স্ক্রিনের আড়ালে বদলে যাচ্ছে ক্যারিয়ারের মানে-ইনফ্লুয়েন্সারই কি তবে নতুন যুগের চাকরি?

স্ক্রিনের আড়ালে বদলে যাচ্ছে ক্যারিয়ারের মানে-ইনফ্লুয়েন্সারই  কি তবে নতুন যুগের চাকরি?
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

একটা সময় ছিল, যখন ক্যারিয়ার মানেই ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক বা সরকারি চাকরির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু প্রযুক্তির অগ্রগতিতে আজ ক্যারিয়ার মানে শুধু চাকরি নয় এখন মানুষ নিজেই নিজের ব্র্যান্ড। আর এই নতুন ধারার অন্যতম বড় উপাদান হয়ে উঠেছে ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং। সোশ্যাল মিডিয়া যেমন ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব বা টিকটকের প্ল্যাটফর্মগুলো এখন শুধু বিনোদনের জায়গা নয় এগুলো একেকটা শক্তিশালী বিপণন মাধ্যম। আর এখানেই জন্ম নিচ্ছে নতুন এক পেশা: ডিজিটাল ইনফ্লুয়েন্সার।

কী এই ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং?

ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং মূলত একটি বিপণন কৌশল, যেখানে কোনো ব্যক্তি (ইনফ্লুয়েন্সার) তাঁর অনলাইন অনুসারীদের প্রভাবিত করে একটি নির্দিষ্ট পণ্য বা সেবার প্রচার করেন। তার ফলোয়ারদের সাথে তাঁর এমন এক আস্থা ও সম্পর্ক গড়ে ওঠে, যা অনেক সময় বড় বড় বিজ্ঞাপন থেকেও বেশি কার্যকর হয়।

এই ইনফ্লুয়েন্সাররা হতে পারেন ফ্যাশন ব্লগার, ফুড রিভিউয়ার, গেমার, ট্রাভেল ভ্লগার এমনকি মা-হওয়ার অভিজ্ঞতা শেয়ার করা একজন ঘরোয়া ইউজারও।
 

প্রযুক্তির ভূমিকা-

এই পেশাকে বাস্তবতায় রূপ দেওয়ার পিছনে সবচেয়ে বড় চালিকা শক্তি হলো প্রযুক্তি।

⇨ অ্যাগরিদম ও এনালিটিক্স: সোশ্যাল মিডিয়ার এলগরিদম এখন অত্যন্ত বুদ্ধিমান। এগুলো বুঝতে পারে কার কোন কনটেন্ট ভালো লাগে, কাদের সাথে কাদের ইন্টারঅ্যাকশন বেশি। ফলে ব্র্যান্ডগুলো খুব সহজেই খুঁজে পায় 'সঠিক' ইনফ্লুয়েন্সারকে।

⇨ ডেটা ড্রিভেন মার্কেটিং: ইনফ্লুয়েন্সারদের কাজ কেবল ছবি বা ভিডিও পোস্ট করাই নয়-তাদের কনটেন্ট কতজন দেখছে, কতজন লাইক বা শেয়ার করছে, কতজন লিংক ক্লিক করছে—সবই মাপা যাচ্ছে রিয়েল-টাইমে। এটি ব্র্যান্ডের ROI নির্ধারণে বিশাল ভূমিকা রাখে।

⇨ AI ও অটোমেশন: এখন বিভিন্ন ব্র্যান্ড ইনফ্লুয়েন্সার খোঁজার জন্য AI-ভিত্তিক টুল ব্যবহার করছে। এর ফলে সময় ও খরচ বাঁচছে।
 

ক্যারিয়ারের সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ: 

বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে এই পেশাটি এখন তরুণদের জন্য এক বিশাল সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে-

◑  সৃজনশীলতা ও স্বাধীনতা: আপনি যেভাবে নিজের কনটেন্ট তৈরি করতে চান, সেভাবেই কাজ করতে পারেন। অফিস টাইম নেই, বস নেই।

◑ আয়ের সম্ভাবনা: শুরুতে ছোট ব্র্যান্ড থেকে শুরু করে একসময় বড় কোম্পানিগুলোর সাথে কাজ করার সুযোগ আসে। স্পন্সরশিপ, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, ব্র্যান্ড কোলাব-সব মিলিয়ে এটি হতে পারে পূর্ণাঙ্গ আয়শীল পেশা।

 

তবে চ্যালেঞ্জও কম নয়। যেমন-

⇨ প্রতিনিয়ত কনটেন্ট বানানো ও নতুনত্ব ধরে রাখা।

⇨ অনলাইন সমালোচনা বা 'ট্রল'-এর মোকাবিলা করা।

⇨ সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের নীতিমালা পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানো, মানসিক চাপ ও ফেইমের ভার বহন।
 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী কয়েকশো বিলিয়ন ডলারের বাজার তৈরি করবে। বাংলাদেশেও এর সম্ভাবনা দ্রুত বাড়ছে। শুধুমাত্র 'সেলফি তোলা' বা 'ভিডিও বানানো' নয়-এটা এখন ব্র্যান্ড স্ট্র্যাটেজি, মার্কেটিং কনসাল্টিং, কনটেন্ট ডিজাইন, মনিটাইজেশন সবকিছুর সমন্বয়ে এক পরিপূর্ণ পেশা।

ইনফ্লুয়েন্সার হওয়া মানে কেবল জনপ্রিয়তা অর্জন নয়, বরং এটি একটি পরিকল্পিত, সৃজনশীল এবং প্রযুক্তি-নির্ভর পেশা। আগামী দিনের ক্যারিয়ারে এই ক্ষেত্রটি হতে পারে যুবসমাজের জন্য সবচেয়ে আলোচিত ও কার্যকর দিকগুলোর একটি।

একটি স্মার্টফোন আর সৃষ্টিশীল মস্তিষ্কই আজ হয়ে উঠতে পারে আপনার ক্যারিয়ারের চালিকাশক্তি।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ