গ্রিনহাউস গ্যাস কমানোর নতুন প্রযুক্তি

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
বিশ্ব উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান কারণ হলো গ্রিনহাউস গ্যাস (Greenhouse Gases), বিশেষত কার্বন ডাই–অক্সাইড (CO₂), মিথেন (CH₄) ও নাইট্রাস অক্সাইড (N₂O)। শিল্প, পরিবহন ও কৃষি থেকে নির্গত এসব গ্যাস পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে জমে থেকে তাপ আটকে রাখে, ফলে বাড়ছে গড় তাপমাত্রা, গলছে হিমবাহ এবং বদলে যাচ্ছে আবহাওয়ার ধরণ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করছেন, যা শুধু গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাচ্ছে না, বরং অনেক ক্ষেত্রে সেগুলোকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য সম্পদে রূপান্তর করছে।
১. কার্বন ক্যাপচার অ্যান্ড স্টোরেজ (CCS): এ প্রযুক্তিতে কার্বন ডাই–অক্সাইডকে বিদ্যুৎকেন্দ্র বা শিল্পকারখানার ধোঁয়া থেকে সরাসরি সংগ্রহ করে মাটির নিচে গভীরে সংরক্ষণ করা হয়। ভূগর্ভস্থ শিলা স্তরে এ গ্যাস দীর্ঘ সময় ধরে আটকে রাখা যায়, ফলে তা আর বায়ুমণ্ডলে মিশে যায় না। নরওয়ে, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে এ প্রযুক্তি পরীক্ষামূলকভাবে সফল হয়েছে।
২. ডিরেক্ট এয়ার ক্যাপচার (DAC): সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে এ প্রযুক্তি। এতে বিশাল যন্ত্র বায়ুমণ্ডল থেকে সরাসরি কার্বন ডাই–অক্সাইড শোষণ করে বিশেষ ফিল্টার বা রাসায়নিক দ্রবণে আটকে ফেলে। পরে তা তরল আকারে সংরক্ষণ বা কৃত্রিম জ্বালানি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। আইসল্যান্ডে স্থাপিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় DAC প্ল্যান্ট ইতিমধ্যে বছরে হাজার টন CO₂ বায়ুমণ্ডল থেকে সরাতে সক্ষম হয়েছে।
৩. কৃত্রিম পাতা প্রযুক্তি (Artificial Leaf Technology): গাছপালা যেমন আলোক সংশ্লেষণের মাধ্যমে কার্বন ডাই–অক্সাইড গ্রহণ করে অক্সিজেন উৎপন্ন করে, বিজ্ঞানীরা এখন সেই প্রক্রিয়া কৃত্রিমভাবে তৈরি করছেন। বিশেষ ধাতব যৌগ ও সূর্যালোক ব্যবহার করে এই "কৃত্রিম পাতা" কার্বন ডাই–অক্সাইডকে বিভাজিত করে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারযোগ্য রাসায়নিক তৈরি করে। এটি ভবিষ্যতে পরিচ্ছন্ন জ্বালানির উৎস হিসেবে বিপ্লব ঘটাতে পারে।
৪. বায়োএনার্জি উইথ কার্বন ক্যাপচার (BECCS): এ প্রযুক্তিতে বায়োমাস (যেমন কৃষি অবশিষ্টাংশ বা কাঠ) থেকে শক্তি উৎপাদনের সময় যে CO₂ নির্গত হয়, তা সংগ্রহ করে ভূগর্ভে সংরক্ষণ করা হয়। এর ফলে একদিকে নবায়নযোগ্য শক্তি পাওয়া যায়, অন্যদিকে বায়ুমণ্ডলে কার্বন বাড়ে না।
৫. মিথেন কমানোর প্রযুক্তি: মিথেন হলো CO₂ এর তুলনায় প্রায় ২৫ গুণ বেশি ক্ষতিকর গ্রিনহাউস গ্যাস। পশুপালন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা থেকে নির্গত মিথেন নিয়ন্ত্রণে নতুন প্রযুক্তি এসেছে-
⇨ বিশেষ ফিড অ্যাডিটিভ ব্যবহার করে গবাদি পশুর হজম থেকে মিথেন কমানো।
⇨ ল্যান্ডফিল থেকে মিথেন সংগ্রহ করে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার।
৬. কার্বন-নিউট্রাল নির্মাণ সামগ্রী: সিমেন্ট ও ইস্পাত শিল্প বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি কার্বন নির্গমন করে। গবেষকরা এমন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করছেন, যেখানে বিকল্প উপাদান ব্যবহার করে সিমেন্ট উৎপাদন করা হয় এবং উৎপাদন প্রক্রিয়াতেই CO₂ আটকানো হয়। একইভাবে, "গ্রীন স্টিল" প্রযুক্তিতে কয়লার পরিবর্তে হাইড্রোজেন ব্যবহার করে ইস্পাত তৈরি করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে শিল্পায়ন, যানবাহনের ধোঁয়া এবং ইটভাটার কারণে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন বাড়ছে। তবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, বিশেষ করে সৌরবিদ্যুৎ এবং উন্নত ইটভাটা প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইতোমধ্যে কার্বন নির্গমন হ্রাসে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে উন্নত কার্বন ক্যাপচার প্রযুক্তি ও সবুজ নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা গেলে পরিবেশের জন্য তা বড় অবদান রাখবে।
গ্রিনহাউস গ্যাস কমানো কেবল প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের ওপর নির্ভরশীল নয়, বরং তা কার্যকর করতে প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা, বৈশ্বিক সহযোগিতা এবং সাধারণ মানুষের সচেতনতা। বিজ্ঞানীরা যেসব নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন—তা যদি শিল্প ও সমাজে ব্যাপকভাবে প্রয়োগ করা যায়, তবে জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ প্রভাব অনেকটাই কমানো সম্ভব।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।