গাছেরা কি সত্যিই কথা বলে? মাটির নিচের অদৃশ্য নেটওয়ার্কের রহস্য উন্মোচন

গাছেরা কি সত্যিই কথা বলে? মাটির নিচের অদৃশ্য নেটওয়ার্কের রহস্য উন্মোচন
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

আমরা যখন কোনো বনে দাঁড়িয়ে উঁচু গাছের সারি দেখি, তখন মনে হয় প্রতিটি গাছ আলাদা আলাদা সত্তা। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন, আসলে বনের প্রতিটি গাছ এক অদৃশ্য ভূগর্ভস্থ নেটওয়ার্কে যুক্ত থাকে যাকে বলা হচ্ছে "Wood Wide Web"। মানুষের ইন্টারনেট যেমন তথ্য আদানপ্রদানের মাধ্যম, তেমনি গাছেদের এই নেটওয়ার্ক হলো পুষ্টি, রাসায়নিক বার্তা ও সতর্ক সংকেত পৌঁছে দেওয়ার এক জটিল প্রাকৃতিক ব্যবস্থা।

এই নেটওয়ার্কের কেন্দ্রবিন্দুতে আছে মাইকোরাইজাল ছত্রাক (Mycorrhizal fungi)।

ছত্রাকের সূক্ষ্ম থ্রেড বা হাইফা (Hyphae) গাছের শিকড়ের ভেতরে ঢুকে মাইলের পর মাইল মাটির নিচে ছড়িয়ে পড়ে। হাইফা একে অপরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তৈরি করে এক ধরনের ভূগর্ভস্থ জাল (mycelial network)। এই জালের মাধ্যমে গাছেরা একে অপরের সাথে পুষ্টি বিনিময় করে। একে অনেক গবেষক প্রকৃতির "লিভিং ইন্টারনেট কেবল" বলে অভিহিত করেন।
 

গাছেরা যেভাবে "শেয়ার" করে-

⇨ পুষ্টি বিনিময়: আলো বেশি পাওয়া গাছ অতিরিক্ত কার্বন (শর্করা) শেয়ার করতে পারে ছায়ায় বেড়ে ওঠা চারাগাছের সাথে। কোনো দুর্বল বা অসুস্থ গাছ আশপাশের শক্তিশালী গাছ থেকে নাইট্রোজেন, ফসফরাস পেতে পারে।
 

⇨ সতর্ক সংকেত:
গাছ পোকামাকড় বা রোগজীবাণুর আক্রমণে আক্রান্ত হলে রাসায়নিক সংকেত ছত্রাক-নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পাশের গাছে পৌঁছে দেয়। সতর্কবার্তা পেয়ে অন্য গাছগুলো প্রতিরক্ষামূলক রাসায়নিক তৈরি শুরু করে, ফলে আক্রমণ প্রতিহত করা সহজ হয়।
 

⇨ মাদার ট্রি ধারণা: গবেষক সুজান সিমার্ড দেখিয়েছেন, বড় ও পুরোনো গাছগুলো আশপাশের ছোট গাছদের পুষ্টি সরবরাহ করে। এদের বলা হয় "Mother Trees", যারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম বনকে টিকিয়ে রাখতে ভূমিকা রাখে।
 

বনজ ekosystem এ গুরুত্ব: এই নেটওয়ার্ক বনের প্রতিটি গাছকে একে অপরের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্কে বেঁধে রাখে। গাছ ছত্রাককে দেয় কার্বোহাইড্রেট, ছত্রাক দেয় খনিজ, পানি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। ফলে বনজ ekosystem শুধু প্রতিযোগিতার উপর নয়, বরং সহযোগিতা ও পারস্পরিক নির্ভরতার উপর দাঁড়িয়ে আছে। গবেষণা বলছে, এই নেটওয়ার্ক ছাড়া বনের গাছপালা একা টিকে থাকতে পারত না।
 

বন ধ্বংস হলে শুধু গাছ কাটা হয় না, সাথে সাথে মাটির নিচের এই অদৃশ্য নেটওয়ার্কও ভেঙে যায়।

এর ফলে গাছপালার স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, মাটির উর্বরতা নষ্ট হয় এবং পুরো পরিবেশব্যবস্থার ভারসাম্য ভেঙে পড়ে। তাই "Wood Wide Web" ধ্বংস হওয়া মানে হলো প্রকৃতির একটি বিশাল যোগাযোগব্যবস্থা ছিন্ন হয়ে যাওয়া।
 

ভবিষ্যৎ গবেষণার দিক: বিজ্ঞানীরা এখনো খুঁজছেন- এই নেটওয়ার্ক কি শুধু পুষ্টি ও সতর্ক সংকেত বহন করে, নাকি আরও জটিল রাসায়নিক ভাষা (chemical language) বহন করে?

কিছু গবেষক মনে করছেন, ভবিষ্যতে এটির মাধ্যমে গাছেরা আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়াও শেয়ার করতে পারে। বন ব্যবস্থাপনা ও পুনঃবনায়নে (Reforestation) এই জ্ঞান ব্যবহার করে পরিবেশ পুনর্গঠন সহজ হতে পারে।
 

সারকথা, উড ওয়াইড ওয়েব হলো প্রকৃতির ইন্টারনেট-যেখানে গাছেরা একে অপরকে সাহায্য করে, বার্তা পাঠায় এবং একসঙ্গে বেঁচে থাকার কৌশল তৈরি করে। মানুষ যেমন প্রযুক্তির নেটওয়ার্ক ছাড়া একা টিকে থাকতে পারে না, তেমনি বনের গাছও একে অপরের ওপর নির্ভরশীল।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ