আপনি কি নিজের জীবনকে অবাস্তব মনে করেন? ডিপারসোনালাইজেশন ডিসঅর্ডারের লক্ষনগুলো মিলিয়ে নিন!!

আপনি কি নিজের জীবনকে অবাস্তব মনে করেন? ডিপারসোনালাইজেশন ডিসঅর্ডারের লক্ষনগুলো মিলিয়ে নিন!!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

হঠাৎ কি কখনো মনে হয়েছে আপনি যেন নিজের শরীরের ভেতরে নেই? মনে হচ্ছে যেন বাইরে থেকে নিজেকেই দেখছেন, বা চারপাশটা স্বপ্নের মতো অচেনা, কুয়াশাচ্ছন্ন? এমন অভিজ্ঞতা যদি এক-দু'দিনের জন্য হয়, তাহলে তা হয়তো মানসিক চাপের সাময়িক প্রতিক্রিয়া। কিন্তু যদি এ অবস্থা বারবার হয় এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে এটিকে বলা হয় ডিপারসোনালাইজেশন-ডিরিয়ালাইজেশন ডিসঅর্ডার (DPDR)—একটি মানসিক ব্যাধি, যা আক্রান্ত ব্যক্তির বাস্তববোধকে কেড়ে নিতে পারে।

ডিপারসোনালাইজেশন বনাম ডিরিয়ালাইজেশন

এই ব্যাধির দুটি মুখ-

⇨ ডিপারসোনালাইজেশন: যখন মনে হয় আপনি নিজের শরীর বা মনের ভেতরে নেই। নিজের চিন্তা বা অনুভূতিকে নিজের বলে মনে হয় না। অনেকে বলেন, তারা যেন রোবটের মতো কাজ করছে, অথচ এর ভেতরে কোনো প্রাণ নেই।
 

⇨ ডিরিয়ালাইজেশন: তখন চারপাশের পৃথিবীই অচেনা লাগে। পরিচিত ঘরও অচেনা মনে হয়, মানুষগুলো নিস্তেজ লাগে, আর বাস্তব জগতটা যেন দ্বিমাত্রিক বা স্বপ্নময়।
 

লক্ষণ:

☞ নিজের শরীরকে বাইরে থেকে দেখার অনুভূতি

☞ অনুভূতিতে অসাড়তা, যেন শরীর-মন বিচ্ছিন্ন

☞ কাজকর্ম নিজের নিয়ন্ত্রণে নেই বলে মনে হওয়া

☞ চারপাশকে কুয়াশাচ্ছন্ন, প্রাণহীন বা অবাস্তব মনে হওয়া।

☞ পরিচিত মানুষ ও স্থানকেও অচেনা মনে হওয়া
 

এসব উপসর্গ অনেক সময় এতটাই তীব্র হয় যে আক্রান্ত ব্যক্তি ভয় পেয়ে ভাবেন—"আমি কি পাগল হয়ে যাচ্ছি?" অথচ এটি মানসিক স্বাস্থ্যজনিত একটি সুনির্দিষ্ট ব্যাধি, যা চিকিৎসাযোগ্য।

 

কেন হয় এই ব্যাধি?

⇨ তীব্র মানসিক চাপ ও ট্রমা: শৈশবের নির্যাতন, দুর্ঘটনা বা ভয়াবহ অভিজ্ঞতা অনেক সময় মানসিক প্রতিরক্ষা হিসেবে এই ব্যাধি তৈরি করে।

⇨ মানসিক রোগের প্রভাব: তীব্র উদ্বেগ বা বিষণ্নতা দীর্ঘস্থায়ী হলে DPDR দেখা দিতে পারে।

⇨ মাদকদ্রব্য: কিছু মাদক, বিশেষত হ্যালুসিনোজেনিক পদার্থ, সাময়িকভাবে ডিপারসোনালাইজেশনের মতো অভিজ্ঞতা তৈরি করতে পারে।

⇨ মস্তিষ্কের প্রতিক্রিয়া: গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত চাপের সময় মস্তিষ্ক বাস্তবতা থেকে সাময়িক বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, যেন নিজেকে মানসিক আঘাত থেকে রক্ষা করছে।

 

কখন সাহায্য নেবেন?

যদি এই বিচ্ছিন্নতার অনুভূতি বারবার হয় এবং-

⇨ কাজ বা পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটায়

⇨ সম্পর্ক নষ্ট করে দেয়

⇨ মানসিক ভয় ও অস্থিরতা বাড়ায়
 

তাহলে দেরি না করে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত।

 

চিকিৎসা ও করণীয়:

ডিপারসোনালাইজেশন ডিসঅর্ডারের কোনো একক চিকিৎসা নেই, তবে বিভিন্ন পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব-

⇨ সাইকোথেরাপি (কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি): বাস্তবতার সঙ্গে সংযোগ পুনরুদ্ধারে কার্যকর।

⇨ গ্রাউন্ডিং টেকনিক: হঠাৎ বিচ্ছিন্নতার অনুভূতি এলে গভীর শ্বাস নেওয়া, ঠান্ডা জল ছোঁয়া, বা চারপাশের বস্তু গুনে দেখা বাস্তবে ফেরাতে সাহায্য করে।

⇨ ওষুধ: তীব্র উদ্বেগ বা বিষণ্নতার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের পরামর্শে ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে।

⇨ জীবনযাপনে পরিবর্তন: পর্যাপ্ত ঘুম, ক্যাফেইন-মাদক এড়িয়ে চলা, নিয়মিত ব্যায়াম এবং মানসিক প্রশান্তি চর্চা রোগের উপসর্গ কমায়।
 

ডিপারসোনালাইজেশন-ডিরিয়ালাইজেশন ডিসঅর্ডার কোনো কল্পনা নয়, বরং এক বাস্তব মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা। আক্রান্তরা যেন নিজের অস্তিত্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান, যা অত্যন্ত ভয়াবহ অভিজ্ঞতা। কিন্তু সচেতনতা, মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সহায়তা এবং নিয়মিত থেরাপির মাধ্যমে এই অবস্থার উন্নতি সম্ভব। বাস্তবতাকে আঁকড়ে ধরতে, প্রয়োজন শুধু সঠিক যত্ন ও সমর্থন।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ