ইনফ্লুয়েন্সার হওয়া মানেই কি সুখী থাকা? সামাজিক মিডিয়ার গ্ল্যামার আর বাস্তবতার ফারাক

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
"Influencer" শব্দের বাংলা অর্থ হলো প্রভাবক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা যেকোনো ধরনের তথ্য, জীবনধারা বা মতামলের মাধ্যমে অন্যান্যকে প্রভাবিত করতে পারে। ইনফ্লুয়েন্সার বিভিন্ন ধরনের হতে পারে।
যেমন-
⇨ ফ্যাশন ইনফ্লুয়েন্সার: পোশাক, সাজসজ্জা বা স্টাইলের মাধ্যমে অনুসারীদের অনুপ্রাণিত করে।
⇨ ফুড ইনফ্লুয়েন্সার: রেস্টুরেন্ট বা খাবারের রিভিউ দিয়ে ভোক্তাদের ক্রয় সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলে।
⇨ ট্রাভেল ইনফ্লুয়েন্সার: ভ্রমণ অভিজ্ঞতা শেয়ার করে দর্শককে নতুন স্থান আবিষ্কার ও ভ্রমণে উৎসাহিত করে।
ব্র্যান্ডগুলো প্রায়শই ইনফ্লুয়েন্সারদের স্পন্সরশিপ এবং প্রমোশনাল কাজের জন্য নিযুক্ত করে, কারণ তাদের অনুসারীরা তাদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে গ্রহণ করে।
ইনফ্লুয়েন্সার হওয়ার মিথ: সুখী জীবন
সামাজিক মিডিয়ার গ্ল্যামার এবং কোটি ফলোয়ার থাকা মানে অটোম্যাটিকভাবে সুখী হওয়া নয়। বাস্তবতা অনেক ভিন্ন।
১) মানসিক চাপ: প্রতিদিন নতুন কন্টেন্ট তৈরি ও আপলোড করতে হয়, যা চাপ সৃষ্টি করে। লাইক বা ফলোয়ার কমে গেলে অসন্তুষ্টি, আতঙ্ক ও মানসিক অবসাদ দেখা দিতে পারে।
২) সামাজিক তুলনা ও ঈর্ষা: অন্য ইনফ্লুয়েন্সারের জীবনধারার সঙ্গে নিজেদের তুলনা করা একটি সাধারণ প্রবণতা। গবেষণা দেখায় যে, অনলাইন তুলনা অনেক সময় নিজের মূল্যবোধ ও আত্মসম্মানকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
৩) ব্যক্তিগত জীবন ও প্রাইভেসি হ্রাস: সামাজিক মিডিয়ায় সবকিছু প্রকাশ করার চাপের কারণে ব্যক্তিগত জীবন সীমিত ও গোপনীয়তা হ্রাস পায়। ফলোয়ার সংখ্যা এবং প্রকাশিত কন্টেন্টের কারণে অন্তর্দৃষ্টির অভাব দেখা দিতে পারে।
৪) অর্থনৈতিক ও পেশাদার চাপ: ফলোয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও, অনিয়মিত ব্র্যান্ড কন্ট্রাক্ট বা স্পন্সরড কন্টেন্টের চাপ আর্থিক অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে নতুন ইনফ্লুয়েন্সাররা প্রায়ই মোটিভেশন এবং অর্থনৈতিক চাপের সঙ্গে লড়াই করেন।
গবেষণা দেখায় যে, সোশ্যাল মিডিয়ার অতিরিক্ত ব্যবহার ডিপ্রেশন, উদ্বেগ এবং একাকীত্ব বাড়ায়।প্রতিনিয়ত লাইকের প্রতি নির্ভরতা ডোপামিন সিক্রেশনের চক্রে বিভ্রাট ঘটাতে পারে, যা মানসিক চাপ ও অসন্তুষ্টি বাড়ায়।"Instagram Anxiety" বা "Social Media Burnout" নামক মানসিক সমস্যাগুলি এখন নতুন রোগীর মধ্যে ক্রমবর্ধমান।
সুখী ও স্বাস্থ্যকর ইনফ্লুয়েন্সার হওয়ার কৌশল
১) সীমিত অনলাইন সময়: প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করুন।অব্যবহৃত সময়ে ডিজিটাল ডিটক্স বা ফোন ফ্রি সময় নিশ্চিত করুন।
২) প্রাইভেট জীবনকে গুরুত্ব দিন:পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে বাস্তব জীবন সংযোগ বজায় রাখুন।সকল মুহূর্ত অনলাইনে শেয়ার করার চাপ থেকে বিরত থাকুন।
৩) মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা: নিয়মিত ধ্যান, যোগব্যায়াম বা থেরাপি করুন। মানসিক চাপ বা অবসাদ অনুভব করলে মনোবিজ্ঞানের সহায়তা নিন।
৪) বাস্তব জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক: ফলোয়ার সংখ্যা ও অনলাইন লাইকের চেয়ে বাস্তব সম্পর্ককে অগ্রাধিকার দিন। প্রাকৃতিক সামাজিক সংযোগ সুখ ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য।
৫) নিজের মান বজায় রাখা: শুধুমাত্র সামাজিক স্বীকৃতি বা জনপ্রিয়তার দিকে নজর না দিয়ে নিজের স্বাস্থ্য, মানসিক শান্তি এবং সৃজনশীলতাকে অগ্রাধিকার দিন।
ইনফ্লুয়েন্সার হওয়া কেবল গ্ল্যামার, ফলোয়ার সংখ্যা বা লাইকের সংখ্যা নয়। বাস্তবতা হলো, অনেক ইনফ্লুয়েন্সার মানসিক চাপ, একাকীত্ব ও সামাজিক তুলনার চাপে থাকে। সত্যিকারের সুখ মানে প্রাইভেসি, মানসিক শান্তি, সামাজিক সংযোগ এবং নিজস্ব মূল্যবোধ বজায় রাখা।
সুতরাং, ইনফ্লুয়েন্সার হওয়া মানেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে সুখী হওয়া নয়। বাস্তব জীবন ও অনলাইন জীবন একই নয়, এবং সুখ ও মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষা করা হলে একজন ইনফ্লুয়েন্সারও স্বাস্থ্যকরভাবে সফল হতে পারেন।আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।