মা হওয়া মানেই ছুটি! কোন দেশ দেয় ২ বছর বেতনভুক্ত মাতৃত্বকালীন ছুটি?

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
বিশ্বজুড়ে মাতৃত্বকালীন নীতিতে বৈচিত্র্য থাকলেও কিছু দেশ আছে, যেখানে নারীর কর্মজীবন ও পরিবারকে সমান গুরুত্ব দিয়ে নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো বুলগেরিয়া। এই দেশটি মাতৃত্বকালীন ছুটির ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বুলগেরিয়ায় প্রতি শিশুর জন্য বাবা-মা উভয়ই ৪১০ দিনের বেতনভুক্ত ছুটি পান, যা প্রায় ১৪ মাস। যদিও এটি দুই বছরের সমান নয়, বিশ্বের তুলনায় এটি একেবারেই সর্বোচ্চ পর্যায়ের মধ্যে পড়ে। এই নীতি শুধু শিশুর যত্ন নয়, নারী অধিকার, সামাজিক সুরক্ষা ও কর্মজীবন ভারসাম্যের দৃষ্টিকোণ থেকেও গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্বজুড়ে মাতৃত্বকালীন নীতি এবং নারীর কর্মজীবনে সহায়ক নীতিমালা নানা রকম হলেও বুলগেরিয়ার উদ্ভব এক অনন্য দৃষ্টান্ত। এখানে প্রতি শিশুর জন্য বাবা-মা উভয়ই ৪১০ দিনের বেতনভুক্ত ছুটি পান। এটি প্রায় ১৪ মাসের সমান, যা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক দীর্ঘ। যদিও এটি দুই বছরের সমান নয়, তারপরও এটি বিশ্বের সর্বোচ্চ মাতৃত্বকালীন সুবিধার মধ্যে একটি এবং নারী অধিকারের ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী উদাহরণ।
বুলগেরিয়ার এই নীতির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে: কর্মজীবী মা-বাবাদের শিশুর সাথে পর্যাপ্ত সময় কাটাতে সাহায্য করা এবং সামাজিক ও আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এটি শুধু পরিবারিক জীবন নয়, নারীর পেশাগত জীবনকেও প্রভাবিত করে।
বুলগেরিয়ার মাতৃত্বকালীন ছুটির বিস্তারিত
◑ মোট ছুটি: বাবা-মা উভয়ই প্রতি শিশুর জন্য ৪১০ দিন পর্যন্ত ছুটি নিতে পারেন। এই সময় উভয়ই ছুটি ভাগাভাগি করে ব্যবহার করতে পারেন।
◑ বেতন সুবিধা: ছুটির সময় কর্মীরা বেতনের ৯০% পান। এটি বিশেষ করে একক মায়েদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বেতন হারানো মানে পরিবারিক আর্থিক নিরাপত্তা হ্রাস।
◑ ছুটির ব্যবহার ও উদ্দেশ্য: শিশুর যত্ন নেওয়া, যেমন বুকের দুধ খাওয়ানো, মানসিক সুরক্ষা ও প্রাথমিক বিকাশ নিশ্চিত করা। পরিবার ও কর্মজীবনের মধ্যে ভারসাম্য রাখা। কর্মজীবী বাবা-মায়ের মানসিক চাপ কমানো এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
◑ সামাজিক প্রভাব:
পরিবারগুলোর আর্থিক ও মানসিক সুরক্ষা নিশ্চিত হয়। শিশুর স্বাস্থ্য, বিকাশ ও মানসিক সুস্থতা বৃদ্ধি পায়। দীর্ঘকালীন ছুটি নারীদের কর্মজীবনে ফিরে আসার পথ সুগম করে।
নারীর অধিকার ও সামাজিক দৃষ্টিকোণ-
⇨ নারীর কর্মজীবন সুরক্ষা: দীর্ঘকালীন বেতনসহ ছুটি নারীদের চাকরিতে ফিরে আসার নিশ্চয়তা দেয়।
⇨ পারিবারিক ভারসাম্য: পিতামাতার উভয়ই ছুটি নেওয়া সম্ভব হওয়ায় পরিবারে দায়িত্বের সমতা বজায় থাকে।
⇨ সামাজিক ও আর্থিক সুরক্ষা: ছুটি বেতনের সাথে, পরিবার আর্থিকভাবে নিরাপদ থাকে। শিশুর মানসিক ও শারীরিক বিকাশ নিশ্চিত হয়।
⇨ নারীর মর্যাদা ও স্বাধীনতা: দীর্ঘ ছুটি নারীর সামাজিক ও পেশাগত মর্যাদা নিশ্চিত করে, ফলে কর্মজীবন ও পরিবার দুটোই সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা সম্ভব।
বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে মাতৃত্বকালীন ছুটি সাধারণত ৬ মাস, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রায় একই। এই সীমাবদ্ধতা অনেক সময় নারীর কর্মজীবন ও পারিবারিক জীবন পরিচালনায় বাধা সৃষ্টি করে। একক মায়েরা এবং কর্মজীবী নারীরা বেশি চাপের মুখোমুখি হন।
বুলগেরিয়ার মডেল অনুসরণ করলে, বাংলাদেশে নারীর কর্মজীবনে ফিরে আসা, শিশুর যত্ন নেওয়া এবং পরিবারিক ভারসাম্য রক্ষা সম্ভব।
বুলগেরিয়ার ৪১০ দিনের বেতনভুক্ত মাতৃত্বকালীন ছুটি শিশুর কল্যাণ, নারীর অধিকার এবং পরিবার-সমাজের সমতা রক্ষায় একটি অনন্য উদাহরণ। এটি প্রমাণ করে, দীর্ঘকালীন, আর্থিকভাবে সুরক্ষিত ছুটি কেবল পরিবারের জন্য নয়, সমাজের জন্যও লাভজনক।
বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশও যদি এই নীতি অনুসরণ করে, তাহলে কর্মজীবী মা-বাবাদের জন্য একটি সুস্থ, নিরাপদ ও সমতার ভিত্তিক পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব।আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।