পৃথিবীর একমাত্র মশামুক্ত দেশ! রহস্য জানলে অবাক হবেন!

পৃথিবীর একমাত্র মশামুক্ত দেশ! রহস্য জানলে অবাক হবেন!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

বৃষ্টির মৌসুম মানেই বাংলাদেশে মশার উপদ্রব তুঙ্গে! শহরের অলিগলি থেকে শুরু করে গ্রাম্য জনপদ কোথাও যেন রেহাই নেই এই ক্ষুদ্র অথচ ভয়ঙ্কর প্রাণীটির হাত থেকে। কিন্তু জানেন কি, এই পৃথিবীতেই এমন একটি দেশ আছে যেখানে প্রকৃতিগতভাবেই নেই কোনও মশা! না, এটি কোনও বিজ্ঞাপনের গিমিক নয় বা প্রযুক্তি-নির্ভর নির্মূল অভিযানও নয় এটা নিখাদ প্রাকৃতিক বাস্তবতা! বলছি আইসল্যান্ড কে নিয়ে। ইউরোপের উত্তর আটলান্টিক অঞ্চলে অবস্থিত এই দ্বীপরাষ্ট্রটি একমাত্র দেশ, যেখানে প্রকৃতিগতভাবে কোনও প্রজাতির মশার অস্তিত্ব নেই।

কেন আইসল্যান্ডে মশা জন্মায় না?

বিষয়টি শুধুই কাকতালীয় নয়, এর পেছনে রয়েছে পরিবেশগত ও জীববৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা। আইসল্যান্ডের মাটিতে মশা না থাকবার প্রধান কারণ হলো তাদের আবহাওয়ার আকস্মিকতা এবং মৌসুমি জমাটবদ্ধতা। আইসল্যান্ডে আবহাওয়া অত্যন্ত শীতল ও আর্দ্র এবং বছরের অনেকটা সময় বরফে আবৃত থাকে।

এখানকার জলাশয়গুলোতে পানি জমে বরফ হয়ে যায়, আবার দ্রুত গলেও যায়—যা মশার ডিম পাড়ার ও লার্ভা বৃদ্ধির প্রাকৃতিক পরিবেশ তৈরি করতে পারে না। বেশিরভাগ মশা তাদের প্রজননচক্রে ধাপে ধাপে ডিম পাড়ে ও ধীরে ধীরে পানিতে লার্ভা ও পিউপা হিসেবে বেড়ে ওঠে। কিন্তু আইসল্যান্ডের আকস্মিক তাপমাত্রা পরিবর্তনের কারণে সেই ধারাবাহিকতা বিঘ্নিত হয়।
এই কারণে, বিজ্ঞানীরা মনে করেন মশার কোনও প্রজাতিই এই পরিবেশে টিকে থাকতে পারে না।

শুধু তাপমাত্রা নয়, ভূতাত্ত্বিক অবস্থানও গুরুত্বপূর্ণ! আইসল্যান্ডের ভূখণ্ডটি আগ্নেয়গিরিমূলক অঞ্চলে অবস্থিত। ভূমি গরম, জলাশয় ঠান্ডা এবং বাতাস আর্দ্র। এই বৈচিত্র্যপূর্ণ অথচ কঠিন পরিবেশ মশার মতো ঠান্ডা-সহিষ্ণু প্রজাতির জন্য নয়।
এছাড়া, আইসল্যান্ড বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চল থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন। কোনও দেশীয় বা প্রাকৃতিক পথ ধরে মশার ডিম বা পূর্ণবয়স্ক মশার সেখানে প্রবেশের সুযোগ খুবই সীমিত।

আইসল্যান্ডের পরিবেশবিদ ও প্রাণীবিজ্ঞানীরা বহু বছর ধরে এই বিষয়ে গবেষণা করেছেন। দেশটির ন্যাশনাল হিস্ট্রি জাদুঘরে সংরক্ষিত তথ্যে দেখা যায়, এখন পর্যন্ত দেশটির বনে-জঙ্গলে, জলাশয়ে, এমনকি গবেষণা ল্যাবেও কোনও মশার নমুনা ধরা পড়েনি।

মশা হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর প্রাণী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর মশাবাহিত রোগে প্রাণ হারায় প্রায় ৭ লাখ মানুষ। এই প্রেক্ষাপটে আইসল্যান্ডের মতো একটি দেশে মশামুক্ত থাকা নিঃসন্দেহে এক বৈজ্ঞানিক ও প্রাকৃতিক বিস্ময়।
 

তাহলে কি ভবিষ্যতেও মশা ঢুকবে না সেখানে?

পরিবেশ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ভবিষ্যতে আইসল্যান্ডেও মশার অনুপ্রবেশের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে বলে মত গবেষকদের। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গরমের সময় বাড়ছে, গলছে হিমবাহ। এতে করে নতুন জীববৈচিত্র্য গড়ে উঠতে পারে।

তবে আপাতত, বিশ্বের একমাত্র প্রাকৃতিক মশামুক্ত দেশ হিসেবে আইসল্যান্ড নিজেই একটি গবেষণাগার হয়ে উঠেছে যেখান থেকে ভবিষ্যতের 'মশামুক্ত শহর' গড়ার জন্য পাওয়া যেতে পারে মূল্যবান তথ্য।

আপনি যদি সুযোগ পান, তাহলে কি আইসল্যান্ডে যেতে চাইবেন শুধু মশামুক্ত থাকার অভিজ্ঞতার জন্য?

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ