সতর্ক হোন! ডায়াবেটিস থেকে আসা স্নায়বিক ক্ষতি নষ্ট করতে পারে শরীরের স্বাভাবিক রিদম

সতর্ক হোন! ডায়াবেটিস থেকে আসা স্নায়বিক ক্ষতি নষ্ট করতে পারে শরীরের স্বাভাবিক রিদম
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

আমরা যখন শ্বাস নিই, হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়, কিংবা খাবার হজম হয়-এসব কাজের জন্য আলাদা কোনো নির্দেশ আমাদের দিতে হয় না। শরীরের ভেতরে থাকা এক অদৃশ্য নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা-অটোনমিক নার্ভাস সিস্টেম (Autonomic Nervous System)-এসব কাজ নিজে থেকেই সামলায়। কিন্তু যখন এই স্নায়ুতে ক্ষতি হয়, তখন শরীরের স্বয়ংক্রিয় ফাংশনগুলো ব্যাহত হয়ে যায়। একে বলা হয় অটোনমিক নিউরোপ্যাথি (Autonomic Neuropathy)। চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, এটি একটি জটিল স্নায়বিক ব্যাধি, যা হৃদস্পন্দন, রক্তচাপ, হজম, মূত্রাশয়, ঘাম গ্রন্থি এমনকি যৌন কার্যক্রম পর্যন্ত প্রভাবিত করতে পারে।

অটোনমিক নার্ভাস সিস্টেমের ভূমিকা: 

অটোনমিক নার্ভাস সিস্টেম (ANS) হলো স্নায়ুতন্ত্রের সেই অংশ, যা শরীরের অচেতন ও স্বয়ংক্রিয় কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে। এটি আবার দুই ভাগে বিভক্ত:

১। সিমপ্যাথেটিক সিস্টেম – জরুরি পরিস্থিতিতে শরীরকে সক্রিয় করে (যেমন-হৃদস্পন্দন বাড়ানো, ঘাম ঝরানো, রক্তচাপ বাড়ানো)।
 

২। প্যারাসিমপ্যাথেটিক সিস্টেম – শরীরকে শান্ত রাখে (যেমন-হজম প্রক্রিয়া চালু রাখা, হৃদস্পন্দন কমানো, বিশ্রামের সময় ভারসাম্য বজায় রাখা)।

অটোনমিক নিউরোপ্যাথি হলে এই দুই ব্যবস্থার মধ্যে সমন্বয় নষ্ট হয়ে যায়।
 

কেন হয় অটোনমিক নিউরোপ্যাথি?

এটি সাধারণত স্নায়ুর ক্ষতি থেকে হয়। সবচেয়ে বড় কারণ হলো-

⇨ ডায়াবেটিস মেলিটাস: দীর্ঘদিন নিয়ন্ত্রণহীন ডায়াবেটিসে রক্তে উচ্চমাত্রার শর্করা স্নায়ুকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

⇨ অটোইমিউন ডিজিজ (যেমন লুপাস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস): শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিজেই স্নায়ুকে আক্রমণ করতে পারে।

⇨ স্নায়ুর আঘাত বা ইনজুরি
 

ভিটামিন ঘাটতি (বিশেষ করে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স)

⇨ সংক্রমণ (এইচআইভি, কিছু ভাইরাসজনিত রোগ)

⇨ অ্যালকোহল ও টক্সিনের প্রভাব

⇨ জেনেটিক কারণ – পরিবার থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে আসতে পারে।
 

লক্ষণগুলো কোথায় দেখা দেয়?

অটোনমিক নিউরোপ্যাথির লক্ষণগুলো নির্ভর করে কোন অঙ্গের স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার ওপর। এর প্রভাব সারা শরীরে বিস্তৃত হতে পারে-

◑  হৃদস্পন্দন ও রক্তচাপ: অস্বাভাবিক দ্রুত বা ধীর হৃদস্পন্দন। হঠাৎ দাঁড়ালে মাথা ঘোরা বা রক্তচাপ পড়ে যাওয়া (Orthostatic Hypotension)

◑  হজম প্রক্রিয়া: গ্যাস্ট্রোপেরেসিস (পেট খালি হতে দেরি হওয়া)। বমি, পেট ফাঁপা, কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া

◑  মূত্রাশয় ও কিডনি: মূত্রাশয় খালি করতে সমস্যা। ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন

◑ ঘাম গ্রন্থি: অতিরিক্ত ঘাম বা একেবারেই না ঘামা, শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা। 

◑  যৌন স্বাস্থ্য: পুরুষদের ইরেক্টাইল ডিসফাংশন। নারীদের যৌন উত্তেজনা ও লুব্রিকেশনে সমস্যা। 

◑  চোখ: আলোতে দৃষ্টির সঠিক সমন্বয় করতে না পারা। 

 

ঝুঁকির কারণ:

⇨ দীর্ঘমেয়াদে ডায়াবেটিস

⇨ উচ্চ রক্তচাপ

⇨ ধূমপান ও অ্যালকোহল সেবন

⇨ অপুষ্টি

⇨ দীর্ঘদিন ধরে নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ গ্রহণ
 

যেভাবে নির্ণয় করা হয়- 

অটোনমিক নিউরোপ্যাথি শনাক্ত করা জটিল, কারণ এর লক্ষণগুলো নানা রোগের সাথে মিলে যায়। চিকিৎসকরা সাধারণত—

⇨ হৃদস্পন্দন ও রক্তচাপ পরীক্ষা

⇨ গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ফাংশন টেস্ট

⇨ ব্লাড সুগার কন্ট্রোল

⇨ ইউরিনারি টেস্ট

⇨ স্নায়ুর কন্ডাকশন স্টাডি

- এসবের মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করেন।
 

 

চিকিৎসা ও যত্ন

অটোনমিক নিউরোপ্যাথির স্থায়ী নিরাময় নেই, তবে সঠিক চিকিৎসায় উপসর্গ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

⇨ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: রক্তে শর্করা সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করাই প্রধান উপায়।
 

⇨ ওষুধ: হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ, কোষ্ঠকাঠিন্য, বমি বা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে নির্দিষ্ট ওষুধ ব্যবহার করা হয়।
 

⇨ জীবনযাত্রার পরিবর্তন:
লবণ ও পানি গ্রহণ বাড়ানো (যদি রক্তচাপ কমে যায়), ছোট পরিমাণে বারবার খাবার খাওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম, অ্যালকোহল এড়িয়ে চলা।

⇨ সাপোর্টিভ কেয়ার: মানসিক স্বাস্থ্য যত্ন, ফিজিওথেরাপি ও স্বাস্থ্যকর জীবনধারা রোগীকে দীর্ঘমেয়াদে সাহায্য করে।
 

অটোনমিক নিউরোপ্যাথি এমন একটি ব্যাধি, যা শরীরের অদৃশ্য নিয়ন্ত্রণব্যবস্থাকে নষ্ট করে দেয়। অনেক সময় এর লক্ষণগুলোকে সাধারণ ক্লান্তি, হজমের সমস্যা বা রক্তচাপ ওঠানামা হিসেবে ভুল ধরা হয়। অথচ সঠিক সময়ে শনাক্ত করলে এবং ডায়াবেটিসসহ ঝুঁকির কারণগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখলে এই রোগের অগ্রগতি অনেকটাই থামানো সম্ভব। তাই শরীরের স্বয়ংক্রিয় কার্যক্রমে সামান্য সমস্যা দেখা দিলেও গুরুত্ব দেওয়া জরুরি-কারণ এর পেছনে থাকতে পারে অটোনমিক নিউরোপ্যাথির মতো গুরুতর স্নায়বিক সমস্যা।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ