দূর্গন্ধপূর্ণ নাত্তো, তবু জাপানের প্রিয় সুপারফুড-কারণ জানলে অবাক হবেন!

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
জাপানের প্রথাগত খাবারের তালিকায় একটি বিশেষ অবস্থান দখল করে আছে নাত্তো-গাঁজন করা সয়াবিন যা তার আঠালো, চটচটে ও টানটান টেক্সচার এবং শক্তিশালী গন্ধ সত্ত্বেও জাপানিদের প্রিয়। প্রাথমিক দেখায় কিছু মানুষের কাছে এর গন্ধ "অস্বাভাবিক" বা "অমোনিয়ার মতো" মনে হতে পারে, কিন্তু এটি স্বাস্থ্য ও সুস্থতার জন্য একটি অসাধারণ উপাদান।
নাত্তো কী এবং কিভাবে তৈরি হয়?
নাত্তো তৈরি হয় সয়াবিন এবং Bacillus subtilis ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে, যা সয়াবিনকে প্রাকৃতিকভাবে গাঁজন করে। এই প্রক্রিয়াটি নান্দনিকভাবে এবং বৈজ্ঞানিকভাবে জাপানিদের পছন্দের খাবার হিসেবে গড়ে তুলেছে।
প্রসেসের ধাপগুলো:
⇨ সয়াবিন ধোয়া ও ভেজানো:
সয়াবিন সারারাত জলে ভিজিয়ে রাখা হয়, যাতে তা নরম হয় এবং গাঁজন প্রক্রিয়ার জন্য প্রস্তুত হয়।
⇨ সিদ্ধ করা:
ভেজানো সয়াবিন নরম না হওয়া পর্যন্ত সিদ্ধ করা হয়।
⇨ গাঁজন (Fermentation):
সিদ্ধ সয়াবিনের সঙ্গে নাত্তো স্টার্টার (Bacillus subtilis) মিশিয়ে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় প্রায় ২৪ ঘণ্টা রাখা হয়। এই সময়ে ব্যাকটেরিয়াগুলি সক্রিয় হয়ে সয়াবিনকে আঠালো ও টানটান ভাব দেয়।
⇨ ঠান্ডা ও পরিপক্ক করা:
গাঁজন শেষ হলে নাত্তোকে ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করা হয়, যা তার স্বাদ ও স্বাস্থ্যগত উপকারিতাকে আরও বৃদ্ধি করে।
নাত্তোর বৈশিষ্ট্য
⇨ টেক্সচার: আঠালো, চটচটে ও টানটান, যা প্রথমবার খেলে অনেকের কাছে অদ্ভুত মনে হতে পারে।
⇨ গন্ধ: নিজস্ব, কিছুটা অ্যামোনিয়ার মতো গন্ধ থাকে।
স্বাস্থ্য উপকারিতা:
⇨ প্রোটিন ও আয়রন: পেশী গঠন ও শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
⇨ ভিটামিন K: হাড়ের স্বাস্থ্য ও রক্ত সঞ্চালনের জন্য অপরিহার্য।
⇨ প্রোবায়োটিকস: হজমশক্তি বৃদ্ধি ও অন্ত্রের সুস্থতা বজায় রাখে।
⇨ ডায়েটারি ফাইবার: কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে ও সুস্থ অন্ত্রের জন্য সহায়ক।
নাত্তো খাওয়ার উপায়-
⇨ ভাতের সঙ্গে: সরিষার সস, সয়া সস এবং কখনও কখনও ছোট সবজি মিশিয়ে খাওয়া হয়।
⇨ অমলেট বা অন্যান্য খাবারে: নাত্তোকে বিভিন্ন জাপানি ও আধুনিক খাবারে যোগ করা যায়।
⇨ সারাদিনের পুষ্টি: সকালের নাস্তা বা দুপুরের খাবারের সঙ্গে এটি খেলে দীর্ঘ সময় ধরে শক্তি বজায় থাকে।
কেন জাপানিরা পছন্দ করে নাত্তো?
☞ স্বাস্থ্য সচেতনতা: জাপানি খাদ্যাভ্যাসে স্বাস্থ্যকর ও প্রাকৃতিক খাবারের ওপর জোর থাকে। নাত্তো হজম, হাড়ের স্বাস্থ্য ও হৃদয় সুস্থ রাখতে সহায়ক।
☞ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি: প্রায় শতাব্দীর পুরনো ঐতিহ্য বহন করে নাত্তো। এটি পরিবারের প্রতিদিনের খাবারে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে।
☞ প্রোবায়োটিকসের গুরুত্ব: নাত্তোর প্রোবায়োটিক্স অন্ত্রের জীবাণু ভারসাম্য বজায় রাখে, যা জাপানি মানুষের দীর্ঘায়ু ও সুস্থতার সঙ্গে সম্পর্কিত।
যদিও নাত্তোর গন্ধ ও টেক্সচার প্রথমবারের জন্য চ্যালেঞ্জিং মনে হতে পারে, তবে এটি একটি পুষ্টিকর, প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ এবং হজম-সুস্থতার জন্য উপকারী খাবার। জাপানি সংস্কৃতিতে নাত্তো কেবল খাবার নয়, বরং স্বাস্থ্য, ঐতিহ্য এবং দৈনন্দিন জীবনের অংশ। নাত্তো প্রমাণ করে, কখনও কখনও দূর্গন্ধ আর অদ্ভুত টেক্সচারও স্বাস্থ্য ও সুস্থতার জন্য আশীর্বাদ হতে পারে।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।