আপনার চুলও হতে পারে আকর্ষণীয় ও উজ্জ্বল-হাজার বছরের প্রাচীন উপায় শিখে নিন !!

আপনার চুলও হতে পারে আকর্ষণীয় ও উজ্জ্বল-হাজার বছরের প্রাচীন উপায় শিখে নিন !!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

চুলের যত্নে ভাত ধোয়া পানি ব্যবহারের ইতিহাস বহু পুরনো। চীনের হুয়াংলু গ্রামের নারীরা, যাদের চুল প্রায় ১.৫ মিটার লম্বা হয়, শত শত বছর ধরে ফারমেন্টেড rice water ব্যবহার করে আসছেন। জাপানের হেইয়ান যুগের (৭৯৪–১১৮৫ খ্রিস্টাব্দ) অভিজাত নারীরাও চুল পরিষ্কার ও মসৃণ রাখার জন্য ভাত ভেজানো পানি ব্যবহার করতেন। অর্থাৎ এটি শুধু লোকজ উপায় নয়, বরং একটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য।

ভাত ধোয়া পানিতে যা থাকে-

ভাত একটি শর্করাযুক্ত খাদ্য, আর তার পানিতে দ্রবীভূত হয় কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা চুলের জন্য কার্যকর:

⇨ অ্যামিনো অ্যাসিড: চুলের ভেতরের গঠন মজবুত করে।

⇨ ভিটামিন বি গ্রুপ (B1, B2, B3, B6): মাথার ত্বককে পুষ্টি দেয়, চুলের বৃদ্ধি বাড়ায়।

⇨ ভিটামিন ই: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে, মাথার ত্বককে সুস্থ রাখে।

⇨ ইনোসিটল (Inositol): এক ধরনের কার্বোহাইড্রেট, যা চুলের ভাঙন কমায় ও ক্ষতিগ্রস্ত চুল মেরামত করে।

⇨ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও খনিজ: বাইরের ধুলোবালি ও দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে।
 

ভাত ধোয়া পানি তৈরির পদ্ধতি:

১. সাধারণ পদ্ধতি (Soaking method): আধা কাপ চাল ভালোভাবে ধুয়ে নিন। ২–৩ কাপ পরিষ্কার পানিতে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। তারপর ছেঁকে নিলে তৈরি হয়ে যাবে rice water।
 

২. ফারমেন্টেড পদ্ধতি (Fermented rice water): চাল ধোয়া পানি একটি কাচের বোতলে রেখে ২৪–৪৮ ঘণ্টা রুম টেম্পারেচারে রাখুন।ফারমেন্টেশনের ফলে এর পিএইচ কমে যায়, যা মাথার ত্বকের প্রাকৃতিক তেলের সাথে আরও সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। এতে কিছু নতুন অ্যান্টিঅক্সিডেন্টও তৈরি হয়, যা চুলের জন্য উপকারী। ব্যবহার করার আগে হালকা গরম করে নিলে দুর্গন্ধ কমে যায়।
 

ব্যবহারের নিয়ম:

১. প্রথমে শ্যাম্পু দিয়ে চুল পরিষ্কার করুন।

২. rice water মাথার ত্বক ও চুলের গোড়ায় ভালোভাবে লাগান।

৩. ১০–২০ মিনিট হালকা মালিশ করে রেখে দিন।

৪. পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

সপ্তাহে ১–২ বার ব্যবহার করা উত্তম। প্রতিদিন ব্যবহার করলে চুলে প্রোটিন বিল্ড-আপ হয়ে শুষ্ক বা শক্ত লাগতে পারে।

 

উপকারিতা-

⇨ চুল শক্ত ও ঘন করে: ভাঙা কমায়, চুলের গোড়া মজবুত করে।

⇨ প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা আনে: ভিটামিন ও খনিজ চুলকে চকচকে করে।

⇨ খুশকি ও স্ক্যাল্পের সমস্যা কমায়: ফারমেন্টেড পানির অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল গুণ খুশকি হ্রাসে সাহায্য করতে পারে।

⇨ দ্রুত চুল বাড়তে সহায়ক: রক্তসঞ্চালন বাড়ায়, ফলে নতুন চুল গজায়।

⇨ চুলের মসৃণতা বৃদ্ধি করে: ইনোসিটল চুলের পৃষ্ঠে প্রোটিন স্তর তৈরি করে, যা জট ছাড়াতে সহজ করে।
 

আধুনিক গবেষণা যা বলছে-

Journal of Cosmetic Science-এর এক পরীক্ষায় দেখা গেছে, ইনোসিটল চুলের ভাঙন ১০% পর্যন্ত কমাতে পারে। জাপানে পরিচালিত আরেক গবেষণায় প্রমাণ মিলে, ফারমেন্টেড rice water চুলকে মসৃণ করে এবং প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা বাড়ায়।

যদিও এখনো এর উপর বড় পরিসরে বৈজ্ঞানিক গবেষণা সীমিত, তবুও পরীক্ষামূলক ফলাফল আশাব্যঞ্জক।
 

সতর্কতা:

সবার মাথার ত্বক ভিন্ন। কারও ক্ষেত্রে এটি খুশকি বাড়াতে বা স্ক্যাল্প শুষ্ক করতে পারে। অতিরিক্ত ব্যবহারে চুল শক্ত ও ভঙ্গুর হয়ে যেতে পারে। ব্যবহারের আগে একদিন patch test করে নিলে ভালো।

ভাত ধোয়া পানি কোনো যাদুকরী সমাধান নয়, তবে এটি একটি প্রমাণিত, প্রাচীন ও প্রাকৃতিক উপায়, যা অনেকের জন্য উপকারী হতে পারে। চুলের যত্নে এটি ব্যবহার করলে প্রাকৃতিকভাবে চুল মজবুত, লম্বা ও সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। তবে মনে রাখতে হবে, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত পানি পান ও চুলের নিয়মিত যত্নই প্রকৃত স্বাস্থ্যকর চুলের মূল ভিত্তি।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ