ফিনল্যান্ডের শিক্ষা পদ্ধতি বাংলাদেশে চালু হলে কি বদলানো যাবে শিক্ষার মান!!

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
ফিনল্যান্ডের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনা নতুন কিছু নয়। তবে সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম দিনেই যে শিক্ষার্থীরা বুঝতে পারেন—এখানে মূল জোর মুখস্থ নয়, বরং "কেন" এবং "কিভাবে" তা ব্যাখ্যা করার ক্ষমতায়—তা অনেক দেশের জন্য এখনো বিস্ময়ের বিষয়।
ফিনল্যান্ডে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল মূল্যায়ন পদ্ধতি হল অ্যাসাইনমেন্ট, প্রবন্ধ, প্রজেক্ট, কেস স্টাডি ও উপস্থাপনা। প্রচলিত "লিখে পাশ করা" পরীক্ষা খুব কম।
শিক্ষার্থীর শেখার অগ্রগতি বোঝা হয় তারা কতটা তথ্য বিশ্লেষণ করতে পারছে, অন্য তথ্যের সাথে তুলনা করতে পারছে এবং বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে পারছে তার ওপর।
যেমন—একটি সমাজবিজ্ঞানের ক্লাসে শুধুই সংজ্ঞা লেখার বদলে শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞেস করা হতে পারে: "যদি এ নীতি বাংলাদেশে প্রয়োগ করা হয়, কী ধরনের সামাজিক পরিবর্তন ঘটতে পারে?"
শিক্ষণ পদ্ধতির বিশেষ দিক:
⇨ সমালোচনামূলক চিন্তা (Critical Thinking):
শিক্ষার্থীদের শেখানো হয় কেবল তথ্য গ্রহণ নয়, তথ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলা। শিক্ষকরা ক্লাসে বলেন—"তুমি কেন এভাবে ভাবছো? এর বিপরীতে অন্য কোন যুক্তি আছে কি?"
⇨ প্রয়োগভিত্তিক শিক্ষা (Applied Learning):
থিয়োরি পড়ানো হয়, কিন্তু সাথে সাথে বাস্তব সমস্যার সাথে মিলিয়ে সমাধানের চেষ্টা করানো হয়। যেমন—একটি অর্থনীতি কোর্সে শিক্ষার্থীদের দিয়ে কাল্পনিক বাজেট তৈরি করানো হয়, যেন তারা বুঝতে পারে বাস্তবে সিদ্ধান্ত কত জটিল হতে পারে।
⇨ গ্রুপ-ওয়ার্ক ও আলোচনা:
একা পড়াশোনার চেয়ে এখানে দলগত শেখাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। গ্রুপে আলোচনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ভিন্ন ভিন্ন মতামত শোনে এবং সেখান থেকে নিজের বিশ্লেষণ গড়ে তোলে।
⇨ শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক:
শিক্ষকরা এখানে কেবল পরীক্ষক নন, বরং গাইড বা সহযাত্রী। ক্লাসে শিক্ষককে সহজেই প্রশ্ন করা যায়, বিতর্ক করা যায়—যা দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশে এখনো বিরল।
বিশ্বব্যাপী গবেষকরা বলছেন—২১ শতকের দক্ষতা হলো সমালোচনামূলক চিন্তা, সমস্যা সমাধান ও সৃজনশীলতা। ইন্টারনেট যুগে তথ্য মুখস্থ করার মূল্য প্রায় নেই। তথ্য হাতের নাগালেই পাওয়া যায়। বরং তথ্যকে যাচাই, বিশ্লেষণ এবং সঠিক প্রেক্ষাপটে ব্যবহার করার ক্ষমতা একজনকে এগিয়ে রাখে।
এজন্য ফিনল্যান্ডের শিক্ষা "জ্ঞান অর্জন" এর চেয়ে "জ্ঞান প্রয়োগ" এর ওপর বেশি জোর দেয়।
ফলাফল ও প্রভাব: আন্তর্জাতিক মান নির্ধারণী পরীক্ষায় (PISA) ফিনল্যান্ডের শিক্ষার্থীরা বহু বছর শীর্ষে থেকেছে। তাদের বিশ্ববিদ্যালয় গ্র্যাজুয়েটরা কর্মক্ষেত্রে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হন, কারণ তারা চিন্তায় নমনীয় ও উদ্ভাবনী। শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ তুলনামূলক কম, কারণ তাদের লক্ষ্য শুধু নম্বর নয়, বরং শেখার আনন্দ।
গবেষণায় দেখা গেছে, এ ধরনের পদ্ধতি শিক্ষার্থীর মধ্যে আত্মবিশ্বাস, নেতৃত্ব এবং সহযোগিতার মানসিকতা গড়ে তোলে।
বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার শিক্ষাব্যবস্থায় এখনো নম্বরনির্ভর পরীক্ষা প্রাধান্য পায়। এখানে মূলত "কে কতটা মনে রাখতে পারে" সেটাই মাপা হয়। সমালোচনামূলক প্রশ্ন বা ভিন্ন মত গ্রহণের সংস্কৃতি তুলনামূলক কম। ফলে অনেক সময় বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করেও শিক্ষার্থীরা বাস্তব সমস্যার সমাধানে দুর্বল থেকে যায়।
ফিনল্যান্ডের মডেল দেখাচ্ছে—যদি আমরা পরীক্ষার চেয়ে বিশ্লেষণকে গুরুত্ব দিই, তবে জ্ঞান কেবল বইয়ের পাতায় নয়, বাস্তব জীবনে প্রভাব ফেলবে।
ফিনল্যান্ড প্রমাণ করছে—শিক্ষা মানে শুধু পাশ করা নয়, বরং চিন্তার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করা। আর তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম পাঠেই তারা শেখায়: তথ্য মুখস্থ নয়, তথ্য নিয়ে বিশ্লেষণই আসল শিক্ষা।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।