স্মৃতি ভুলে যাওয়া মানেই কি বার্ধক্য? না কি এটি মস্তিষ্কের এক ধরনের আত্মরক্ষা কৌশল?

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
আমরা প্রায়ই বলি, "আগের মতো মনে থাকে না"-আর বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই কথা যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়ায়। তাই অনেকেই ধরে নেন, ভুলে যাওয়াই বার্ধক্যের লক্ষণ। কিন্তু আধুনিক নিউরোসায়েন্স বলছে-সব ভুলে যাওয়া মানেই বয়সজনিত স্মৃতিভ্রংশ নয়। এর পেছনে থাকতে পারে মস্তিষ্কের একটি অত্যন্ত বুদ্ধিদীপ্ত আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থা।
মস্তিষ্ক প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৭০,০০০ চিন্তা প্রক্রিয়া করে। প্রতিটি অভিজ্ঞতা, দৃশ্য, শব্দ, অনুভূতির তথ্য মস্তিষ্কে জমা থাকলে আমরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়তাম। তাই কিছু ভুলে যাওয়া আসলে দরকারি-এটিই হচ্ছে অ্যাডাপটিভ ফর্গেটিং (Adaptive Forgetting)।
এটি এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে মস্তিষ্ক ইচ্ছাকৃতভাবে অপ্রয়োজনীয় বা বিরক্তিকর তথ্য বাদ দেয়, যাতে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সহজে মনে রাখা যায়। এটা ঠিক যেন আপনার ফোনের স্টোরেজ ফাঁকা রাখার মতো-নতুন দরকারি জিনিস সংরক্ষণের জন্য পুরনো অপ্রাসঙ্গিক ফাইল মুছে ফেলা।
মস্তিষ্কের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ভুলে যাওয়ার কারণ:
১. নিউরাল ওভারলোড এড়ানো: সব তথ্য ধরে রাখলে মস্তিষ্কের নিউরাল নেটওয়ার্কে চাপ পড়ে। তাই বেছে বেছে তথ্য ধরে রাখাই নিরাপদ।
২. স্মৃতির পুনর্গঠন (Memory reconsolidation): স্মৃতি প্রতিবার মনে পড়ার সময় একটু বদলায়। অপ্রয়োজনীয় বা নেতিবাচক অংশ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাদ পড়তে থাকে।
৩. দুশ্চিন্তা বা ট্রমা থেকে রক্ষা: অনেক সময় ট্রমা বা বড় মানসিক আঘাতের পর কিছু ঘটনা মস্তিষ্ক 'দমন' করে রাখে—এটিও ভুলে যাওয়ার একটি প্রতিরক্ষামূলক কৌশল।
৪. নতুন শেখার সুবিধার্থে: পুরনো কম প্রাসঙ্গিক তথ্য ভুলে গেলে নতুন শেখা বা সমস্যার সমাধানে মনোযোগ বাড়ে।
তাহলে কখন স্মৃতি দুর্বলতা উদ্বেগের কারণ?
সব ভুলে যাওয়া স্বাভাবিক নয়। যদি ভুলে যাওয়ার সঙ্গে সাথে নিচের লক্ষণগুলো দেখা যায়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন:
⇨ পরিচিত ব্যক্তিকে ভুলে যাওয়া
⇨ প্রতিদিনের কাজ ভুলে যাওয়া
⇨ কথাবার্তায় অসংলগ্নতা
⇨ স্থান ও সময় বুঝতে সমস্যা হওয়া
এসব ক্ষেত্রে এটা নিউরোকগনিটিভ ডিসঅর্ডার, যেমন ডিমেনশিয়া বা আলঝেইমারস ডিজিজ এর ইঙ্গিত হতে পারে।
স্মৃতিশক্তি ঠিক রাখতে যা করতে পারেন:
✔ পর্যাপ্ত ঘুম (৭–৮ ঘণ্টা)
✔ নতুন কিছু শেখার অভ্যাস
✔ শারীরিক ব্যায়াম (রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়)
✔ মেডিটেশন ও মানসিক চাপ কমানো
✔ স্বাস্থ্যকর খাবার, বিশেষ করে ওমেগা-৩ যুক্ত খাবার
সব ভুলে যাওয়া বার্ধক্যের সংকেত নয়। বরং এটি হতে পারে মস্তিষ্কের নিজের জায়গা পরিষ্কার করার পদ্ধতি, যাতে নতুন ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ধারণে বাধা না আসে। তাই ভুলে যাওয়া নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে, বোঝার চেষ্টা করুন-আপনার মস্তিষ্ক কোন তথ্যকে 'জরুরি নয়' হিসেবে চিহ্নিত করেছে। অপ্রয়োজনীয় স্মৃতি ভুলে যাওয়াই আমাদের মানসিক ভারসাম্য ও স্থিতিশীলতার ভিত্তি হতে পারে-আর এটাই বিজ্ঞানের এক অসাধারণ উপলব্ধি।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।