চাঁদের মাটিতে গাছ জন্মানোর বৈজ্ঞানিক অভিযান ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা

চাঁদের মাটিতে গাছ জন্মানোর বৈজ্ঞানিক অভিযান ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

মানব সভ্যতার মহাকাশ অভিযানের এক নতুন অধ্যায় হলো চাঁদের মাটিতে জীববৈচিত্র্য সৃষ্টি করা, যেখানে গাছ জন্মানো বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। কারণ, চাঁদে মানুষের দীর্ঘমেয়াদি বসতি গড়তে গেলে স্থানীয় খাদ্য উৎপাদন অপরিহার্য। তাই বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন মহাকাশ সংস্থা চাঁদের শুষ্ক, কঠিন ও অতিপ্রাকৃতিক পরিবেশে উদ্ভিদ জন্মানোর পরীক্ষা চালাচ্ছে।

বিভিন্ন দেশের মূল কার্যক্রম ও অগ্রগতি:

⇨ চীন:

২০১৯ সালে 'চাং-ই-৪' মিশনে প্রথমবার চাঁদের দূরবর্তী পাশে আলু, গাজর, শুংগুরসহ কিছু উদ্ভিদ বীজ বপন করা হয়। মিশনের মাধ্যামে চাঁদের পরিবেশে কৃত্রিম বায়োস্ফিয়ারিক অবস্থায় ৬৫ দিন পর্যন্ত উদ্ভিদের বৃদ্ধি ধরে রাখা সম্ভব হয়। পরীক্ষায় দেখা গেছে, মাটিতে থাকা কিছু খনিজ ও কৃত্রিম সেচ দিয়ে গাছ বড় হতে পারে, তবে স্থায়ী বসতি গড়তে এখনও অনেক বাধা আছে।
 

⇨ যুক্তরাষ্ট্র (নাসা):

'আরমাটেক' ও 'আর্টেমিস' মিশনের আওতায় চাঁদের মাটিতে বিভিন্ন শস্য ও উদ্ভিদের বীজ পরীক্ষামূলকভাবে বৃদ্ধি করার কাজ চলছে। উন্নত ল্যাব ও কৃত্রিম পরিবেশে বিশেষ ধরণের বায়োডোম তৈরি করে পরীক্ষা করছে। শস্য উন্নয়নে জিনগত পরিবর্তন ও মাইক্রোগ্র্যাভিটি-সহিষ্ণু উদ্ভিদ তৈরির ওপর গবেষণা অব্যাহত।
 

⇨ ইউরোপীয়ান স্পেস এজেন্সি (ESA):

'মুনল্যাব' প্রকল্পে চাঁদের মাটি ও বায়ুমণ্ডল অনুকরণ করে বিভিন্ন উদ্ভিদের বৃদ্ধি পরীক্ষা করা হচ্ছে।
বিশেষভাবে ফসল উৎপাদনের জন্য উন্নত প্রযুক্তি ও সেলুলার গবেষণা চালাচ্ছে।
 

চাঁদের মাটিতে গাছ জন্মানোর বৈজ্ঞানিক চ্যালেঞ্জসমূহ

⇨ মাটির গঠন: চাঁদের মাটি (রেজোলিথ) খুবই ক্ষুদ্র কণার সমন্বয়ে তৈরি, যা বায়ু ও পানি ধরে রাখতে সক্ষম নয়।

⇨ জল সরবরাহের অভাব: তরল জল স্বাভাবিকভাবে নেই, তাই জল সঞ্চয় ও পরিবহনে প্রযুক্তিগত সঙ্কট।

⇨ তাপমাত্রার চরম পার্থক্য: রাত ও দিনের তাপমাত্রার পার্থক্য প্রায় ২৭০ ডিগ্রী সেলসিয়াস, যা উদ্ভিদের জন্য মারাত্মক।

⇨ রেডিয়েশন: চাঁদের বায়ুমন্ডল না থাকার কারণে কৃত্রিম সুরক্ষা ছাড়া অতিবেগুনি রশ্মি উদ্ভিদের ক্ষতি করে।

⇨ বায়ুমন্ডলের অভাব: অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইডের স্বাভাবিক সরবরাহ না থাকায় বায়োডোম তৈরি বাধ্যতামূলক।
 

ভবিষ্যত পরিকল্পনা ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন:

⇨ কৃত্রিম বায়োডোম ও গ্রিনহাউস: চাঁদের পরিবেশ অনুকরণ করে নিয়ন্ত্রিত খাদ্য উৎপাদনের ব্যবস্থা।

⇨ জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং: চাঁদের পরিবেশে টিকে থাকার উপযোগী উদ্ভিদ তৈরি।

⇨ অবকাঠামো নির্মাণ: স্থায়ী বসতি ও কৃষি চক্রের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার।

⇨ সোলার ও ওয়াটার হ্যার্ভেস্টিং: সোলার প্যানেল ও ওয়াটার রিক্লেমেশন প্রযুক্তি প্রয়োগ।
 

চাঁদের মাটিতে গাছ জন্মানোর পরীক্ষায় বর্তমানে চীন সবচেয়ে এগিয়ে থাকলেও যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয়ান স্পেস এজেন্সিও দ্রুত গতিতে এগিয়ে আসছে। এই প্রযুক্তি সফল হলে আগামী দিনের মহাকাশ অভিযানে মানব বসতির স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে, যেখানে চাঁদের নিজের মাটিতে গাছ জন্মাবে, খাবার উৎপাদন হবে এবং দীর্ঘস্থায়ী জীবনযাপন সম্ভব হবে।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ