ঘুম থেকে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে পড়ুন এই দোয়া-দিন শুরু হবে বরকতময়!

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
মানুষের জীবনে ঘুম এক অনন্য নেয়ামত। প্রতিদিনের পরিশ্রম, মানসিক চাপ ও ক্লান্তির অবসান ঘটে ঘুমের মাধ্যমে। কেবল বিশ্রামই নয়, ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে ঘুম একটি ইবাদতও বটে।
কেননা, মুমিন যদি আল্লাহর হুকুম ও রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নত মোতাবেক দৈনন্দিন কাজ সম্পন্ন করে, তবে সেই কাজ ইবাদতের মর্যাদা পায়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন-
"তোমাদের নিদ্রাকে করেছি ক্লান্তি দূরকারী।" (সুরা নাবা, আয়াত : ০৯)
অতএব, নিদ্রা শুধু শরীরের জন্য বিশ্রাম নয়; বরং এটি আধ্যাত্মিক প্রশান্তিরও মাধ্যম।
শুধু তাই নয়-ইসলামে ঘুমকে এক ধরনের "ছোট মৃত্যু" বলা হয়েছে। আর প্রতিদিন সকালে জেগে ওঠা আসলে এক নতুন জীবনের সূচনা। তাই মুমিনের জন্য ঘুম ভাঙার পরপরই আল্লাহকে স্মরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর যে দোয়া পড়তে হবে, সেটিও ইসলামের এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা।
ঘুম থেকে ওঠার দোয়া-
রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে ঘুম থেকে উঠে আল্লাহর প্রশংসা করতেন এবং এ দোয়া পাঠ করার শিক্ষা দিয়েছেন-
উচ্চারণ : "আলহামদু লিল্লাহিল্লাজি আহইয়ানা বা'দা মা আমাতানা ওয়া ইলাইহিন নুশুর।"
অর্থ : "সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদের মৃত করার পর জীবিত করলেন। আর তাঁর দিকেই হবে পুনরুত্থান।" (বুখারি, হাদিস : ৬৩২৪)
এই দোয়াটি মূলত মানুষকে মনে করিয়ে দেয়, আমরা প্রতিদিন ঘুম থেকে জেগে আসলে পুনরুত্থানের অনুশীলন করছি। মৃত্যু যেমন বাস্তব, তেমনি ঘুম থেকেও জেগে ওঠা আল্লাহর এক বিরাট অনুগ্রহ।
রাতের মাঝখানে জেগে ওঠার বিশেষ দোয়া-
হাদিসে এসেছে, কেউ যদি রাতের ঘুম ভেঙে এই দোয়াটি পাঠ করে-
উচ্চারণ : "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়্যিন ক্বাদীর, আল-হামদু লিল্লাহ, ওয়া সুবহানাল্লাহ, ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ।"
এরপর যদি নিজের জন্য দোয়া করে, আল্লাহ তাআলা সেই দোয়া কবুল করেন। আর অজু করে নামাজ আদায় করলে তার নামাজও কবুল হয়। (বুখারি, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ )
দোয়াটির তাৎপর্য:
১️। কৃতজ্ঞতার প্রকাশ - ঘুম থেকে জেগে ওঠা আসলে জীবনের আরেকটি নতুন সুযোগ। তাই প্রথমেই আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো হয়।
২️। মৃত্যুর স্মরণ - ঘুমকে ইসলাম "ছোট মৃত্যু" হিসেবে অভিহিত করেছে। দোয়াটি আমাদের মৃত্যুর বাস্তবতা মনে করিয়ে দেয়।
৩️। ইবাদতের সূচনা - ঘুম ভাঙার পর দোয়া পাঠ মানে দিনের সূচনা হচ্ছে আল্লাহর জিকির দিয়ে। এতে দিনটি হয় বরকতময়।
বৈজ্ঞানিক দিক থেকে প্রাসঙ্গিকতা:
◑ মনোবিজ্ঞানীরা বলেন-সকালে ইতিবাচক বাক্য উচ্চারণ বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ মানুষের মানসিক চাপ কমায় এবং মনোবল বাড়ায়।
◑ নিউরোসায়েন্স গবেষণা বলছে-ঘুম থেকে ওঠার পর মস্তিষ্কের 'রেটিকুলার অ্যাক্টিভেটিং সিস্টেম' সক্রিয় হয়। এসময় ইতিবাচক চিন্তা বা দোয়া মস্তিষ্ককে সারাদিনের জন্য স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে।
◑ ইসলামের শেখানো দোয়াগুলো আসলে মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য ও আধ্যাত্মিক প্রশান্তির জন্যই অত্যন্ত কার্যকর।
জীবনের শিক্ষা
প্রতিদিনের ঘুম ও জাগরণ কেবল একটি শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া নয়-বরং ঈমানদারের জন্য এটি আত্মশুদ্ধি ও ইবাদতের অংশ। ঘুম থেকে ওঠার পর প্রথম কাজ যদি হয় "আল্লাহর স্মরণ", তবে গোটা দিনই কাটবে ইতিবাচকতা, শান্তি ও বরকতে।
তাই ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে ঘুম থেকে ওঠা মানেই এক নতুন জীবন লাভ। আর সেই জীবনকে বরকতময় করতে রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের শিখিয়েছেন কয়েকটি সহজ অথচ গভীর তাৎপর্যপূর্ণ দোয়া।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।