অন্ধত্বের অবসান!! বায়োনিক চোখ ফিরিয়ে দিচ্ছে নতুন দৃষ্টি

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
প্রতিবছর কোটি মানুষ বিভিন্ন চোখের সমস্যার কারণে দৃষ্টিশক্তি হারান। জন্মগত সমস্যা, রেটিনার ক্ষতি, ডায়াবেটিস বা অন্যান্য চোখের রোগে অন্ধত্ব তৈরি হয়। এই মানুষদের জন্য বায়োনিক চোখ (Bionic Eye) একটি বৈপ্লবিক প্রযুক্তি হিসেবে উদ্ভাবিত হয়েছে। এটি মানুষের চোখে সরাসরি ইলেকট্রনিক ইমপ্লান্ট স্থাপন করে, যা আলো সংগ্রহ করে এবং মস্তিষ্কে প্রেরণ করে। ফলে ব্যবহারকারীকে মৌলিক দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেয়া সম্ভব হয়।
বায়োনিক চোখ যেভাবে কাজ করে-
১) পরিবেশ থেকে আলো সংগ্রহ: চোখের সামনে একটি ক্ষুদ্র ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। ক্যামেরা চারপাশের আলো ও আকৃতি সংগ্রহ করে। এটি মানুষের চোখের মতো সংবেদনশীল না হলেও, মৌলিক তথ্য সংগ্রহ করতে সক্ষম।
২) ইলেকট্রনিক সংকেতে রূপান্তর: ক্যামেরা থেকে সংগৃহীত তথ্য একটি প্রসেসরের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক সংকেতে রূপান্তরিত হয়। এই সংকেত রেটিনাল ইমপ্লান্টের ইলেকট্রোডগুলোকে উদ্দীপ্ত করে।
৩) মস্তিষ্কে সংকেত প্রেরণ: ইলেকট্রোড চোখের রেটিনায় উদ্দীপ্ত হয় এবং অপটিক স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কের ভিজ্যুয়াল কর্টেক্সে সংকেত পাঠানো হয়। মস্তিষ্ক এই সংকেতগুলোকে ছবি বা আকৃতি হিসেবে ব্যাখ্যা করে।
৪) ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা: ব্যবহারকারী প্রাথমিকভাবে আলো, ছায়া এবং মৌলিক আকৃতি শনাক্ত করতে সক্ষম। সময়ের সঙ্গে ধীরে ধীরে চলাফেরার স্বাধীনতা ও চারপাশের পরিবেশ বোঝার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
বায়োনিক চোখের উপকারিতা-
◑ প্রাথমিক দৃষ্টিশক্তি পুনরুদ্ধার: যারা মারাত্মক রেটিনার ক্ষতি বা জন্মগত অন্ধত্বে ভুগছেন, তারা আলো ও আকৃতি শনাক্ত করতে পারেন।
◑ স্বাধীনতা বৃদ্ধি: চলাফেরা, বসার জায়গা চিহ্নিত করা, দরজা ও আসবাবপত্র সনাক্ত করা সহজ হয়।
◑ মানসিক প্রভাব: দৃষ্টিশক্তি হারানোর কারণে যে মানসিক চাপ, হতাশা বা সামাজিক বিচ্ছিন্নতা দেখা দিতে পারে, তা কিছুটা হ্রাস পায়।
◑ সামাজিক সংযোগ: চারপাশের মানুষ ও পরিবেশ সম্পর্কে মৌলিক বোঝাপড়া থাকায় সামাজিক সংযোগ সহজ হয়।
সীমাবদ্ধতা ও চ্যালেঞ্জ-
⇨ সম্পূর্ণ দৃষ্টিশক্তি নয়: বায়োনিক চোখ মূলত আলো ও মৌলিক আকৃতি চিনতে সাহায্য করে; রঙ বা সূক্ষ্ম বিশদ চিহ্নিত করতে সক্ষম নয়।
⇨ ব্যয়বহুল প্রযুক্তি: প্রতিটি ইমপ্লান্ট এবং অস্ত্রোপচার অনেক ব্যয়বহুল।
⇨ প্রশিক্ষণ ও অভিযোজন: ব্যবহারকারীদের মস্তিষ্ককে সংকেত ব্যাখ্যা করতে শেখানোর জন্য দীর্ঘ প্রশিক্ষণ প্রয়োজন।
⇨ শল্যচিকিৎসার ঝুঁকি: অস্ত্রোপচার সংক্রান্ত সাধারণ ঝুঁকি যেমন সংক্রমণ, স্থায়ী ক্ষতি ইত্যাদি থাকতে পারে।
বাস্তব জীবন অভিজ্ঞতা-
এক জন ব্যবহারকারী প্রথম দিকে প্রাথমিকভাবে আলো ও বড় আকৃতি চিনতে পারতেন, যেমন টেবিল, চেয়ার বা দরজা। সময়ের সঙ্গে ধীরে ধীরে চলাফেরা সহজ হয়, লাইট অন ও অফ করা বা বাধা সনাক্ত করতে সক্ষম হন। মানসিকভাবে আত্মনির্ভরতা বৃদ্ধি পায়, যা আগে সম্ভব হত না।
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় 70% ব্যবহারকারী তাদের দৈনন্দিন কাজ যেমন ঘরের মধ্যে চলাফেরা, দরজা সনাক্তকরণ এবং বড় বস্তুর অবস্থান শনাক্তকরণে সাহায্য পেয়েছেন।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা-
⇨ উন্নত রেজোলিউশন ও দৃষ্টিশক্তি: গবেষকরা উন্নত ইলেকট্রোড এবং উন্নত প্রসেসরের মাধ্যমে চিত্রের সূক্ষ্মতা বৃদ্ধি করার চেষ্টা করছেন।
⇨ রঙ ও গভীরতা সনাক্তকরণ: ভবিষ্যতে ব্যবহারকারীরা রঙ ও গভীরতা চেনার ক্ষমতা পেতে পারেন।
⇨ কম খরচে বিস্তৃত ব্যবহার: প্রযুক্তি আরও সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য করার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী অন্ধ মানুষের জন্য দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
⇨ স্মার্ট ইন্টিগ্রেশন: বায়োনিক চোখকে স্মার্ট গ্যাজেট ও মোবাইল অ্যাপের সঙ্গে সংযুক্ত করে উন্নত দৃষ্টিশক্তি প্রদান করা সম্ভব।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।