অষ্টম মহাদেশ কি তবে সত্যিই আছে? সমুদ্রতলে ঘুমিয়ে থাকা জিল্যান্ডিয়ার অদ্ভুত রহস্য

অষ্টম মহাদেশ কি তবে সত্যিই আছে? সমুদ্রতলে ঘুমিয়ে থাকা জিল্যান্ডিয়ার অদ্ভুত রহস্য
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

আমাদের ভৌগোলিক পাঠ্যপুস্তক সবসময় বলেছে-পৃথিবীতে রয়েছে সাতটি মহাদেশ। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা দেখাচ্ছে, আসলে পৃথিবীতে আরও একটি মহাদেশ আছে, যা দীর্ঘকাল ধরে পানির নিচে লুকিয়ে ছিল। এটির নাম 'জিল্যান্ডিয়া' (Zealandia)।

জিল্যান্ডিয়ার অবস্থান মূলত দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে। এর বড় অংশ সমুদ্রের নিচে থাকলেও দৃশ্যমান অংশ হলো নিউজিল্যান্ড, নিউ ক্যালেডোনিয়া এবং আশপাশের কিছু দ্বীপ। ভূতাত্ত্বিকভাবে এটি অন্য মহাদেশগুলোর মতোই—নিজস্ব ভূত্বক, খনিজ সম্পদ ও ভৌগোলিক সীমারেখা রয়েছে।


জিল্যান্ডিয়ার আয়তন প্রায় ৪.৯ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার। তুলনা করলে বলা যায়—এটি ভারতের প্রায় দেড়গুণ, কিংবা অস্ট্রেলিয়ার এক-তৃতীয়াংশ। তবু এটি দৃষ্টিগোচর হয়নি, কারণ এর ৯৪ শতাংশই সমুদ্রের তলায় ঢাকা।

 

বিজ্ঞানীরা মনে করেন, প্রায় ৮ থেকে ৯ কোটি বছর আগে জিল্যান্ডিয়া আলাদা হয়ে যায় সুপারকন্টিনেন্ট গন্ডোয়ানা থেকে। টেকটোনিক প্লেটের সরে যাওয়া, ভূমিকম্প এবং ভূত্বকের পাতলা হয়ে যাওয়ার কারণে ধীরে ধীরে এটি সমুদ্রের নিচে তলিয়ে যায়। ফলে এর বেশিরভাগ অংশ অদৃশ্য হয়ে যায়।


ভূতাত্ত্বিকদের মতে, একটি ভূখণ্ডকে মহাদেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেতে হলে চারটি বৈশিষ্ট্য থাকতে হয়—

উচ্চতা: সমুদ্রতল থেকে উঁচু ভূখণ্ড হতে হবে।

বৈচিত্র্যময় ভূতাত্ত্বিক গঠন: গ্রানাইট শিলা, সেডিমেন্ট এবং খনিজ উপস্থিতি থাকতে হবে।

পুরু ভূত্বক: মহাসাগরের তলার সাধারণ ভূত্বক (৭ কিমি) থেকে অনেক বেশি পুরু হতে হবে (২০-৩০ কিমি)।

স্বতন্ত্র ভৌগোলিক সীমা: অন্যান্য মহাদেশ থেকে আলাদা সীমারেখা থাকতে হবে।

গবেষকরা জানান, জিল্যান্ডিয়া এই চারটি শর্তই পূরণ করে। তাই একে অষ্টম মহাদেশ হিসেবে ধরা হচ্ছে।

জিল্যান্ডিয়ার গবেষণায় পাওয়া গেছে বিভিন্ন খনিজ, প্রাচীন শিলা ও জীবাশ্ম, যা প্রমাণ করছে-এখানে একসময় বন, পর্বত ও প্রাণজগৎ ছিল। এছাড়া এর নিচে মূল্যবান খনিজ সম্পদও থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এটি পৃথিবীর ভূতাত্ত্বিক ইতিহাস বোঝার চাবিকাঠি। মহাদেশের গঠন ও ভাঙনের রহস্য উন্মোচন করে। প্রাচীন জলবায়ু ও জীববৈচিত্র্যের বিবর্তন নিয়ে নতুন ধারণা দেয়। ভবিষ্যতের প্রাকৃতিক সম্পদ অনুসন্ধানে দিকনির্দেশনা দেয়।

একসময় মানচিত্রে অদৃশ্য ছিল জিল্যান্ডিয়া। কিন্তু আজ গবেষণার কল্যাণে পৃথিবীর অষ্টম মহাদেশ হিসেবে এটি ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে উঠছে। বিজ্ঞানীদের মতে, জিল্যান্ডিয়ার আবিষ্কার শুধু একটি ভূগোল নয়, বরং পৃথিবীর অজানা ইতিহাস ও ভবিষ্যতের সম্পদ ভান্ডার উন্মোচনের এক নতুন দিগন্ত।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ