আর্কটিকের কিছু দ্বীপ ও অঞ্চল যেখানে কয়েক মাস ধরে সূর্য আলোকোজ্জ্বল, রাত নেই!

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
পৃথিবীর এমন কিছু অঞ্চল রয়েছে যেখানে গ্রীষ্মকালে সূর্য ২৪ ঘণ্টা দৃশ্যমান থাকে। এই বিরল প্রাকৃতিক ঘটনা পরিচিত "মধ্যরাতের সূর্য" বা নিশীথ সূর্য নামে। এটি কেবল সৌন্দর্যবোধক ঘটনা নয়; বরং এটি পৃথিবীর অক্ষপ্রণালীর ঢাল, কক্ষপথ এবং ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী ঘটে। নিশীথ সূর্যের ঠিক বিপরীত ঘটনা ঘটে শীতকালে, যা পরিচিত পোলার নাইট নামে। এ সময় সূর্য পুরো কয়েক মাসের জন্য দিগন্তের নিচে থাকে। এই উল্টোচক্র আর্কটিক অঞ্চলের পরিবেশ, মানুষের জীবনযাত্রা এবং প্রাণীজগতের আচরণে বড় ধরনের প্রভাব ফেলে।
নিশীথ সূর্য দেখা যায় যে স্থানে-
১. নরওয়ের সোয়ালবার্ড: প্রায় এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত সূর্য অস্ত যায় না। পর্যটকরা মধ্যরাতেও প্রাকৃতিক আলোর দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন।
স্থানীয়রা মাছ ধরা, শিকারের কাজ এবং উন্মুক্ত পর্যটন কর্মকাণ্ড চালান।
২. ফিনল্যান্ডের উত্তরাঞ্চল:গ্রীষ্মকালে প্রায় ৬০ দিন পর্যন্ত সূর্য অস্ত যায় না। 'মিডনাইট সান ফেস্টিভাল' আয়োজন করে মানুষ রাতভোরে সঙ্গীত, নৃত্য ও সামাজিক মিলনমেলায় অংশগ্রহণ করে।
৩. আইসল্যান্ড: জুন মাসে পুরো দেশেই সূর্য কখনও অস্ত যায় না। রাতেও সূর্য আকাশে থাকে, যা পর্যটকদের জন্য অসাধারণ দৃশ্য তৈরি করে। পাহাড়, জলপ্রপাত এবং হিমবাহ আলোয় সোনালি রঙ ধারণ করে।
৪. কানাডার নুনাভুট: প্রায় দুই মাস ধরে সূর্য ২৪ ঘণ্টা দৃশ্যমান থাকে। স্থানীয় ইনুইট জনগোষ্ঠী মাছ ধরা, শিকার এবং দৈনন্দিন কার্যক্রমে দীর্ঘদিনের আলোকে কাজে লাগায়।
৫. আলাস্কার উত্তরের অংশ: আলাস্কায় গ্রীষ্মকালীন নিশীথ সূর্য লক্ষ্য করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, ফার্টি মাইলের উত্তরে প্রায় ৭৫ দিন পর্যন্ত সূর্য অস্ত যায় না।
নিশীথ সূর্য পৃথিবীর অক্ষপ্রণালীর ঢাল (23.5°) ও কক্ষপথের ফলাফল। আর্কটিক সার্কেল (66.5° উত্তর) এবং তার উত্তরের অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে পৃথিবীর ঘূর্ণনের কারণে সূর্য দিগন্তের নিচে নামতে পারে না। ফলে কয়েক সপ্তাহ বা মাস ধরে রাতের অভাব দেখা দেয় এবং পুরো অঞ্চলে দিনলাইট ২৪ ঘণ্টা অব্যাহত থাকে। শীতকালে উল্টোভাবে সূর্য পুরো মাসের জন্য দিগন্তের নিচে থাকে এটি পোলার নাইট।
মানব জীবনের ওপর নিশীথ সূর্যের প্রভাব-
ঘুমের নিয়ম ব্যাহত হয়, শরীরের সার্কেডিয়ান রিদম পরিবর্তিত হয়। মানুষ উদ্দীপক ও মানসিকভাবে সতেজ থাকে, তবে দীর্ঘদিনের আলোতে ঘুমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। পর্যটকরা রাতেও বাইরে বের হয়ে গ্রীষ্মকালের অনন্য দৃশ্য উপভোগ করে।
পরিবেশ ও প্রাণীজগৎ- দীর্ঘদিনের আলো ফটোসিন্থেসিস প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে। প্রাণীরা দিনের আলো অনুযায়ী আচরণ পরিবর্তন করে, যেমন হরিণ, পোলার বিয়ার ও অন্যান্য আর্কটিক প্রাণী। প্রাকৃতিক খাবারের উৎস সহজলভ্য হয়।
নিশীথ সূর্য কেবল প্রাকৃতিক বিস্ময় নয়, এটি পৃথিবীর ভৌগোলিক ও জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক নিয়মের বাস্তব প্রমাণ।আর্কটিক অঞ্চলের মানুষ, প্রাণী ও উদ্ভিদ এই বিরল আলোতে নিজেদের জীবনযাত্রা সামঞ্জস্য করে। পর্যটক এবং বিজ্ঞানীরাও এটি উপভোগ ও অধ্যয়ন করেন।এক কথায়, পৃথিবীর কিছু অঞ্চলে সূর্য কখনও অস্ত না যাওয়া সত্যিই এক অদ্ভুত ও আশ্চর্যজনক প্রাকৃতিক দৃশ্য, যা কেবল চোখে দেখা যায়, কল্পনায় নয়।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।