কিভাবে জন্ম নিলো পৃথিবীর প্রথম বই,জানুন এর ইতিহাস!!

কিভাবে জন্ম নিলো পৃথিবীর প্রথম বই,জানুন এর ইতিহাস!!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

মানব সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে বইয়ের ইতিহাস গভীরভাবে জড়িত। জ্ঞান সংরক্ষণ, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ধারণা পৌঁছে দেওয়া এবং সভ্যতার বিকাশ এসবের মূল চাবিকাঠি হলো বই। তবে আজকের কাগজে মুদ্রিত বই একদিনে তৈরি হয়নি। কাদা মাটির ফলক থেকে ছাপাখানা প্রতিটি ধাপ অতিক্রম করেই বই আজকের আধুনিক রূপ নিয়েছে।

প্রথম বইয়ের ধারণা: 

বইয়ের ধারণার সূচনা ঘটে প্রাচীন মেসোপটেমিয়ায়। প্রায় ৪,০০০ বছর আগে লেখা 'গিলগামেশের মহাকাব্য' মানব ইতিহাসের প্রাচীনতম সাহিত্যকর্ম হিসেবে বিবেচিত। এটি ছিল সুমেরীয় ও আক্কাদীয় লিপিতে খোদাই করা কিউনিফর্ম লিপি সম্বলিত কাদা মাটির ফলক।
এই মহাকাব্য রাজা গিলগামেশ ও তার বন্ধু এঙ্কিদুর গল্পের মধ্য দিয়ে বন্ধুত্ব, মৃত্যু, অমরত্ব ও মানুষের সীমাবদ্ধতাকে তুলে ধরে। সাহিত্য, দর্শন ও ইতিহাসের মিশেলে এটি মানব সভ্যতার প্রথম সাহিত্যিক সম্পদ হিসেবে স্বীকৃত।
 

লিপির আবিষ্কার ও লিখন পদ্ধতির বিবর্তন: বইয়ের আগে ছিল লিপি। 

⇨ সুমেরীয় কিউনিফর্ম (প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ৩২০০): কাদা ফলকে খোদাই করা প্রতীক ছিল প্রথম লিখন পদ্ধতি।

⇨ মিসরীয় হায়ারোগ্লিফ: চিত্রভাষা ব্যবহার করে তৈরি হতো ধর্মীয় ও প্রশাসনিক নথি।

⇨ প্যাপিরাস (মিসর, খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০): নীলনদের তীরের উদ্ভিদ থেকে তৈরি পাতলা শীটে লেখা হতো, যা বহনযোগ্য ও সংরক্ষণযোগ্য ছিল।

⇨ পার্চমেন্ট (খ্রিস্টপূর্ব ২০০ খ্রিস্টাব্দে প্রচলিত): পশুর চামড়া থেকে তৈরি টেকসই পাতার ওপর লেখা হতো, যা গ্রন্থ সংরক্ষণকে দীর্ঘস্থায়ী করে তোলে।
 

এগুলো থেকেই জন্ম নেয় হাতে লেখা পুঁথি—যেখানে ধর্মীয় গ্রন্থ, চিকিৎসা, জ্যোতির্বিজ্ঞান ও দর্শনের জ্ঞান সংরক্ষিত হতো।

 

ছাপার আবিষ্কার, নতুন যুগের সূচনা:

হাতে লেখা বই ছিল সময়সাপেক্ষ, ব্যয়বহুল এবং সীমিত সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছাত। এ অবস্থায় বইয়ের ইতিহাসে এক বিপ্লব ঘটে ছাপাখানার আবিষ্কারের মাধ্যমে।

⇨ চীন (খ্রিস্টাব্দ ৮৬৮): বিশ্বের প্রাচীনতম মুদ্রিত বই হলো 'ডায়মন্ড সূত্র' (হীরা সূত্র)। এটি কাঠখোদাই ছাপা প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রকাশিত বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ।

⇨ কোরিয়া: ১৩৭৭ সালে ধাতব অক্ষর ব্যবহার করে ছাপানো হয় 'জিকজি' নামের একটি বৌদ্ধ গ্রন্থ। এটিকে বিশ্বের প্রথম মুভেবল টাইপ মুদ্রিত বই হিসেবে ধরা হয়।

 

ইউরোপে বইয়ের বিপ্লব:  ১৫শ শতাব্দীতে জার্মানির জোহানেস গুটেনবার্গ তৈরি করেন মুভেবল টাইপ প্রিন্টিং প্রেস। এটি বইয়ের ইতিহাসে যুগান্তকারী আবিষ্কার। তার তৈরি করা গুটেনবার্গ বাইবেল (১৪৫৫ খ্রিস্টাব্দ) ইউরোপের প্রথম দিকের মুদ্রিত বই। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে বই দ্রুত ছাপা সম্ভব হয় এবং খরচও কমে যায়। এর ফলে—

☞ জ্ঞান গণমানুষের কাছে পৌঁছে যায়।

☞ বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিক চিন্তার বিস্তার ঘটে।

☞ শিক্ষা ও সাক্ষরতার হার বাড়ে।

☞ ইউরোপে রেনেসাঁস আন্দোলন গড়ে ওঠে।
 

বইয়ের ধারণার ধারাবাহিক বিবর্তন-

☞ কাদা মাটির ফলক (গিলগামেশ) → টেকসই, তবে ভারী ও অস্বস্তিকর।

☞ প্যাপিরাস স্ক্রোল (মিসর) → বহনযোগ্য হলেও নাজুক।

☞ পার্চমেন্ট ও হাতে লেখা পুঁথি → দীর্ঘস্থায়ী, ধর্মীয় গ্রন্থে ব্যবহৃত।

☞ কাঠখোদাই ছাপা (চীন) → একরকম বই একাধিকবার তৈরি সম্ভব।

☞ মুভেবল টাইপ প্রিন্টিং (গুটেনবার্গ) → বই গণউৎপাদনের সূচনা।

☞ আধুনিক ছাপা বই → শিল্পবিপ্লবের পর থেকে দ্রুত বিশ্বব্যাপী বিস্তার।

☞ ডিজিটাল বই ও ই-বুক → ২১শ শতাব্দীতে জ্ঞান মুহূর্তেই সবার কাছে পৌঁছে যাচ্ছে।
 

মানুষের জ্ঞান সংরক্ষণের পথচলা শুরু হয়েছিল কাদা ফলকে খোদাই করা প্রতীক থেকে। 'গিলগামেশের মহাকাব্য' সেই ইতিহাসের প্রাচীনতম সাক্ষ্য, আর গুটেনবার্গ বাইবেল মানব সভ্যতাকে বইয়ের মাধ্যমে নতুন যুগে প্রবেশ করিয়েছে। আজকের ডিজিটাল যুগে বই শুধু কাগজে সীমাবদ্ধ নয়, বরং ই-বুক ও অনলাইন আর্কাইভে ছড়িয়ে পড়েছে পুরো পৃথিবী জুড়ে।

অতএব, বই কেবল লেখা নয়-এটি মানব সভ্যতার বিবর্তনের অন্যতম জীবন্ত দলিল।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ