সিজোফ্রেনিয়া ও জিনের আছর: বিভ্রান্তি থেকে মুক্তির জন্য ইসলামিক ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
মানব জীবনে মানসিক ও আত্মিক অসুস্থতা কখনো কখনো পরস্পরের সঙ্গে গুলিয়ে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। বিশেষ করে যখন কথা আসে সিজোফ্রেনিয়া এবং জিনের আছরের। অনেকেই এই দুই বিষয়কে এক মনে করে বিভ্রান্তিতে পড়েন, অথচ এরা প্রকৃতপক্ষে সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়।
জিনের আছর আর সিজোফ্রেনিয়া-কীভাবে বুঝবেন পার্থক্য?
ইসলামের আলোকে, জিনের আছর বলতে বোঝানো হয় এক ধরনের আছর, যেখানে একজন মানুষ কোনো অতিপ্রাকৃত অদৃশ্য সত্তার প্রভাব বা কব্জা অধিকার করে ফেলে। আর সিজোফ্রেনিয়া হল একটি নিউরো-সাইকিয়াট্রিক মানসিক রোগ, যার বৈজ্ঞানিক কারণ হলো মস্তিষ্কের রাসায়নিক ভারসাম্যের অভাব, বিশেষ করে ডোপামিনের তারতম্য।
সিজোফ্রেনিয়ার প্রধান লক্ষণগুলো হলো:
⇨ অস্বাভাবিক শব্দ শোনা (হ্যালুসিনেশন)
⇨ মিথ্যে বিশ্বাসে প্রবণতা (ডেলিউশন)
⇨ হঠাৎ অকারণে কান্না, হাসি বা রাগ
⇨ বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্নতা
⇨ স্মৃতিশক্তির দুর্বলতা ইত্যাদি।
অন্যদিকে জিনের আছরের লক্ষণ হতে পারে:
⇨ কুরআন বা দোয়া শোনার সময় অস্থির হওয়া
⇨ ঘুমে দুঃস্বপ্ন ও চিৎকার
⇨ শরীরে ব্যথা, কিন্তু মেডিক্যাল পরীক্ষা নেগেটিভ
⇨ আচরণের অপ্রত্যাশিত পরিবর্তন ইত্যাদি।
চিকিৎসার পথ: ইসলাম ও আধুনিক চিকিৎসা একসঙ্গে
ইসলাম শরিফে এই ধরনের সমস্যা মোকাবিলায় রুকইয়াহ একটি শক্তিশালী ও সুপ্রমাণিত উপায়। হাদীস শরীফে কুরআনের আয়াত বা ভাল দু'আ দ্বারা ঝাড়-ফুঁক দেওয়া বৈধ বলে সুস্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নিজে অনেককে ফুঁক দিয়েছেন। তবে তিনি নিজে বা তাঁর সাহাবীগণ কখনো কাউকে তাবিজ লিখে ব্যবহার করতে দিয়েছেন বলে কোনো সহীহ বর্ণনা পাওয়া যায় না। ।
সুতরাং, যাদের ক্ষেত্রে জিনের আছরের সন্দেহ থাকে, তারা অভিজ্ঞ রুকইয়াহ বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিতে পারেন।
অপরদিকে, সিজোফ্রেনিয়ার চিকিৎসায় আধুনিক মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। মানসিক রোগের চিকিৎসায় অ্যান্টিপসাইকোটিক ওষুধ, সাইকোথেরাপি ইত্যাদি প্রমাণিত পদ্ধতি।
একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে: কখনো কখনো একজন রোগী একসঙ্গে উভয় সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারেন। তাই শুধুমাত্র রুকইয়াহ অথবা শুধু মেডিক্যাল চিকিৎসাই যথেষ্ট নয়। উভয় পদ্ধতির সমন্বয় ঘটালে ইনশাআল্লাহ সাফল্য পাওয়া সম্ভব।
করণীয়:
১. রোগীর প্রতি নির্ধারিত সুরা ও আয়াত পাঠ করিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখা।
২. প্রয়োজনে সিজোফ্রেনিয়া বা অন্য মানসিক রোগের জন্য মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ।
৩. রুকইয়াহ ও চিকিৎসা একসঙ্গে চালানো।
আপনার আশেপাশে কেউ যদি এমন সমস্যায় ভুগে, তাহলে তাকে অবহেলা না করে সহানুভূতিশীল হোন। মানসিক ও আত্মিক চিকিৎসা দুটোই সময়মতো গ্রহণ করানো উচিত। আল্লাহতায়ালা সকল রোগীর জন্য দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন। আমীন।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।