নারীদের জরায়ুতে সিস্ট? অবহেলা নয়-জানুন এর কারণ, লক্ষণ ও করণীয়, সময় থাকতেই সচেতন হন!

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্যে একটি সাধারণ কিন্তু উদ্বেগজনক সমস্যা হলো জরায়ু বা ওভারি সিস্ট (Cyst)। এই সমস্যা অনেক ক্ষেত্রেই নীরব ঘাতকের মতো শরীরে বাসা বাঁধে কোনো উপসর্গ থাকে না, আবার কখনো অসহ্য পেটব্যথা থেকে শুরু করে হরমোনের বিশৃঙ্খলা পর্যন্ত সৃষ্টি করে। ভুল ধারণা আছে যে, সিস্ট মানেই ক্যান্সার। অথচ বাস্তবে বেশিরভাগ সিস্টই নিরীহ ও স্বাভাবিক হরমোন পরিবর্তনের ফল। কিন্তু কিছু সিস্ট চিকিৎসার অভাবে ভয়ংকর পর্যায়ে যেতে পারে, তাই সময়মতো জেনে রাখা, পর্যবেক্ষণ ও চিকিৎসা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
জরায়ুতে সিস্ট কী?
জরায়ুতে সাধারণত যেসব সিস্ট হয়, তা ওভারি বা ডিম্বাশয়ে গঠন হওয়া তরলপূর্ণ থলির মতো গঠন। এদের 'ওভারিয়ান সিস্ট' (Ovarian Cyst) বলা হয়। এটি নারী শরীরের হরমোন চক্রের স্বাভাবিক অংশ হিসেবেও গঠিত হতে পারে।
সাধারণত দুই ধরনের সিস্ট বেশি দেখা যায়:
১। ফাংশনাল সিস্ট (Functional cyst): মাসিক চক্র চলাকালীন ডিম্বাণু নির্গমনের সময় গঠিত হয়। বেশিরভাগ সময় নিজে নিজেই মিলিয়ে যায়।
২। প্যাথলজিক্যাল সিস্ট: যেমন ডারময়েড সিস্ট, সিস্টাডেনোমা, এন্ডোমেট্রিওসিস জাতীয়। এগুলোর চিকিৎসা প্রয়োজন হয়।
কারণ :
◑ হরমোনের ভারসাম্যহীনতা (Hormonal imbalance)
◑ পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS)
◑ গর্ভনিরোধক ওষুধের অনিয়মিত ব্যবহার
◑ ইনফেকশন বা প্রদাহজনিত সমস্যা
◑ অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও অনিয়মিত জীবনযাপন
লক্ষণ :
সবার ক্ষেত্রে সিস্টের লক্ষণ একরকম নয়। অনেকেই বুঝতেই পারেন না। তবে নিম্নোক্ত উপসর্গগুলো দেখা দিলে সতর্ক হোন—
⇨ অনিয়মিত মাসিক
⇨ তলপেটে চাপ, ভার বা টানটান অনুভব
⇨ মাসিকের সময় প্রচণ্ড ব্যথা
⇨ সহবাসের সময় ব্যথা
⇨ ঘন ঘন প্রস্রাবের চাপ বা কষ্ট
⇨ হরমোনের প্রভাবে মুখে ব্রণ, ওজন বৃদ্ধি
⇨ বাচ্চা নিতে সমস্যা বা বন্ধ্যাত্বের লক্ষণ
করণীয় ও চিকিৎসা:
১. চিকিৎসকের পরামর্শে পেলভিক আলট্রাসোনোগ্রাম করানো জরুরি।
⇒ এটি সঠিকভাবে সিস্টের ধরন, আকৃতি ও অবস্থান নির্ণয় করে।
২. হরমোন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হতে পারে ওষুধ
⇒ জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি, মেটফরমিন বা হরমোন রেগুলেটর ব্যবহার করা হয় অনেক ক্ষেত্রে।
৩. জীবনযাত্রায় পরিবর্তন
⇒ নিয়মিত ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাবার, পর্যাপ্ত ঘুম এসব সিস্ট নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
৪. প্রয়োজনে অপারেশন (Surgical removal)
⇒ যদি সিস্টটি বড় হয়, ফেটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে বা ক্যান্সারের উপসর্গ থাকে তবে অপারেশন দরকার হতে পারে।
৫ . ঘরোয়া প্রতিকার: কিছু ঘরোয়া প্রতিকার যেমন গরম সেঁক, নির্দিষ্ট ব্যায়াম বা জীবনযাত্রার পরিবর্তন সিস্টের উপসর্গ কমাতে সাহায্য করতে পারে, তবে এটি সিস্ট সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করতে পারে না।
✪ গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা:
⇨ যেকোনো পেটব্যথাকে হালকাভাবে নেবেন না।
⇨ হরমোনবিষয়ক উপসর্গ দেখা দিলে নিজে থেকে ওষুধ খাবেন না।
⇨ PCOS থাকলে মাসিক নিয়মিত হলেও সমস্যা থেকে যাচ্ছে কিনা, তা বুঝতে নিয়মিত ফলোআপ জরুরি।
⇨ গর্ভধারণের চেষ্টা করার আগেই ওভারি সিস্ট আছে কিনা পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত।
সিস্ট মানেই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, তবে উপেক্ষাও নয়। সময়মতো সনাক্ত করা গেলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি চিকিৎসায় ভালো হয়ে যায়। নারীদের উচিত নিজের শরীর সম্পর্কে সচেতন থাকা, মাসিক চক্র ও শরীরের ছোট ছোট পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করা। মনে রাখুন আপনার স্বাস্থ্যই আপনার ক্ষমতা।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।