সোশ্যাল মিডিয়ায় যতটা উজ্জ্বল, বাস্তবে ততটাই ফাঁকা!! নিজেকেই কি হারিয়ে ফেলছি-সোশ্যাল মিডিয়ার আয়নায়?

সোশ্যাল মিডিয়ায় যতটা উজ্জ্বল, বাস্তবে ততটাই ফাঁকা!! নিজেকেই কি হারিয়ে ফেলছি-সোশ্যাল মিডিয়ার আয়নায়?
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

সেলফিতে হাসি, ক্যাপশনে সুখ তবে বাস্তবে কী সত্যিই আমরা এতটা আনন্দিত? সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে আমাদের অনলাইন সত্তা ও বাস্তব জীবনের মাঝে তৈরি হয়েছে এক গভীর ফাটল, যা দিনে দিনে রূপ নিচ্ছে এক মানসিক ও সামাজিক সংকটে। গত এক দশকে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো যেমন ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক ইত্যাদি আমাদের জীবনের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে। আমরা সেখানে প্রতিদিন ভাগ করে নিচ্ছি নিজের বিশেষ মুহূর্ত, সাফল্য, ট্র্যাভেল ডায়রি, সম্পর্কের গল্প। কিন্তু এই ডিজিটাল চিত্রপটের পেছনে কি আমরা নিজেদের নিঃসঙ্গতা, হতাশা ও অনিশ্চয়তার গল্প আড়াল করছি না?

বিশ্বজুড়ে নানা মনোবিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণায় দেখা গেছে সোশ্যাল মিডিয়ার অতিরিক্ত ব্যবহার, বিশেষত 'পারফেক্ট লাইফ' প্রদর্শনের প্রবণতা, ব্যবহারকারীর মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অনেকে অজান্তেই নিজেদের অন্যের সাথে তুলনা করে আত্মতুষ্টি হারাচ্ছেন, বাড়ছে হীনম্মন্যতা ও আত্মগ্লানি।

এক সমীক্ষা বলছে, অনেক তরুণ-তরুণী দিন শেষে নিজেদের "কম" মনে করছেন কারণ তারা দেখেন অন্য কেউ প্রতিদিন নতুন শহরে ঘুরছে, মহার্ঘ্য রেস্টুরেন্টে খাচ্ছে, অথবা প্রেমে সাফল্য পাচ্ছে। অথচ, এই দৃশ্যপটের বাইরেই লুকিয়ে থাকে সেইসব বাস্তবতা অসুখ, অনিশ্চয়তা, আর্থিক চাপ ও মানসিক অবসাদ, যেগুলো অনলাইন পর্দায় ঠাঁই পায় না।

মানসিক স্বাস্থ্যের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের "ডিজিটাল মুখোশ" কেবল আত্মপ্রতারণাই নয়, একধরনের সামাজিক স্ট্রেস তৈরি করে। একদিকে আমাদের ওপর চাপ বাড়ছে নিজেদের উপস্থাপনাকে "রঙিন" ও "মহানন্দময়" দেখাতে, অন্যদিকে আমরা নিজেদের আসল অনুভূতিগুলো চাপা দিচ্ছি যার ফল হচ্ছে ইমোশনাল ডিসকানেকশন এবং দীর্ঘমেয়াদে মানসিক অসুস্থতা।

আরেকটি উদ্বেগজনক দিক হলো "ভ্যালিডেশন অ্যাডিকশন" বা অন্যের লাইক, রিঅ্যাকশন ও মন্তব্যের ওপর মানসিক নির্ভরতা। এটি মানুষের আত্মমর্যাদা গড়ে ওঠার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, বিশেষ করে কিশোর ও তরুণদের মধ্যে।

তবে এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ সম্ভব বিশেষজ্ঞদের মতে, নিজের অনলাইন উপস্থিতি আর বাস্তব জীবনের মধ্যে ভারসাম্য রাখা, ডিজিটাল ডিটক্স পালন এবং আত্মমুল্যায়নের অভ্যাস গড়ে তোলা এই সংকট কাটিয়ে উঠতে সহায়ক হতে পারে।

সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের জীবনের অপরিহার্য অংশ হলেও, সেটি যেন আমাদের আত্মপরিচয়কে না গ্রাস করে এই সচেতনতাই এখন সময়ের দাবি।

স্মার্টফোনের পর্দায় আমরা যেটুকু দেখছি, সেটাই আসল নয়। পর্দার আড়ালের মানুষটি হয়তো ক্লান্ত, একা, কিংবা দিশেহারা। তাই সময় এসেছে সোশ্যাল মিডিয়ার "নিখুঁত মুখোশ" ভেঙে আসল মানুষটিকে দেখা ও বোঝার। সবার আগে দরকার নিজের প্রতি সহানুভূতি এবং অনলাইনের বাইরের জীবনের প্রতি যত্নশীল হওয়া।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ