আমলকী সবার জন্য নয়! বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত ভয়াবহ সীমাবদ্ধতা ফাঁস

আমলকী সবার জন্য নয়! বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত ভয়াবহ সীমাবদ্ধতা ফাঁস
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

আমলকী (Indian Gooseberry বা Phyllanthus emblica) ভিটামিন C, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইবার, ফেনলিক যৌগ এবং ট্রিটারপেনয়েড সমৃদ্ধ। এটি ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করা, কোষের ক্ষতি প্রতিরোধ, হজম শক্তি উন্নত করা, এবং লিভার ও ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষা করার জন্য সুপারফুড হিসেবে পরিচিত।

তবে সব বয়সী বা স্বাস্থ্য অবস্থার মানুষই আমলকী ব্যবহার করতে পারেন না। বিজ্ঞানভিত্তিক কিছু কারণ থাকায় বিশেষ গ্রুপকে সাবধান হতে হয়।

১. গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটি সমস্যা থাকা ব্যক্তিরা:

আমলকীতে প্রাকৃতিক অ্যাসিড (অ্যাসকরবিক অ্যাসিড ও ফেনলিক অ্যাসিড) থাকে। যারা গ্যাস্ট্রিক আলসার, রিফ্লাক্স বা অ্যাসিডিটি সমস্যায় ভুগছেন, তাদের অতিরিক্ত আমলকী খেলে পেটের জ্বালা, পেটে ব্যথা ও অ্যাসিডের সমস্যা বাড়তে পারে।

বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, অত্যধিক অ্যাসিডযুক্ত ফলের ফলে পিএইচ মাত্রা নেমে গেলে পেপটিক আলসার বৃদ্ধি পেতে পারে।
 

২. কিডনির সমস্যা বা কিডনিতে পাথর থাকা ব্যক্তিরা: আমলকীতে থাকে অক্সালেট ও ক্যালসিয়াম যৌগ, যা দীর্ঘমেয়াদে কিডনিতে পাথর তৈরির ঝুঁকি বাড়াতে পারে। বিশেষত যারা ক্যালসিয়াম অক্সালেট কিডনিস্টোন সমস্যা ভোগ করছেন, তাদের জন্য সীমিত বা পরিমিত মাত্রা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।

চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুযায়ী, অতিরিক্ত অক্সালেট গ্রহণ কিডনিতে স্ফটিকের সৃষ্টি করতে পারে, যা হাইড্রেশন ও খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ।
 

৩. ব্লাড থিনার বা রক্তপাতজনিত সমস্যা থাকা ব্যক্তিরা: আমলকী ভিটামিন C সমৃদ্ধ। অধিক মাত্রায় এটি ক্লটিং ফ্যাক্টর কার্যক্রমকে প্রভাবিত করতে পারে, বিশেষ করে যাঁরা ওয়ারফারিন বা অন্যান্য anticoagulant নিচ্ছেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, ভিটামিন C রক্ত পাতলা করতে সাহায্য করতে পারে বা ওষুধের কার্যকারিতা পরিবর্তন করতে পারে। তাই ব্লাড থিনার ব্যবহারকারীরা ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া উচ্চ মাত্রায় আমলকী এড়ানো উচিত।
 

৪. গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মা: 

সাধারণত সীমিত পরিমাণে আমলকী গ্রহণ নিরাপদ। কিন্তু অত্যধিক ব্যবহার করলে পেটের অস্বস্তি, হজমের সমস্যা বা ডায়রিয়া হতে পারে। গর্ভবতী মা বা স্তন্যদানকারী মায়েরা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়াই নিরাপদ।
 

৫. ডায়াবেটিস রোগীরা: আমলকীতে প্রাকৃতিক শর্করা থাকে। সীমিত পরিমাণে গ্রহণ সাধারণত নিরাপদ, তবে ডায়াবেটিস রোগীরা ব্লাড সুগারের স্তর পর্যবেক্ষণ করে খাওয়া উচিত।

বৈজ্ঞানিকভাবে দেখা গেছে, আমলকীর পাউডার বা রস রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বাড়তে না দিয়ে ধীরে ধীরে কমাতে সাহায্য করতে পারে, তবে মাত্রা নিয়ন্ত্রণ অপরিহার্য।
 

৬. অন্যান্য সাবধানতা: অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন C সম্পূরক সঙ্গে একসাথে অতিরিক্ত আমলকী খেলে হজমে সমস্যা বা পেটে ব্যথা হতে পারে।

 

ঔষধের সঙ্গে পারস্পরিক প্রভাব:

আমলকী কিছু ঔষধের কার্যকারিতা পরিবর্তন করতে পারে (যেমন: কোলেস্টেরল-কমানোর ঔষধ বা অ্যান্টি-হাইপারটেনসিভ)।

 

সঠিক ব্যবহার পরামর্শ:

⇨ দৈনিক ১–২ টেবিল চামচ আমলকী পাউডার বা ১–২ টুকরা তাজা আমলকী পর্যাপ্ত।

⇨ খাবারের সঙ্গে মেশিয়ে খেলে হজম সহজ হয় এবং অ্যাসিডের প্রভাব কমে।

⇨ রোগী বা শারীরিক সীমাবদ্ধতা থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া বাধ্যতামূলক।


আমলকী সুপারফুড হলেও সব ধরনের স্বাস্থ্য পরিস্থিতিতে নিরাপদ নয়। গ্যাস্ট্রিক, কিডনি, ব্লাড থিনার ব্যবহারকারী, গর্ভবতী মা, ডায়াবেটিস রোগী—এরা সাবধানতা অবলম্বন করবেন।সঠিক মাত্রা এবং চিকিৎসকের পরামর্শেই সুপারফুডের পুরো সুবিধা পাওয়া সম্ভব।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ