ত্বকের আভা, চুলের জেল্লা আর হৃদ্‌যন্ত্রের শক্তি বাড়ানোর উপায় : আমন্ড অয়েলের চমকপ্রদ শক্তি জানুন

ত্বকের আভা, চুলের জেল্লা আর হৃদ্‌যন্ত্রের শক্তি বাড়ানোর উপায় : আমন্ড অয়েলের চমকপ্রদ শক্তি জানুন
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

আমন্ড অয়েল বা বাদামের তেল হাজার বছর ধরে চিকিৎসা, রান্না ও সৌন্দর্যচর্চায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আজকের আধুনিক বিজ্ঞানও প্রমাণ করেছে, এই প্রাকৃতিক তেল শরীরের জন্য বহুমুখী উপকার বয়ে আনে। বিশেষত কোল্ড-প্রেসড আমন্ড অয়েল, যেখানে পুষ্টিগুণ অক্ষুণ্ণ থাকে, সেটি স্বাস্থ্য রক্ষায় সবচেয়ে বেশি কার্যকর।

পুষ্টিগুণ- ১০০ গ্রাম আমন্ড অয়েলে সাধারণত পাওয়া যায়:

☞ মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড (MUFA): প্রায় ৭০% – হৃদ্‌রোগ প্রতিরোধে সহায়ক।

☞ পলি–আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড (PUFA): প্রায় ২০% – কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে।

☞ স্যাচুরেটেড ফ্যাট: ১০% এর নিচে – সীমিত মাত্রায় থাকে।

☞ ভিটামিন ই (Alpha-tocopherol): শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ১০০ গ্রামে প্রায় ২৫ মি.গ্রা।

☞ ভিটামিন কে, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস ও ক্যালসিয়াম: হাড় ও রক্তস্বাস্থ্যে সহায়ক।

☞ ওমেগা–৩ ফ্যাটি অ্যাসিড: প্রদাহ কমায় ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে।
 

স্বাস্থ্য উপকারিতা:

১. ত্বকের যত্নে-

⇨ আর্দ্রতা প্রদান: প্রাকৃতিক ইমোলিয়েন্ট হিসেবে কাজ করে, শুষ্ক ত্বক নরম ও কোমল রাখে।

⇨ বার্ধক্য প্রতিরোধ: ভিটামিন ই ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস ত্বকের কোষে ফ্রি র‍্যাডিকেলের ক্ষতি কমায়, ফলে বলিরেখা ও বয়সের ছাপ ধীরে আসে।

⇨ ক্ষত নিরাময় ও প্রদাহ কমানো: হালকা অ্যান্টি–ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য থাকায় ছোটখাটো ত্বকের প্রদাহে আরাম দেয়।

⇨ ডার্ক সার্কেল ও দাগ হ্রাস: চোখের নিচে নিয়মিত হালকা মালিশে ডার্ক সার্কেল কমতে পারে।
 

২. চুলের যত্নে-

⇨ চুলের গোড়া মজবুত করে: ম্যাগনেসিয়াম ও জিঙ্ক চুল পড়া প্রতিরোধ করে।

⇨ উজ্জ্বলতা ও মসৃণতা আনে: চুলে প্রাকৃতিক আর্দ্রতা ফিরিয়ে দেয়।

⇨ খুশকি কমায়: মাথার ত্বকের শুষ্কতা কমিয়ে খুশকি হ্রাসে সহায়ক।

⇨ চুল ভাঙা প্রতিরোধ: প্রোটিন ও ফ্যাটি অ্যাসিড চুলের কিউটিকলকে মজবুত করে।
 

৩. হৃদ্‌স্বাস্থ্যে-

⇨ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ: MUFA খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমায় এবং ভালো কোলেস্টেরল (HDL) বাড়ায়।
 

⇨ হৃদ্‌রোগ প্রতিরোধ: নিয়মিত ও পরিমিত ব্যবহারে রক্তনালিতে চর্বি জমার ঝুঁকি কমে।
 

⇨ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: ম্যাগনেসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
 

৪. হজমে-

অল্প পরিমাণ আমন্ড অয়েল হজম প্রক্রিয়া সহজ করে। প্রাচীন আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ব্যবহার হতো।

 

৫. হাড় ও মস্তিষ্কের জন্য-

⇨ হাড়ের দৃঢ়তা: ফসফরাস, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন কে হাড় মজবুত রাখে।
 

⇨ স্মৃতিশক্তি ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতা: ভিটামিন ই মস্তিষ্কের কোষ রক্ষা করে এবং বয়সজনিত মানসিক অবক্ষয় প্রতিরোধে সহায়ক।
 

৬. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায়-

অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাট শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, প্রদাহ কমায় এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি হ্রাস করে।

 

ব্যবহার পদ্ধতি:

⇨ ত্বকে: সরাসরি বা ফেস মাস্কে মিশিয়ে ব্যবহার করা যায়।

⇨ চুলে: গোড়া ও মাথার ত্বকে মালিশ করলে ফলাফল ভালো পাওয়া যায়।

⇨ খাদ্য হিসেবে: সালাদ ড্রেসিং বা কম তাপমাত্রায় রান্নায় ব্যবহার করা যায়। (কোল্ড-প্রেসড তেল সবচেয়ে উপযোগী)।
 

সতর্কতা-

⇨ বাদামে অ্যালার্জি থাকলে এ তেল ব্যবহার একেবারেই করা উচিত নয়।

⇨ অতিরিক্ত গ্রহণ করলে ওজন বাড়তে পারে, কারণ এটি উচ্চ–ক্যালোরিযুক্ত (১ টেবিল চামচে প্রায় ১২০ ক্যালোরি)।
 

আমন্ড অয়েল হলো প্রকৃতির এক অনন্য উপহার, যা একইসঙ্গে ত্বক, চুল, হৃদ্‌যন্ত্র, হাড় ও মস্তিষ্কের জন্য উপকারী। তবে এর সঠিক ব্যবহার ও পরিমিত গ্রহণই দিতে পারে সর্বোচ্চ উপকারিতা।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ