু বেশি তীব্র হয়। ডাল-গমের অনুপাত ও রান্নার সময় পাকিস্তানি হালিমকে অন্যদের থেকে বিশেষ করে তোলে।
পাকিস্তানি হালিমের এই বিস্তৃত পরিচিতি ও রান্নার পদ্ধতি আপনাকে শুধু রান্নায় সাহায্য করবে না, ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবে। একবেলা এই খাবার পুষ্টি ও স্বাদের ভাণ্ডার, যা বাড়ির সকল সদস্যকে একসঙ্গে বসে খাবারের আনন্দ উপভোগ করাবে।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।