দিনে বারবার রঙ বদলায় যে ফুল-জানুন প্রকৃতির এক বিস্ফোরক চমক!

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
প্রকৃতির নান্দনিকতা শুধু সুগন্ধে নয়, রঙের খেলাতেও লুকিয়ে আছে। আর এই রঙের খেলায় সবচেয়ে বিস্ময়কর জায়গা দখল করে নিয়েছে এমন কিছু ফুল, যারা প্রতিদিনই বদলে ফেলে নিজের সাজ। বাগানপ্রেমী কিংবা প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে এই ঘটনা শুধু সৌন্দর্যের উৎস নয়, বরং জীববিজ্ঞানের এক অসাধারণ উদাহরণ।
বিশ্বের উষ্ণ ও উপ-উষ্ণ অঞ্চলে জন্মানো Lantana camara (ল্যান্টানা) এমনই এক ফুল, যার পাপড়ি দিনের সময়ভেদে রঙ বদলায়। সকালে এটি ফুটে ওঠে উজ্জ্বল হলুদ বা কমলা রঙে, দুপুরের মধ্যে রঙ বদলে হয় গোলাপি, আর সন্ধ্যা নাগাদ গাঢ় লাল বা বেগুনি আভা নেয়।
উদ্ভিদবিজ্ঞানে এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় Color Change Mechanism in Anthesis। রঙ পরিবর্তনের আসল কারণ লুকিয়ে আছে পাপড়ির ভেতরের অ্যান্থোসায়ানিন (Anthocyanin) ও ক্যারোটিনয়েডস (Carotenoids) নামের প্রাকৃতিক রঞ্জকে। সূর্যালোকের তীব্রতা, তাপমাত্রা ও পরাগায়নের অগ্রগতির সাথে সাথে এই রঞ্জকের রাসায়নিক গঠন পরিবর্তিত হয়, যা পাপড়ির রঙও বদলে দেয়।
প্রথমে উজ্জ্বল রঙের মাধ্যমে মৌমাছি, প্রজাপতির মতো পরাগবাহীদের আকর্ষণ করা হয়। ফুলে একবার পরাগায়ন হয়ে গেলে রঙ বদলে যায়-যা ইঙ্গিত দেয়, "আমি প্রস্তুত কাজ শেষ করেছি, এখন অন্য ফুলে যাও।" - এই প্রাকৃতিক সংকেত গাছের শক্তি সাশ্রয় করে এবং প্রজনন সাফল্য বাড়ায়।
শুধু ল্যান্টানাই নয়, প্রকৃতিতে আরও কিছু ফুল একই রকম বৈশিষ্ট্য ধারণ করে-
⇨ Hibiscus mutabilis (কনফেডারেট রোজ): সকালে সাদা, দুপুরে গোলাপি, রাতে গাঢ় লাল।
⇨ Brunfelsia pauciflora (Yesterday-Today-and-Tomorrow): প্রথম দিন বেগুনি, দ্বিতীয় দিন ল্যাভেন্ডার, তৃতীয় দিন সাদা।
কিছু ট্রপিক্যাল অর্কিড প্রজাতিও পরাগায়নের পর রঙ বদলায়।
রঙ বদলানো ফুল কেবল সৌন্দর্যের প্রতীক নয়, বরং বাস্তুতন্ত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এগুলো স্থানীয় পরাগবাহীদের বৈচিত্র্য বজায় রাখতে সহায়তা করে, কারণ ভিন্ন ভিন্ন রঙ ভিন্ন ধরনের পোকা আকর্ষণ করে। তাছাড়া, এসব ফুলের উপস্থিতি পরিবেশের সুস্থতারও ইঙ্গিত দেয়, কারণ রঙ বদলের প্রক্রিয়া তাপমাত্রা ও আলোকমাত্রার সাথে গভীরভাবে সম্পর্কিত।
চাষাবাদ:
⇨ মাটি: হালকা দোআঁশ মাটি ও ভালো নিষ্কাশন ব্যবস্থা প্রয়োজন।
⇨ সূর্যালোক: দিনে অন্তত ৬ ঘণ্টা সরাসরি সূর্যালোক লাগবে।
⇨ সেচ: গ্রীষ্মে সপ্তাহে ২–৩ বার, শীতে কম।
⇨ ছাঁটাই: ফুল ফোটার মৌসুম শেষে ডাল ছাঁটাই করলে নতুন ফুল বেশি হয়।
জলবায়ুর প্রভাব: রঙ বদলের তীব্রতা আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে। গরম ও রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে রঙের পরিবর্তন দ্রুত ও উজ্জ্বল হয়, আর ঠান্ডা বা মেঘলা দিনে পরিবর্তন ধীরগতি হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কিছু এলাকায় এই প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ার শঙ্কাও দেখা দিয়েছে।
প্রকৃতির এই অনন্য সৃষ্টিগুলো প্রমাণ করে, ফুল শুধু সৌন্দর্যের প্রতীক নয়-এরা বিজ্ঞান, বিবর্তন এবং পরিবেশের গল্পও বলে। প্রতিদিন নতুন সাজে সেজে ওঠা এই ফুলগুলো তাই প্রকৃতির জীবন্ত শিল্পকর্ম।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।