মাত্র নয়দিনে লিভারের ২০% চর্বি কমানোর উপায়!!

মাত্র নয়দিনে লিভারের ২০% চর্বি কমানোর উপায়!!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

গত দুই দশকে শিশু ও কিশোরদের মধ্যে ফ্যাটি লিভার (NAFLD/MAFLD) রোগ দ্রুত বেড়েছে। এটি একসময় শুধু প্রাপ্তবয়স্কদের সমস্যা ছিল, কিন্তু এখন কিশোররাও এর শিকার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রোগের সঙ্গে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও মেটাবলিক জটিলতা সম্পর্কিত। তাই কিশোরদের খাদ্যাভ্যাস—বিশেষত অতিরিক্ত চিনি এবং প্রক্রিয়াজাত খাবারের ভূমিকা—নিয়ন্ত্রণ করা স্বাস্থ্য রক্ষায় অগ্রাধিকার পায়।

সাম্প্রতিক এক গবেষণা দেখিয়েছে, মাত্র ৯ দিনের জন্য চিনিযুক্ত খাবার বাদ দিলেই লিভারের চর্বি প্রায় ২০ শতাংশ কমে যায়, যদিও ওজন প্রায় অপরিবর্তিত থাকে। অর্থাৎ শরীরের ভিতরে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন শুরু হয় মাত্র কয়েক দিনে।

গবেষণার বিস্তারিত-

◑ প্রতিষ্ঠান ও গবেষক: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউসি সান ফ্রান্সিসকো (UCSF)।

◑ অংশগ্রহণকারীরা: স্থূল লাতিনো ও আফ্রিকান-আমেরিকান কিশোররা (৯–১৮ বছর)।

◑ পদ্ধতি: অংশগ্রহণকারীদের দৈনন্দিন খাবারে চিনি কমানো হয়, কিন্তু মোট ক্যালোরি প্রায় একই রাখা হয়। অর্থাৎ এটি ক্যালোরি হ্রাস নয়।

◑ পরিমাপ: লিভারের চর্বি এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতা MRI ও অন্যান্য পরীক্ষার মাধ্যমে নিরীক্ষণ করা হয়।
 

ফলাফল:

⇨ লিভারের চর্বি প্রায় ২০% কমেছে।

⇨ ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

⇨ শরীরের ওজন পরিবর্তন মাত্র ১%-এর কম।
 

ব্যাখ্যা: লিভারের ভেতরের চর্বি কমেছে কারণ ফ্রুকটোস সরাসরি লিভারে জমা হওয়া চর্বিকে প্রভাবিত করে, ক্যালোরি হ্রাসের কারণে নয়।

 

কেন শুধু চিনি দোষী?

ফ্রুকটোস খেলে তা দ্রুত লিভারে যায়। এখানে এটি নতুন করে চর্বিতে রূপান্তরিত হয়—যাকে বলা হয় de novo lipogenesis (DNL)। এই প্রক্রিয়া দ্রুত এবং নিয়ন্ত্রণহীন হওয়ায় লিভারের চর্বি দ্রুত জমতে পারে। অন্য কার্বোহাইড্রেটের মতো ধীরে হজম হয় না। ফলে লিভারের স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে, যা NAFLD এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
 

যে খাবার ক্ষতিকর-

ফ্রুকটোস বা প্রক্রিয়াজাত কার্বোহাইড্রেটসমৃদ্ধ খাবার: সফট ড্রিঙ্কস, মিষ্টি পানীয়, ক্যান্ডি, চকলেট

কেক, বিস্কুট, প্যাকেটজাত ব্রেড, সাদা চাল, ময়দার রুটি, নান, পরোটা, আলুর চিপস, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই

প্রভাব: দ্রুত হজম হয়, রক্তে চিনি হঠাৎ বাড়ায়, লিভারে চর্বি জমায়।

 

উপকারী ও ধীরে হজম হওয়া খাবার:

ওটস, ব্রাউন রাইস, গমের আটা বা রুটি, ডাল, ছোলা, মসুর, মুগ,শাকসবজি (পালং, লাল শাক, ঢেঁড়স), ফল (আপেল, পেয়ারা, কমলা, নাশপাতি) খোসাসহ খেলে ফাইবার বেশি পাওয়া যায়

প্রভাব: রক্তে গ্লুকোজ ধীরে প্রবেশ করে, লিভারের ওপর চাপ কমে।

চিনি কমানো শুধু ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য নয়, জাতীয় স্বাস্থ্যব্যয়ও কমাতে পারে। ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং লিভারের চিকিৎসায় যে বিপুল অর্থ খরচ হয়, তা কমানো সম্ভব।
 

WHO সুপারিশ করেছে, দৈনিক ক্যালোরির সর্বোচ্চ ১০%-এর কম চিনি গ্রহণ করা, সম্ভব হলে ৫%-এর কম।
 

দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োগ

⇨ সফট ড্রিঙ্কস ও প্যাকেটজাত জুস বাদ দিন। জল বা লেবুর জল পান করুন।
 

⇨ সিরিয়াল, কেক, বিস্কুট বাদ দিয়ে ওটস বা ডালভিত্তিক খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।
 

⇨ সাদা রুটি, সাদা চাল কমিয়ে আটা, ব্রাউন রাইস ও ফাইবার সমৃদ্ধ শাকসবজি খান।
 

⇨ মিষ্টি ফল ও বাদাম রাখুন; প্রক্রিয়াজাত মিষ্টি না খাওয়াই ভালো।
 

এই গবেষণা দেখিয়েছে—শরীরের ওজন কমানোর প্রয়োজন ছাড়াই, কেবল চিনি কমানোই লিভারের চর্বি কমাতে পারে এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করতে পারে। ছোট পরিবর্তন, যেমন চিনি বাদ দেওয়া বা প্রক্রিয়াজাত খাবার কমানো, দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সুবিধা দিতে পারে।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ