সব পেটের জ্বালাই গ্যাস্ট্রিক নয়, হতে পারে গ্লুটেন ইনটলারেন্স, ল্যাকটোজ অ্যালার্জি বা ভয়ংকর ইনফেকশন! জানেন আপনি?

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
বিরিয়ানি, ফুচকা বা ডেইরি জাতীয় কিছু খেলেই পেট চেপে বসে, বুক-পেট জ্বালা করতে থাকে, ঢেঁকুর ওঠে, হজমে সমস্যা দেখা দেয়? আশেপাশের সবাই বলবে "আরে, গ্যাস্ট্রিক!"
কিন্তু একটু থামুন-এমনটা হলে সবসময় গ্যাস্ট্রিকই কি দায়ী? না কি বিষয়টি অনেক বেশি জটিল, এবং আপনার দেহ বলছে আপনি হয়তো কিছু খাবারে অ্যালার্জিক?
এ সমস্যা বহু মানুষের হলেও, অনেকেই জানেন না যে পেটের জ্বালা বা অস্বস্তি কেবল অ্যাসিডিটির কারণে নয়, বরং অনেক সময় ফুড অ্যালার্জি বা ফুড ইনটলারেন্সের প্রতিক্রিয়াও হতে পারে।
সমস্যাগুলি সাধারণত গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটির কারণে মনে হলেও, কিছু ক্ষেত্রে অন্যান্য কারণ থাকতে পারে।
১. গ্লুটেন ইনটলারেন্স: গম, বার্লি এবং রাই-তে থাকা গ্লুটেন নামের প্রোটিন কিছু মানুষের শরীর হজম করতে পারে না। যাদের এই সমস্যা আছে, তারা গ্লুটেন গ্রহণের পর পেটে ব্যথা, ফোলাভাব, ডায়রিয়া, বমি ভাব এবং ক্লান্তির মতো সমস্যা অনুভব করতে পারেন।
২. ল্যাকটোজ অ্যালার্জি: দুগ্ধজাত খাবারে থাকা ল্যাকটোজ নামক চিনি হজম করতে না পারার কারণে অনেকেই পেটের সমস্যা অনুভব করেন। এতে পেটের ব্যথা, ফোলা, ডায়রিয়া, বমিভাব এবং গ্যাসের সমস্যা দেখা দেয়।
৩. সংক্রমণের কারণে : কখনও কখনও পেটের ব্যথা এবং অন্যান্য উপসর্গের কারণ হতে পারে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ। এ ধরনের সংক্রমণে সাধারণত জ্বর, বমি, ডায়রিয়া, পেট ব্যথা এবং দুর্বলতা দেখা দেয়।
গ্যাস্ট্রিক আর ফুড অ্যালার্জির পার্থক্য বুঝতে হবে আগে-
☞ গ্যাস্ট্রিক (Acid reflux বা Gastritis):
গ্যাস্ট্রিক তখনই হয়, যখন পেটের এসিড হজমে ভারসাম্য হারায় বা অতিরিক্ত অ্যাসিড তৈরি হয়। এতে খাবার হজম হতে দেরি হয়, আর শুরু হয় বুকে-পেটে জ্বালা, ঢেঁকুর, বমি ভাব।
☞ অ্যালার্জি বা ইনটলারেন্স:
এটা হচ্ছে শরীরের ইমিউন সিস্টেমের প্রতিক্রিয়া। অর্থাৎ আপনি যা খেলেন, আপনার শরীর সেটা "বিপজ্জনক" মনে করে রিঅ্যাক্ট করে বসে!
কখনো ব্রণের মতো ফুসকুড়ি, কখনো শ্বাসকষ্ট, কখনো মাথাব্যথা, ক্লান্তি, এমনকি ডায়রিয়া!
আর সবচেয়ে খারাপ দিক হলো-অনেকেই এটি চিনতেই পারেন না!
বিজ্ঞান যা বলছে-
ফুড অ্যালার্জি হলে শরীর ইমিউনোগ্লোবুলিন ই (IgE) নামক এক অ্যান্টিবডি তৈরি করে। এই অ্যান্টিবডি হিষ্টামিন নিঃসরণ ঘটায়, ফলে শরীরের নানা অংশে প্রদাহ সৃষ্টি হয়।
অন্যদিকে ফুড ইনটলারেন্স (যেমন ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স) সাধারণত হজম এনজাইমের অভাবে হয়। যেমন: ল্যাকটোজ না হজম হলে দুধ খেলেই পেট ব্যথা, গ্লুটেন সহ্য না হলে রুটি খেয়ে গ্যাস, ডায়রিয়া ইত্যাদি।
আপনি কীভাবে বুঝবেন এটি গ্যাস্ট্রিক না অ্যালার্জি?
☞ সাধারণ গ্যাস্ট্রিক:বেশি চর্বিযুক্ত খাবার বা অনিয়মিত খাওয়ার পর শুধু বুকে জ্বালা বা ঢেঁকুর
☞ ফুড অ্যালার্জি বা ইনটলারেন্স:
প্রতি বার একই খাবারে সমস্যা, পেটের পাশাপাশি মাথা ঘোরা, ত্বকে সমস্যা, নিঃশ্বাসে কষ্ট। হঠাৎ করে জ্বালা + ক্লান্তি + তন্দ্রা
মনে রাখবেন: অ্যালার্জির লক্ষণ খাবার খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেও হতে পারে, আবার ২–৮ ঘণ্টা পরেও দেখা দিতে পারে।
যা করতে পারেন:
⇨ খাবারের জার্নাল/ডায়েরি রাখুন — কোন খাবারের পর সমস্যা হয়, তা নোট করুন।
⇨ Elimination Diet — সন্দেহভাজন খাবারগুলো একে একে কিছুদিন বাদ দিন ও পর্যবেক্ষণ করুন।
⇨ অ্যালার্জি টেস্ট করুন (IgE ব্লাড টেস্ট / স্কিন প্রিক টেস্ট) — নিজে কিছু অনুমান না করে, নিশ্চিত হোন।
⇨ সচেতন খাবার নির্বাচন করুন — প্যাকেটজাত বা ফ্লেভারড ফুড, রাসায়নিক উপাদানযুক্ত খাবার কমান।
⇨ অ্যান্টাসিডে অভ্যস্ত হবেন না — কারণ তা শুধু লক্ষণ সাময়িকভাবে চাপা দেয়, মূল কারণ নয়।
কেন গুরুত্ব দেওয়া জরুরি?
অনেকেই বারবার অ্যান্টাসিড খেয়ে নিজের সমস্যা আড়াল করেন। কিন্তু অজানা ফুড অ্যালার্জি ধীরে ধীরে হজমতন্ত্র দুর্বল করে, ত্বক নিস্তেজ করে, এমনকি হরমোনের ভারসাম্যও নষ্ট করতে পারে।
এর ফলে দীর্ঘমেয়াদে:
১। ক্রনিক ইনফ্ল্যামেশন
২। ইরিটেবল বা ওয়েল সিনড্রোম (IBS)
৩। আলসার এমনকি
৪। ইমিউন ডিজঅর্ডার - পর্যন্ত হতে পারে।
খাবার আমাদের জীবন চালায়, আবার খাবারই আমাদের অসুস্থও করতে পারে যদি তা আমাদের শরীর মেনে নিতে না পারে। আপনার পেট, ত্বক বা মন যখনই কিছু বলছে, সেটিকে "স্রেফ গ্যাস্ট্রিক" বলে এড়িয়ে যাবেন না। আজই সচেতন হোন, খাবার বুঝে খান, আর প্রকৃত স্বাস্থ্য ফিরে পান ভেতর থেকে।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।