সবসময় ঘুম ঘুম লাগে? কাজে মন বসে না?এই ৬ টিপস বানাবে আপনাকে এনার্জি মেশিন

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
অলসতা শুধু একটা অভ্যাস নয়, বরং আমাদের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার প্রতিফলন। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠতে দেরি করা, কাজ শুরু করতে টালবাহানা করা, কিংবা দিনভর শক্তি না পাওয়া এসবই একধরনের অলসতার লক্ষণ। অনেকেই এটিকে ব্যক্তিত্বের দুর্বলতা মনে করেন, কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন, অলসতার পেছনে আছে ঘুমের সমস্যা, খাদ্যাভ্যাসের গড়মিল, মানসিক চাপ, এমনকি প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহারও। অলসতা দূর করার সমাধান তাই কেবল ইচ্ছাশক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং আমাদের জীবনযাপনের নানা অভ্যাসের সঠিক সমন্বয়ের মধ্যে লুকিয়ে আছে।
অলসতার বৈজ্ঞানিক কারণ: অলসতার মূল ব্যাখ্যা পাওয়া যায় আমাদের মস্তিষ্ক ও শরীরের কার্যপ্রণালীতে-
☞ জৈবঘড়ির (Biological Clock) ব্যাঘাত: মানবদেহে একটি অভ্যন্তরীণ ঘড়ি আছে, যাকে বলে সার্কাডিয়ান রিদম। যখন আমরা রাতে দেরি করে জেগে থাকি বা পর্যাপ্ত ঘুমাই না, তখন এই ঘড়ি বিঘ্নিত হয়। এর ফলে কর্টিসল ও মেলাটোনিন হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়, আর দিনের বেলায় ঝিমুনি ও অকারণ অলসতা আসে।
☞ এনার্জি মেটাবলিজমের সমস্যা: শরীর শক্তি পায় মূলত খাবার থেকে। কিন্তু অতিরিক্ত ভাজাপোড়া, চিনি বা প্রসেসড ফুড শরীরে দ্রুত গ্লুকোজ বাড়ায়, আবার হঠাৎ কমিয়ে দেয়। এতে মুহূর্তের জন্য এনার্জি মিললেও পরে শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে।
☞ মনস্তাত্ত্বিক কারণ: অতিরিক্ত চাপ, হতাশা বা উদ্বেগে ভুগলে মস্তিষ্ক কাজ ফেলে রাখাকে একধরনের নিরাপদ আশ্রয় মনে করে। ফলে আমরা 'প্রোক্রাস্টিনেশন'-এ ভুগি, যা আসলে অলসতারই আরেক রূপ।
অলসতা দূর করার কার্যকর উপায়-
১. ঘুমের সঠিক রুটিন গড়ে তুলুন: অলসতার প্রথম ও প্রধান কারণ হলো অপর্যাপ্ত ঘুম। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানো ও উঠা মস্তিষ্ককে স্থিতিশীল রাখে। শোবার আগে অতিরিক্ত মোবাইল স্ক্রল বা টিভি দেখা এড়িয়ে চললে ঘুমের মান উন্নত হয়।
২. খাদ্যাভ্যাসে সুষমতা: শরীরকে দীর্ঘমেয়াদে এনার্জি দিতে হলে প্রোটিন, ফাইবার ও ভিটামিনসমৃদ্ধ খাবার বেছে নিতে হবে। সকালের নাশতায় ডিম, ওটস বা ফল, দুপুরে শাকসবজি ও ডাল, আর রাতে হালকা খাবার শরীরকে সক্রিয় রাখে। কফি বা এনার্জি ড্রিঙ্কের ওপর নির্ভর করলে সাময়িক জাগ্রত ভাব আসে, কিন্তু পরে ক্লান্তি আরও বেড়ে যায়।
৩. নড়াচড়ায় শক্তি লুকিয়ে আছে: 'Exercise gives energy'-এটি এখন বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। নিয়মিত ব্যায়াম, হাঁটা বা সাইক্লিং শরীরের রক্তসঞ্চালন বাড়ায়, অক্সিজেন প্রবাহ উন্নত করে। দিনে অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটলেও অলসতা দূর হয়।
৪. মানসিক চাপ কমানো: ধ্যান, গভীর শ্বাসপ্রশ্বাসের অনুশীলন, কিংবা কাজকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে করা-এসব মানসিক চাপ কমায়। ছোট কাজ সম্পন্ন হলে মস্তিষ্ক ডোপামিন নিঃসরণ করে, যা আরও কাজ করার প্রেরণা জোগায়।
৫. প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার: অতিরিক্ত সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে মস্তিষ্ক অকারণে ডোপামিনে ভরে যায়। ফলে বাস্তব কাজ করতে অনীহা জন্মায়। তাই প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় প্রযুক্তি ব্যবহার করার নিয়ম তৈরি করা দরকার।
৬. পানি ও শরীরের যত্ন: শরীরে পানির অভাব ক্লান্তি ও মাথা ভারি হয়ে যাওয়ার বড় কারণ। তাই দিনে পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। পাশাপাশি নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা জরুরি, কারণ থাইরয়েড বা ভিটামিন ঘাটতিও অলসতা তৈরি করতে পারে।
শেষকথা, অলসতা কখনোই শুধু 'ইচ্ছাশক্তির অভাব' নয়, বরং এটি আমাদের শরীর-মন যে সাহায্য চাইছে তার সংকেত। সঠিক ঘুম, সুষম খাদ্য, ব্যায়াম, মানসিক প্রশান্তি ও প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার এই পাঁচটি স্তম্ভের ওপর দাঁড়ালেই অলসতা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। জীবনযাত্রায় ছোট পরিবর্তন আনলেই আমরা অলসতার ঘেরাটোপ থেকে বের হয়ে আরও শক্তিশালী ও উৎপাদনশীল জীবনযাপন করতে পারি।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।