মানুষ কেন খারাপ খবরে বেশি প্রতিক্রিয়া দেখায়! - মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
আমরা প্রায়শই লক্ষ্য করি, দুঃসংবাদ পেলে আমাদের শারীরিক ও মানসিক প্রতিক্রিয়া অত্যন্ত তীব্র হয়, যেখানে সুসংবাদে প্রতিক্রিয়া তুলনামূলকভাবে ধীর ও শান্ত থাকে। এটি শুধুই আবেগের বিষয় নয় এটি মানব মস্তিষ্কের প্রাকৃতিক সুরক্ষা ও মানসিক প্রক্রিয়ার ফল। মনস্তাত্ত্বিক গবেষণা বলছে, মানুষের মস্তিষ্ক বিপদ বা হুমকির প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল। দুঃসংবাদ প্রায়শই বিপদ বা হুমকির সঙ্গে যুক্ত থাকে, আর সুসংবাদ সাধারণত নিরাপদ ও আনন্দদায়ক অনুভূতির সঙ্গে যুক্ত।
দুঃসংবাদে দ্রুত ও তীব্র প্রতিক্রিয়ার কারণ মস্তিষ্কের "ফাইট অর ফ্লাইট" প্রতিক্রিয়া সক্রিয় হওয়া। যখন আমরা দুঃসংবাদ পাই, আমাদের অ্যামিগডালা নামক মস্তিষ্কের অংশ সক্রিয় হয়ে যায়। এটি শরীরকে বিপদ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত করে। অ্যাড্রেনালিন নিঃসৃত হয়, হার্টবিট বাড়ে এবং রক্তচাপ সাময়িকভাবে বৃদ্ধি পায়। এটি আমাদেরকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে এবং অবিলম্বে কাজ করার জন্য প্রস্তুত করে।
⇨ নেতিবাচক আবেগের প্রভাব:
দুঃসংবাদ ভয়, দুঃখ, উদ্বেগ বা হতাশা উদ্রেক করে। এই আবেগ শারীরিক ও মানসিক শক্তি বাড়ায়। উদাহরণস্বরূপ, হঠাৎ খারাপ খবর পেলে আমরা রাগ, আতঙ্ক বা তীব্র চিন্তায় প্রতিক্রিয়া দেখাই। এটি আমাদের শরীরকে সক্রিয় করে এবং পরিস্থিতি মোকাবিলার প্রস্তুতি দেয়।
⇨ নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতি:
দুঃসংবাদ প্রায়শই আমাদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করে। মস্তিষ্ক তখন বিপদের সম্ভাব্য উৎস শনাক্ত করে, পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে এবং স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সতর্ক এবং প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে ওঠে।
⇨ পরিস্থিতি সামলানোর প্রয়োজনীয়তা:
নেতিবাচক সংবাদ আমাদেরকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সক্রিয় করে, যাতে আমরা সমস্যার সমাধান বা বিপদ এড়ানোর জন্য দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারি।
সুসংবাদে কম প্রতিক্রিয়ার কারণ-
⇨নিরাপদ ও আরামদায়ক অনুভূতি:
সুসংবাদ সাধারণত আনন্দ, স্বস্তি বা সন্তুষ্টি তৈরি করে। এটি আমাদের মস্তিষ্ককে শান্ত রাখে এবং "ফাইট অর ফ্লাইট" প্রতিক্রিয়া সক্রিয় করে না।
⇨ কম মানসিক চাপ:
ইতিবাচক সংবাদ আমাদের মস্তিষ্কে কম চাপ সৃষ্টি করে। তাই তীব্র বা দ্রুত প্রতিক্রিয়ার প্রয়োজন হয় না। উদাহরণস্বরূপ, একটি ভাল ফলাফল পাওয়া বা প্রিয়জনের প্রশংসা শিশুর বা প্রাপ্তবয়স্কের মস্তিষ্কে শান্তি দেয়, যা কার্যকরভাবে "অ্যাকশন" কমায়।
⇨ সামান্য শক্তি খরচ:
সুসংবাদে শরীরের অ্যাড্রেনালিন, হার্টবিট বা রক্তচাপের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি ঘটে না। তাই প্রতিক্রিয়ার তীব্রতা কম থাকে।
মস্তিষ্ক ও মানসিক প্রক্রিয়ার ব্যাখ্যা-
⇨ অ্যামিগডালা: মস্তিষ্কের এই অংশ নেতিবাচক অভিজ্ঞতার প্রতি সংবেদনশীল এবং তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জাগায়।
⇨ কর্সটিসল নিঃসরণ: দুঃসংবাদ মানে স্ট্রেস হরমোন কর্টিসলের বৃদ্ধি, যা শরীরকে বিপদ মোকাবিলার জন্য সক্রিয় করে।
⇨ডোপামিন ও সুখ: সুসংবাদ আনন্দ ও স্বস্তি দেয়, যা ডোপামিন নিঃসরণ বাড়ায় কিন্তু তা "ফাইট অর ফ্লাইট" প্রতিক্রিয়া জাগায় না।
বাস্তব জীবনে,
⇨দুঃসংবাদে: কোনও দুর্ঘটনার খবর, খারাপ পরীক্ষার ফল বা স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যা আমাদের সঙ্গে সঙ্গে উদ্বিগ্ন ও সতর্ক করে। আমরা দ্রুত ফোন করি, সহায়তা চাই বা অবিলম্বে ব্যবস্থা নিই।
⇨ সুসংবাদে: একটি পদোন্নতি, ভাল ফলাফল বা জন্মদিনের শুভেচ্ছা পাওয়া আমাদের আনন্দ দেয়, কিন্তু আমরা তত দ্রুত বা তীব্রভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাই না।
যেভাবে প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করা যায়:
⇨ মাইন্ডফুলনেস ও ধ্যান: দুঃসংবাদে শিথিল থাকতে এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
⇨ শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ: ধীর ও গভীর শ্বাস নেওয়া হার্টরেট ও মানসিক চাপ কমায়।
⇨ অবসরের প্রক্রিয়া: তথ্য শোনার পরে কিছু সময় বিরতি নিলে, মস্তিষ্ক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে শান্ত প্রতিক্রিয়া দেখাতে সক্ষম হয়।
⇨ সচেতন মূল্যায়ন: পরিস্থিতিকে যৌক্তিকভাবে বিশ্লেষণ করলে নেতিবাচক আবেগে অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া কমানো যায়।
দুঃসংবাদে মানুষ দ্রুত ও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখায়, কারণ মস্তিষ্ক বিপদ শনাক্ত করে তা মোকাবিলার জন্য "ফাইট অর ফ্লাইট" প্রতিক্রিয়া জাগায়। সুসংবাদে প্রতিক্রিয়া ধীর ও শান্ত থাকে, কারণ এটি নিরাপত্তা ও আরামদায়কতা জাগায়। এই মনস্তাত্ত্বিক প্রক্রিয়া আমাদের বেঁচে থাকার ক্ষমতা, মানসিক স্থিতিশীলতা এবং পরিস্থিতি মোকাবিলার দক্ষতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।