সতর্ক না হলে মাতৃত্ব হারানোর ঝুঁকি-পেলভিক ইনফ্লেমেটরি ডিজিজের ভয়ঙ্কর বাস্তবতা

সতর্ক না হলে মাতৃত্ব হারানোর ঝুঁকি-পেলভিক ইনফ্লেমেটরি ডিজিজের ভয়ঙ্কর বাস্তবতা
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে সবচেয়ে আলোচিত সমস্যাগুলোর একটি হলো পেলভিক ইনফ্লেমেটরি ডিজিজ (PID)। জরায়ু, ফ্যালোপিয়ান টিউব এবং ডিম্বাশয়ে ছড়িয়ে পড়া এই সংক্রমণ সাধারণত শুরু হয় যোনি বা সার্ভিক্সে ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ থেকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি যৌনবাহিত সংক্রমণ (STI) বিশেষত ক্ল্যামিডিয়া ও গনোরিয়া থেকে ছড়ায়। কিন্তু সমস্যা হলো রোগটি প্রথম দিকে প্রায় নীরব থাকে, ফলে অনেক নারী বুঝতেই পারেন না তারা ঝুঁকিতে আছেন।

PID হওয়ার প্রধান কারণ- 

⇨ অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক: সুরক্ষা ছাড়া সম্পর্ক স্থাপন।

⇨ একাধিক যৌনসঙ্গী: ঝুঁকি বহুগুণ বাড়ায়।

⇨ STI চিকিৎসা না করা: প্রাথমিক সংক্রমণ উপেক্ষা করলে তা উপকোষ্ঠীতে ছড়িয়ে পড়ে।

⇨ IUD (জরায়ুতে জন্মনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র) বসানোর পর: সংক্রমণের সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে, বিশেষ করে শুরুতে।

 

যেসব লক্ষণে সতর্ক হবেন: PID-এর উপসর্গ হালকা থেকে তীব্র হতে পারে-

⇨ তলপেট ও কোমরে ক্রমাগত বা তীব্র ব্যথা

⇨ দুর্গন্ধযুক্ত বা অস্বাভাবিক স্রাব (হলুদ/সবুজ)

⇨ অনিয়মিত মাসিক বা মাসিকে অস্বাভাবিক রক্তপাত

⇨ জ্বর, ক্লান্তি বা বমি বমি ভাব

⇨যৌন মিলনের সময় বা প্রস্রাবের সময় ব্যথা

মনে রাখবেন: অনেক সময় লক্ষণ একেবারেই থাকে না, অথচ সংক্রমণ ভেতরে ছড়িয়ে পড়তে থাকে।

 

সম্ভাব্য জটিলতা- 

অবহেলায় PID পরিণত হতে পারে ভয়াবহ বিপর্যয়ে-

⇨ বন্ধ্যাত্ব: ফ্যালোপিয়ান টিউব ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে স্থায়ীভাবে গর্ভধারণে অক্ষম করে দিতে পারে।

⇨ একটোপিক প্রেগন্যান্সি: গর্ভ টিউবে স্থাপিত হলে মায়ের জীবন ঝুঁকিতে পড়ে।

⇨ ক্রনিক পেলভিক পেইন: দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা যা জীবনযাত্রার মান নষ্ট করে।

⇨ সিস্টেমিক ইনফেকশন: সংক্রমণ রক্তে ছড়িয়ে পড়লে জীবনহানির আশঙ্কা থাকে।

 

কীভাবে PID নির্ণয় করা হয়?

চিকিৎসকের কাছে গেলে সাধারণত কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করা হয়-

⇨ শারীরিক পরীক্ষা (Pelvic Examination)

যোনি ও সার্ভিক্সের ল্যাব টেস্ট (STI শনাক্ত করতে)

⇨ আল্ট্রাসাউন্ড: জরায়ু ও ফ্যালোপিয়ান টিউবের অবস্থা জানার জন্য

গুরুতর ক্ষেত্রে ল্যাপারোস্কপি করে সংক্রমণ সরাসরি দেখা হয়।

 

চিকিৎসা:

⇨প্রথমেই দেওয়া হয় অ্যান্টিবায়োটিক (কম্বিনেশন থেরাপি)।

⇨ রোগী ও তার যৌনসঙ্গী উভয়ের চিকিৎসা নিতে হয়, নাহলে পুনরায় সংক্রমণ হতে পারে।

⇨ গুরুতর সংক্রমণে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ইনজেকশন অ্যান্টিবায়োটিক বা অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হতে পারে।

 

প্রতিরোধের উপায়:

⇨ অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক এড়িয়ে চলা ও সুরক্ষিত উপায় ব্যবহার।

⇨ একাধিক যৌনসঙ্গী এড়িয়ে চলা।

⇨ যেকোনো অস্বাভাবিক স্রাব বা ব্যথা হলে অবহেলা না করে দ্রুত পরীক্ষা করা।

⇨ IUD বসানোর পর নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।

⇨ নিয়মিত STI স্ক্রিনিং টেস্ট করানো।

 

PID এমন একটি অসুখ যা প্রথমে নিরব থাকে, কিন্তু অবহেলায় নারীর জীবনে এনে দিতে পারে বন্ধ্যাত্ব, দীর্ঘমেয়াদি যন্ত্রণা এমনকি প্রাণহানি। তাই সচেতনতা, সময়মতো পরীক্ষা ও চিকিৎসাই হতে পারে সঠিক প্রতিরোধ।

পেলভিক ইনফ্লেমেটরি ডিজিজ এমন এক অসুখ, যা প্রথমে নীরবে আঘাত করে কিন্তু অবহেলায় ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনে। নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্য রক্ষায় সচেতনতা ও সময়মতো চিকিৎসাই হতে পারে একমাত্র ভরসা।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ