মধ্যপ্রাচ্যের ঐতিহ্যবাহী হারিসা রান্নার রহস্য ঘরে বসেই শিখুন-ধাপে ধাপে সম্পূর্ণ রেসিপি

মধ্যপ্রাচ্যের ঐতিহ্যবাহী হারিসা রান্নার রহস্য ঘরে বসেই শিখুন-ধাপে ধাপে সম্পূর্ণ রেসিপি
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

হারিসা একটি স্যুপ-জাতীয় খাবার, যা গম এবং মাংস দিয়ে অনেকক্ষণ সেদ্ধ করে তৈরি করা হয়। এটি মধ্যপ্রাচ্য, বিশেষ করে সিরিয়া, লেবানন, ইরাক, এবং তুরস্কের ঐতিহ্যের অংশ। পাকিস্তান ও বাংলাদেশের কিছুভাগ অঞ্চলেও হারিসার জনপ্রিয়তা দেখা যায়। শীতকালে গরম ও পুষ্টিকর খাবারের বিকল্প হিসেবে বিশেষভাবে খাওয়া হয়।

হারিসার উৎপত্তি প্রায় হাজার বছর আগের। ঐতিহাসিক রেকর্ডে দেখা যায়, মুসলিম শাসক আল-মুত্তাসিম (৯০০ সাল) এই খাবার পছন্দ করতেন এবং সেনাদের জন্য এটি দ্রুত শক্তি জোগানোর খাদ্য হিসেবে জনপ্রিয় ছিল। গ্রামের মানুষ থেকে শহুরে মানুষ, সবাই হারিসাকে পছন্দ করে আসছেন। বিশেষ উৎসব বা ধর্মীয় দিনগুলোতেও এটি পরিবেশন হয়।
 

পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা:

⇨ গম: ধীরে ধীরে সেদ্ধ হওয়ার কারণে গমের শর্করা সহজে হজম হয়, যা দীর্ঘস্থায়ী শক্তি দেয়। এতে ফাইবার ও বিভিন্ন ভিটামিন রয়েছে।

⇨ মাংস: উচ্চ মানের প্রোটিন ও আয়রনের উৎস, যা পেশী গঠন ও রক্তস্বল্পতা রোধে সাহায্য করে।

⇨ দীর্ঘ সেদ্ধ প্রক্রিয়া: কোলাজেন ও অন্যান্য উপাদান মুক্তি পায়, যা হাড় ও জয়েন্টের জন্য উপকারী।

⇨ অতিরিক্ত চর্বি ও তেলের ব্যবহার না থাকায় হারিসা কম ক্যালোরিযুক্ত কিন্তু পুষ্টিতে ভরপুর।
 

✪ বিশেষ টিপস:

✔  গম ভালো করে ভিজিয়ে রাখলে রান্নায় সময় কম লাগে এবং গম নরম হয়।

✔ মাংসের সাথে সঙ্গে কিছু হাড় যুক্ত করলে স্বাদ ও পুষ্টি বাড়ে।

✔ দমে দমে রান্না করলে স্বাদ গভীর হয়।

✔ গরম মসলা সামান্য পরিমাণে ব্যবহার করুন, যাতে মাংসের প্রাকৃতিক স্বাদ বজায় থাকে।

✔ পরিবেশনের সময় ঘি বা মাখন ছড়িয়ে দিলে অতিরিক্ত সুগন্ধ ও মোলায়েমতা আসে।
 

রান্নার প্রণালী (বিশদ):

১. গমকে ৬-৭ ঘণ্টা বা সারা রাত ভিজিয়ে রাখুন।

২. একটি বড় পাত্রে মাংস, পেঁয়াজ, আদা-রসুন বাটা, গরম মসলা ও পানি দিয়ে ঢেকে দিন।

৩. কম আঁচে ৩-৪ ঘণ্টা সিদ্ধ করুন যতক্ষণ না মাংস পুরোপুরি নরম হয়।

৪. অন্য পাত্রে গম সেদ্ধ করুন।

৫. সিদ্ধ মাংস থেকে মাংস আলাদা করে কসিয়ে নিন এবং বাকি স্যুপটি ছেঁকে নিন।

৬. কসানো মাংস ও সিদ্ধ গম একসাথে মিশিয়ে আবার কম আঁচে রান্না করুন। মাঝে মাঝে নাড়ুন।

৭. লবণ ও ঘি যোগ করে ভালো করে মিশিয়ে গরম পরিবেশন করুন।

 

বর্তমানে অনেক ফ্রোজেন ফুড কোম্পানি হারিসার প্যাকেট সংস্করণ বাজারে নিয়ে এসেছে, যা দ্রুত রান্নার জন্য উপযোগী। তবে ঘরোয়া হারিসার স্বাদ ও পুষ্টি তুলনাহীন।

পশ্চিম এশিয়ার মুসলিম দেশগুলোতে রমজানের সময় ইফতারে হারিসা খুবই জনপ্রিয়। এটি গরম ও পুষ্টিকর হওয়ায় রোজাদারের শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক। সামাজিক জমায়েতে হারিসা পরিবেশন ঐতিহ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

হারিসা শুধু এক খাবার নয়, এটি ইতিহাস, সংস্কৃতি ও পুষ্টির সমন্বয়। দিনের শেষে এক বাটি হারিসা শরীর ও মনকে নতুন করে জাগ্রত করে তোলে। গরম গরম, ঘি-মাখানো হারিসা উপভোগ করে দেখুন প্রাচ্যের এই অমুল্য ধন।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ