গাছের চুপচাপ নয়, বিজ্ঞানী বলছে তারা চিৎকার করে!

গাছের চুপচাপ নয়, বিজ্ঞানী বলছে তারা চিৎকার করে!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

গাছ মানব সভ্যতার সঙ্গে প্রাচীনকাল থেকে অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত। তারা আমাদের অক্সিজেন দেয়, খাদ্য সরবরাহ করে, আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ করে এবং মানসিক প্রশান্তি দেয়। তবে যখন কেউ গাছ কেটে ফেলে, অনেকেই মনে করেন গাছ "কাঁদছে" বা কষ্ট পাচ্ছে। বৈজ্ঞানিক গবেষণা দেখিয়েছে, এই অনুভূতি মানুষের মানসিক ও আবেগিক প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত, কিন্তু বাস্তবে গাছ মানুষের মতো ব্যথা অনুভব করতে পারে না। তবুও গাছ অতিস্বনক (ultrasonic) শব্দ উৎপন্ন করে যা মানুষের কানের বাইরে এবং প্রাকৃতিকভাবে "চিৎকার" বা "কান্না" হিসাবে ব্যাখ্যা করা হয়।

গাছ কেন শব্দ উৎপন্ন করে?

গাছের ভেতরে জল পরিবহন করার জন্য জাইলেম (xylem) নামক নালী থাকে। যখন গাছের কাণ্ড বা শিকড় ক্ষতিগ্রস্ত হয়, অথবা জল সরবরাহ কম হয়, তখন এই নালিতে বুদবুদ তৈরি হয় (cavitation)। বুদবুদ ফেটে গেলে ছোট ছোট ultrasonic ক্লিক বা পপিং শব্দ তৈরি হয়। বৈজ্ঞানিকভাবে এটি ব্যাখ্যা করা যায়:

⇨ কাটা বা ক্ষতি: শারীরিক চাপ বা কাটার সময় গাছ বেশি শব্দ উৎপন্ন করে।

⇨ জলের অভাব: তৃষ্ণার্ত গাছের জাইলেমে জলপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হলে cavitation বৃদ্ধি পায়, ফলে শব্দের মাত্রা বেড়ে যায়।

⇨ অতিরিক্ত জল: কখনও কখনও অতিরিক্ত জল বা শিশিরের কারণে ট্রান্সপিরেশন (transpiration) বাড়লে গাছের নালীতে চাপ সৃষ্টি হয়, যা শব্দের সৃষ্টি করে।
 

এই শব্দগুলো মানুষের শ্রবণসীমার বাইরে থাকে (২০ কিলোহার্টজের বেশি), তাই আমরা সেগুলো শুনতে পাই না।
 

গাছ ব্যথা অনুভব করে না-

গাছের কোনো স্নায়ুতন্ত্র বা মস্তিষ্ক নেই, তাই মানুষের মতো ব্যথা বা যন্ত্রণা অনুভব করা সম্ভব নয়। গাছের প্রতিক্রিয়া হচ্ছে শারীরিক ও রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে-

ক্ষতির সময় গাছ ভোলাটাইল অর্গানিক কম্পাউন্ডস (VOC) নিঃসরণ করে। এই রাসায়নিক সংকেত আশেপাশের গাছকে সতর্ক করে, যাতে তারা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করতে পারে।
 

উদাহরণ: কিছু গাছ ক্ষতির পর পুস্তক বা তেল নিঃসরণ করে যা ক্ষতিকর প্রাণী বা জীবাণুকে দূরে রাখে।

 

বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফলাফল-

জাপান এবং জার্মানিতে করা গবেষণা দেখিয়েছে, কাটার চাপের সময়ে গাছের ভেতর থেকে অতিস্বনক শব্দ পাওয়া যায়। vম্যাক্রোফোন এবং আল্ট্রাসোনিক ডিটেক্টর ব্যবহার করে এই শব্দ শনাক্ত করা সম্ভব।vশব্দের ধরন এবং ফ্রিকোয়েন্সি গাছের স্বাস্থ্যের একটি সূচক হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
গবেষকরা মনে করেন, এটি কৃষিক্ষেত্রে গাছের জলস্তর ও স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণে নতুন প্রযুক্তি হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
 

গাছের সঙ্গে মানুষের আবেগিক সম্পর্ক- 

মানুষ দীর্ঘদিনের পরিচিত গাছকে কাটতে দেখলে মানসিক কষ্ট অনুভব করে। এতে বিভিন্ন কারণে উদ্ভূত আবেগ প্রকাশ পায়:

⇨ নীরব কান্নার প্রতীক: অতিস্বনক শব্দ মানুষের চোখে দৃশ্যমান না হলেও, তারা প্রাকৃতিকভাবে কষ্টকে মানবিক রূপে ব্যাখ্যা করে।

⇨ মানসিক সংযোগ: বহু সংস্কৃতিতে গাছকে জীবনের অংশ হিসেবে দেখা হয়। গাছ কাটা মানে সম্পর্কের ক্ষতি—যা মানসিকভাবে কষ্ট দেয়।

⇨ সামাজিক ও নৈতিক অনুভূতি: গাছের প্রতি যত্ন বা সংরক্ষণের সংস্কৃতি মানুষের মনে প্রতিফলিত হয়।
 

ব্যবহারিক প্রয়োগ-

গাছের অতিস্বনক "চিৎকার" এবং রাসায়নিক সংকেত বোঝার মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে অনেক সুবিধা অর্জন করা সম্ভব:

⇨ জলসেচের নিরীক্ষণ: কোন গাছ তৃষ্ণার্ত বা পানির অভাবে চাপের মধ্যে আছে তা শনাক্ত করা।

⇨ স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ: গাছের স্বাস্থ্য এবং রোগ-সংক্রমণের আগাম সংকেত পাওয়া।

⇨ শিক্ষা ও গবেষণা: উদ্ভিদ জীববিজ্ঞান এবং পরিবেশ বিজ্ঞানে নতুন ধারণা উদ্ভাবনে সহায়ক।
 

গাছ কাঁদে না, কিন্তু অতিস্বনক শব্দ এবং রাসায়নিক সংকেতের মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া দেখায়। এই বৈজ্ঞানিক তথ্য প্রমাণ করে যে, গাছের সঙ্গে মানুষের আবেগিক অনুভূতি এবং প্রকৃতির শারীরিক প্রতিক্রিয়ার মধ্যে একটি সূক্ষ্ম পার্থক্য রয়েছে।

মানবসভ্যতা এবং পরিবেশবিদ্যা হিসেবে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার, যা কেবল গাছের "শ্রবণযোগ্য প্রতিক্রিয়া" নয়, বরং কৃষি ও পরিবেশ সংরক্ষণে বাস্তব ব্যবহারযোগ্য প্রযুক্তির সূচনা।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ