প্রকৃতির অদ্ভুত খেলায় মরুভূমি ঢাকা পড়ল বরফে বিশ্বাস করবেন?

প্রকৃতির অদ্ভুত খেলায় মরুভূমি ঢাকা পড়ল বরফে বিশ্বাস করবেন?
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

পৃথিবীর সবচেয়ে শুষ্ক মরুভূমি হিসেবে পরিচিত চিলির আতাকামা মরুভূমি। এখানে কয়েক মিলিমিটার বৃষ্টিও খুব ব্যতিক্রম। অথচ আশ্চর্যের বিষয় হলো মরুভূমির এই শুষ্কভূমিতেও বছরে কয়েকবার দেখা যায় বরফ। এটি প্রথমে অপ্রাকৃতিক মনে হলেও প্রকৃতির জটিল ভারসাম্যের ফল।

বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা-

১. উচ্চতা ও তাপমাত্রার প্রভাব:

আতাকামা মরুভূমি মূলত উচ্চ অ্যান্ডিজ পর্বতমালার নিচে অবস্থিত। উচ্চতায় তাপমাত্রা নিচে নেমে যায়, বিশেষ করে রাতের বেলা। প্রচলিত তত্ত্ব অনুযায়ী, রাতের তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে নেমে গেলে বায়ুমণ্ডলের সামান্য আর্দ্রতা অবশিষ্ট থাকলেও তা তুষার বা বরফে রূপান্তরিত হয়।

 

২. প্রশান্ত মহাসাগরের ঠান্ডা স্রোত:

হামবোল্ট কারেন্ট নামে পরিচিত এই ঠান্ডা সাগর স্রোত মরুভূমি অঞ্চলের বাতাসকে শীতল রাখে। আর্দ্র বায়ু যখন এই ঠান্ডা বাতাসের সঙ্গে মিশে যায়, তখন কুড়ানো আর্দ্রতা বরফে রূপ নেয়। এটি মরুভূমিতে বরফ পড়ার এক গুরুত্বপূর্ণ কারণ।

 

৩. মরসুমি এবং আবহাওয়ার পরিবর্তন:

শীতকাল (জুন–আগস্ট)-এ সময়ে দক্ষিণ আমেরিকার তাপমাত্রা অনেক কমে যায়।

রাতের সময়ে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে নেমে যায়।

মাঝারি উচ্চতার পাহাড়ী অঞ্চলে বাষ্প ধূসর হয়ে বরফের কণা তৈরি করে।

 

৪. বায়ুপ্রবাহ ও মেঘের মিলন: 

প্রশান্ত মহাসাগর থেকে ভেসে আসা আর্দ্র মেঘ যখন অ্যান্ডিজ পর্বতমালায় আঘাত খায়, তখন তা উপরে উঠে ঠান্ডা হয়। ফলে মেঘে থাকা আর্দ্রতা তুষার বা বরফের কণায় পরিণত হয়, যা পরবর্তীতে মরুভূমিতে নামে।

 

প্রাকৃতিক উদাহরণ ও ঘটনা-

◑ আতাকামা মরুভূমি: ২০১১ সালে ৮০ সেন্টিমিটারের বেশি বরফ জমে প্রায় পুরো মরুভূমি ঢেকে দেয়।

◑ অ্যান্টার্কটিকার শুষ্ক ভ্যালি: পৃথিবীর সবচেয়ে শুষ্ক অ্যান্টার্কটিকাতে বছরে মাঝে মাঝে বরফপাত হয়, যদিও বৃষ্টিপাত নেই।

◑ গোবি মরুভূমি (মঙ্গোলিয়া/চীন): শীতকালে শুষ্ক মরুভূমিতে বরফের পাতায় মাটি ঢেকে যায়, যা জলচক্রের অংশ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ।

 

শুষ্ক মরুভূমিতে বৃষ্টিপাত কম থাকলেও ঠান্ডা আবহাওয়া, পাহাড়ের উচ্চতা, এবং আর্দ্রতা—এই তিনটি মিলিত প্রভাব বরফপাত ঘটায়।

তুষারপাত এই অঞ্চলে ক্ষণস্থায়ী হলেও, পরিবেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি মাটির আর্দ্রতা বজায় রাখে, এবং সামান্য জল সরবরাহ করে যা প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষা করে।

 

আতাকামা মরুভূমির বিস্ময়-

এখানে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত মাত্র ১–১৫ মিলিমিটার। অনেক অঞ্চলে কয়েক বছর ধরে একফোঁটা বৃষ্টিও হয় না। তবুও উচ্চতা, ঠান্ডা সাগর স্রোত ও বিশেষ আবহাওয়ার কারণে বছরে কয়েকবার বরফ পড়ে।

২০১১ সালে আতাকামায় অস্বাভাবিক তুষারপাত হয়েছিল, যেখানে কয়েক দশক পর ৮০ সেন্টিমিটারের বেশি বরফ জমেছিল।

শুষ্ক মরুভূমি মানেই বরফহীন নয়। ভূ-উচ্চতা, শীতল সাগর স্রোত, মরসুমি তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার সংমিশ্রণে বিশ্বের সবচেয়ে শুষ্ক অঞ্চলেও বরফপাত ঘটে। প্রকৃতির এই রহস্য আমাদের শেখায় প্রকৃতি তার নিয়মিত ভারসাম্য বজায় রাখতে সর্বদা প্রস্তুত।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ