স্পিড বাড়ালেই কি স্মার্ট হওয়া যায়? ভিডিও লেকচার দ্রুত দেখার বিপদ জানেন?

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
এই ডিজিটাল যুগে সময়ই যেন আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ। একদিকে দ্রুতগতির ইন্টারনেট, অন্যদিকে টেম্পো বাড়ানো ভিডিও সব মিলিয়ে আমাদের শেখার পদ্ধতিই যেন বদলে গেছে। পরীক্ষার আগে ইউটিউব বা কোর্সপ্ল্যাটফর্মের লেকচার ভিডিওতে প্লেব্যাক স্পিড ২X করে দেওয়াটা এখন সাধারণ ব্যাপার। কিন্তু, আপনি জানেন কি এই 'সময় বাঁচানো অভ্যাস' আপনার শেখাকে ব্যুমেরাং করেও ফিরিয়ে দিতে পারে!!
গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষ সাধারণত প্রতি মিনিটে গড়ে ১৫০টি শব্দ গ্রহণ করতে পারে। আর প্লেব্যাক স্পিড বাড়ালে সেই হার দ্বিগুণ পর্যন্ত বেড়ে যায়। যদিও শুনতে তা স্পষ্টই মনে হয়, কিন্তু তথ্য ধরে রাখার দক্ষতায় বড় ধস নামে।
মানব মস্তিষ্কে তথ্য গ্রহণ ও প্রক্রিয়াকরণ হয় তিনটি স্তরে-
⇨ তথ্য গ্রহণ,
⇨ সংরক্ষণ এবং
⇨ পুনরুদ্ধার।
প্রাথমিকভাবে তথ্য যায় ওয়ার্কিং মেমোরিতে, যা অত্যন্ত সীমিত ধারণক্ষমতার। অতিরিক্ত স্পিডে যখন বেশি তথ্য ঠেলে দেওয়া হয়, তখন অনেকটাই বাদ পড়ে যায় এই ফিল্টার থেকে। ফলে 'শোনা' হয় ঠিকই, কিন্তু 'মনে রাখা' হয় না।
সম্প্রতি একটি মেটা-অ্যানালাইসিসে ২৪ জনকে দুটি গ্রুপে ভাগ করে পরীক্ষামূলক লেকচার শোনানো হয়—একটি গ্রুপ দেখেছে ১x (সাধারণ স্পিডে), আরেকটি ১.২৫x, ১.৫x, ২x এমনকি ২.৫x গতিতে।
ফলাফল? যেসব শিক্ষার্থী দ্রুত গতিতে ভিডিও দেখেছিলেন, তাদের পরীক্ষার স্কোর ছিল তুলনামূলক কম। বিশেষ করে ২x গতিতে ভিডিও দেখার ক্ষেত্রে ফলাফল ছিল সবচেয়ে নিচের দিকে।
আরো বিস্ময়কর তথ্য—বয়স্কদের ক্ষেত্রে এই প্রভাব আরও প্রকট। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কাজ করে এমন কিছু মানসিক প্রক্রিয়া ধীরগতি হয়, যার ফলে অতিরিক্ত স্পিড তাদের জন্য হয়ে দাঁড়ায় বোঝার দেয়াল।
অন্য গবেষণায় দেখা গেছে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে working memory ও processing speed প্রাকৃতিকভাবে কমে যায়। ফলে, বৃদ্ধ বা মধ্যবয়সীদের ক্ষেত্রে ভিডিও স্পিড বাড়িয়ে শেখা আরও বেশি ক্ষতিকর হতে পারে। তারা সহজেই তথ্য হারিয়ে ফেলেন, বা ভুল ব্যাখ্যা করেন।
তাহলে কি দ্রুত শেখা একেবারেই খারাপ?
না, সব ক্ষেত্রেই নয়। যদি আপনি পূর্বপরিচিত কোনো বিষয়ের উপর দ্রুত রিভিশন নিচ্ছেন, তাহলে স্পিড বাড়িয়ে শেখা কার্যকর হতে পারে। Passive review বা পরিচিত তথ্যের পুনরায় দেখার সময় প্লেব্যাক স্পিড বাড়ালে সময় সাশ্রয় হয়। কিন্তু নতুন ও জটিল বিষয় শেখার ক্ষেত্রে দ্রুত ভিডিও দেখা একেবারেই পরামর্শযোগ্য নয়।
কার্যকর লার্নিংয়ের জন্য করণীয়:
⇨ গভীর মনোযোগে শেখার সময় ১x বা সর্বোচ্চ ১.২৫x স্পিড ব্যবহার করুন
⇨ দীর্ঘ ভিডিও ভাগ করে দেখুন - মস্তিষ্ক একটানা বেশি ইনফো নিতে পারে না
⇨ ভিডিও দেখার সঙ্গে নোট নিন - এতে দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতি গঠনে সাহায্য হয়
⇨ কঠিন বা অজানা কনসেপ্টে স্পিড বাড়ানোর বদলে পুনরায় রিভিউ দিন
তাহলে কি এখনই থেমে যেতে হবে?
মানসিক স্বাস্থ্য ও মস্তিষ্কের দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রমে প্লেব্যাক স্পিডের প্রভাব এখনো গবেষণার বিষয়। কিছু ক্ষেত্রে দ্রুত শেখা সময় সাশ্রয় করে ও একধরনের মস্তিষ্কের ট্রেনিং হিসেবেও কাজ করতে পারে। কিন্তু এর নেতিবাচক দিকগুলো অগ্রাহ্য করার মতো নয়।
সম্ভবত ভবিষ্যতের মানুষ এই 'দ্রুত শেখার ধারা'-র সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারবে আরও ভালোভাবে। তবে এখনই সতর্ক থাকা ভালো। শেখা মানে শুধু দ্রুত গ্রহণ নয়, স্থায়ীভাবে মনে রাখাও।
টিপস:
⇨ গুরুত্বপূর্ণ লেকচার বা গভীর বোঝাপড়ার প্রয়োজন হলে ১x বা ১.২৫x-এর বেশি না বাড়ানোই ভালো।
⇨ মাঝে মাঝে বিরতি নিয়ে ভিডিও দেখা স্মৃতিকে বেশি সক্রিয় রাখে।
⇨ কঠিন বিষয় হলে নোট নেওয়ার অভ্যাস গঠন করুন।
সময় বাঁচাতে গিয়ে যেন শেখার মূল উদ্দেশ্যটাই না হারিয়ে যায় এই বার্তাই দিচ্ছে আজকের গবেষণা।
সূত্র:
◑ Journal of Applied Cognitive Psychology
◑ Cognitive Load Theory - Sweller (1988, 2011)
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।