সম্পর্কে ভালোবাসা টিকিয়ে রাখতে শুধু প্রেম নয়, দরকার সঠিক কৌশল-জানুন দাম্পত্য কলহ এড়ানোর বাস্তবমুখী ও বিজ্ঞানভিত্তিক পরামর্শ

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
দাম্পত্য জীবনে কলহ যেন এক নিরব আগ্নেয়গিরি—যা সময়-সুযোগ মতোই বিস্ফোরিত হয়। প্রেম থেকে শুরু হলেও, দিনশেষে সংসার মানেই দায়িত্ব, চাপ ও ভুল বোঝাবুঝি। আর এই ছোট ছোট ভুল বুঝিই এক সময় তৈরি করে তিক্ততা, দূরত্ব ও একসঙ্গে থেকেও আলাদা হয়ে পড়ার অনুভব।
তবে সুখবর হলো-এই দূরত্ব কমানো যায়, যদি আপনি সময় থাকতেই কিছু 'স্মার্ট' সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। মনোবিজ্ঞান, বৈবাহিক থেরাপি এবং গবেষণাভিত্তিক বিশ্লেষণ থেকে উঠে এসেছে এমন কিছু কার্যকর কৌশল, যা অনুসরণ করলে দাম্পত্য কলহ অনেকটাই কমে যেতে পারে।
১. তর্ক নয়, সময় চেয়ে নিন-"Cooling Off Period" কৌশল
একসঙ্গে থাকলে মতের অমিল হবেই, কিন্তু তখনই তর্ক না করে সাময়িক বিরতি নেওয়া সম্পর্ক রক্ষা করে। মনোবিজ্ঞান বলছে: উত্তেজিত অবস্থায় সিদ্ধান্ত বা প্রতিক্রিয়া দিলে মস্তিষ্কের 'অ্যামিগডালা' হাইপার-অ্যাক্টিভ হয়ে পড়ে, যা যুক্তিভিত্তিক চিন্তা ধ্বংস করে।
সমাধান? বলুন-"আমার কিছুটা সময় দরকার, পরে কথা বলি।" এতে ঝগড়া ঠেকবেই।
২. "তুমি সবসময়..." জাতীয় বাক্য এড়িয়ে চলুন
এই ধরনের অভিযোগপূর্ণ কথা (যেমন, "তুমি কখনোই বোঝো না", "তুমি সবসময় দোষ দাও") শুধু রাগই বাড়ায়। বরং নিজের অনুভব প্রকাশ করুন- "তুমি কখনোই আমার পাশে থাকো না", "যখন তুমি পাশে না থাকো, আমি একা মনে করি" - গবেষণা অনুযায়ী- অভিযোগের ভাষা বদলে 'আমি অনুভব করি' দিয়ে শুরু করলে পার্টনারের প্রতিক্রিয়া তুলনামূলকভাবে ইতিবাচক হয়।
৩. ভুল স্বীকারে ভয় নয়-ক্ষমা চাইতে জানুন
ভুল হলে 'Sorry' বলাটা আপনাকে ছোট করে না, বরং সম্পর্ককে বড় করে তোলে। দাম্পত্যে সবচেয়ে বড় ভুল হচ্ছে-"আমি ঠিক, তুই ভুল" মনোভাব। সমীক্ষা বলছে, যারা পারস্পরিক ক্ষমার অভ্যাস করেন, তাদের বিবাহ বিচ্ছেদের হার ৪০% কম।
৪. একান্ত সময় কাটান-স্ক্রিন নয়, চোখে চোখ রাখুন
সারা দিন একসঙ্গে থেকেও যদি দুইজনই আলাদা স্ক্রিনে ডুবে থাকেন, তাহলে ঘনিষ্ঠতা হারিয়ে যায়।
সপ্তাহে অন্তত ১ দিন একসঙ্গে স্ক্রিনমুক্ত সময় কাটান কথা বলুন, হাঁটুন, পুরোনো স্মৃতি রিভাইভ করুন। গবেষণায় প্রমাণিত: একান্ত সময় বাড়ালে দাম্পত্যে মানসিক সংযোগ এবং যৌন তৃপ্তি দুই-ই বৃদ্ধি পায়।
৫. সমাধান নয়, শুধু শুনুন-"Active Listening" কৌশল
আপনার সঙ্গী হয়তো কোনো সমাধান খুঁজছেন না, শুধু চাচ্ছেন কেউ মনোযোগ দিয়ে শোনে।
প্রতিক্রিয়া দেওয়ার আগে পুরোটা শোনেন মাঝখানে থামিয়ে উপদেশ দেবেন না। মনোবিজ্ঞান বলে, সক্রিয় শ্রোতা হতে পারলে পারস্পরিক বিশ্বাস এবং আবেগের গভীরতা অনেক বাড়ে।
প্রেমে শুরু হলেও, দাম্পত্য জীবন একটি যাত্রা-যেখানে ভুল বোঝাবুঝির মোড় অনেক। কিন্তু সেই মোড়গুলো ঠিকঠাক পার হতে পারলেই গন্তব্যে পৌঁছানো যায় একসঙ্গে। আর এ যাত্রায় যদি একটু বিজ্ঞান, একটু মনোবিদ্যার সহায়তা নেওয়া যায়, তাহলে ভালোবাসা শুধু টিকে নয়, আরও গভীর হয়।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।