'সবচেয়ে বেশি অক্সিজেন দেয় কোন গাছ?'-বছরের পর বছর ধরে প্রচলিত ভুল ধারণার আসল রহস্য ফাঁস

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
মানবজীবনের জন্য অক্সিজেন হলো এক অনিবার্য উপাদান। কিন্তু শহর-বাংলাদেশ থেকে শুরু করে বিশ্বের শহরাঞ্চলে, মানুষ এখনো ভুল বোঝে-কোন গাছ সবচেয়ে বেশি অক্সিজেন দেয়। প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, পিপাল, নারকেল বা আমগাছের মতো কিছু গাছই সবচেয়ে বেশি অক্সিজেন উৎপন্ন করে। কিন্তু বাস্তবতা একেবারে আলাদা।
গাছ এবং অক্সিজেন উৎপাদনের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা-
গাছ ফটোসিন্থেসিস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সূর্যালোক, জল ও কার্বন ডাই অক্সাইড ব্যবহার করে গ্লুকোজ তৈরি করে এবং অক্সিজেন নিঃসরণ করে। এই প্রক্রিয়ায় মূল ভূমিকা পালন করে পাতার ক্লোরোপ্লাস্ট, যা সূর্যালোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে। কিন্তু প্রতি গাছের অক্সিজেন উৎপাদন নির্ভর করে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের ওপর—
☞ পাতার মোট ক্ষেত্রফল: যত বেশি পাতা, তত বেশি সূর্যরশ্মি শোষণ এবং অক্সিজেন উৎপাদন।
☞ গাছের বৃদ্ধির হার: দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়া গাছ প্রতি বছরের মধ্যে বেশি অক্সিজেন দিতে সক্ষম।
☞ পরিবেশগত অবস্থা: মাটি, জল, তাপমাত্রা ও বাতাসের মানেও পার্থক্য পড়ে।
কোন গাছ বেশি অক্সিজেন উৎপন্ন করে?
গবেষকরা বলেছেন, একটি বড়, ঘন পাতা যুক্ত বর্ষজীবী গাছ, যেমন: বারগদ (Ficus benghalensis), পিপল (Ficus religiosa), আম (Mangifera indica)। এই গাছগুলো শহরে প্রচলিত ছোট বা দ্রুত বিকল্পের তুলনায় বেশি অক্সিজেন উৎপন্ন করতে পারে। তবে, শুধুমাত্র উচ্চতা বা জনপ্রিয়তার ভিত্তিতে গাছকে "সবচেয়ে বেশি অক্সিজেনদায়ী" ধরা সঠিক নয়। বরং পাতার ঘনত্ব, বৃদ্ধির গতি এবং পারিপার্শ্বিক পরিবেশ মিলিয়ে হিসাব করা হয়।
আন্তর্জাতিক গবেষণা ও উদাহরণ-
◑ যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল পার্ক সার্ভিসের একটি গবেষণা দেখিয়েছে, শহরে শীতকালীন বৃক্ষগুলোরও অবদান গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তারা শীতকালে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ এবং অক্সিজেন উৎপাদনে সক্রিয় থাকে।
◑ ইউরোপের বনাঞ্চলে দেখা গেছে, বড় পাইন ও বৃক্ষশৃঙ্খলযুক্ত গাছগুলো ঘন সবুজ পাতা ও দীর্ঘজীবী হওয়ার কারণে প্রতি বছর শহরের তুলনায় বেশি অক্সিজেন প্রদান করে।
◑ ভারত ও বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ শহরে ছোট গাছ যেমন বাঁশ বা সাজ পাইন দ্রুত বৃদ্ধি পেলে, তারা কম জায়গায় অনেক অক্সিজেন উৎপাদন করতে সক্ষম।
ভুল ধারণা কেন সৃষ্টি হয়?
⇨ উচ্চতা দেখেই নির্ধারণ: অনেকেই মনে করে বড় গাছ মানেই বেশি অক্সিজেন। কিন্তু মূল বিষয় পাতার ঘনত্ব।
⇨ জনপ্রিয়তা বা সৌন্দর্য: রাস্তার পাশে যেসব গাছ বেশি দেখা যায়, সেগুলোই বেশি অক্সিজেন দেয় বলে ভুল বোঝা হয়।
⇨ শহরের প্রাসঙ্গিকতা: বনাঞ্চলের তুলনায় শহরের গাছ কম অক্সিজেন উৎপন্ন করে। তাই শহরে দেখা কোনো গাছকে "সবচেয়ে বেশি অক্সিজেনদায়ী" মনে করা ভুল।
শহরে এবং গ্রামে কীভাবে অক্সিজেন বৃদ্ধি সম্ভব?
⇨ এক ধরনের গাছের ওপর নির্ভর না করে বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষায়ন করা।
⇨ ঘন পাতাযুক্ত বড় বৃক্ষ এবং দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়া ছোট বৃক্ষ—দুইয়ের সমন্বয়।
⇨ ছোট ছোট গাছও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তারা স্থানীয় মাটির আর্দ্রতা ও বাতাসের মান উন্নত করে।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ-
⇨ শুধু গাছ লাগানোই যথেষ্ট নয়।
⇨ বন সংরক্ষণ ও শহরের পার্ক-উদ্যান বৃদ্ধি জরুরি।
⇨ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গাছ নির্বাচন করলে প্রতিটি গাছের কার্যকারিতা সর্বাধিক বৃদ্ধি করা সম্ভব।
⇨ একাধিক প্রজাতির সমন্বয়ই স্থায়িত্ব ও পরিবেশগত ভারসাম্য নিশ্চিত করে।
সুতরাং, "সবচেয়ে বেশি অক্সিজেন দেয় একক কোনো গাছ" এটি ভুল। বাস্তবতা হলো, গাছের প্রজাতি, পাতার ঘনত্ব, বৃদ্ধি, এবং পরিবেশের মান মিলিয়ে অক্সিজেন উৎপাদন হয়। ফলে শুধুমাত্র একটি গাছ নয়, বরং বিভিন্ন ধরনের গাছের সমন্বয়ই আমাদের শহর ও গ্রামকে শুদ্ধ অক্সিজেনের উৎসে পরিণত করে।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।