আপনি কি জানেন, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা আপনার মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যে কতটা প্রভাব ফেলে?-উপসর্গ, কারণ ও প্রতিরোধ জানুন

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
আমরা প্রায়ই ক্লান্তি, হঠাৎ মেজাজ খারাপ হওয়া, ব্রণ বেড়ে যাওয়া বা অস্বাভাবিক ওজন পরিবর্তনের মতো সমস্যাকে সাধারণ ব্যাপার ভেবে এড়িয়ে যাই। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন এসবই হতে পারে হরমোনের ভারসাম্যহীনতার (Hormonal Imbalance) ইঙ্গিত। শরীরের ভেতরে নানা হরমোন একে অপরের সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রেখে কাজ করে। এই সূক্ষ্ম ভারসাম্য নষ্ট হলে ঘটে বড় ধরনের শারীরিক ও মানসিক অস্থিরতা।
হরমোন হলো শরীরের বার্তাবাহক রাসায়নিক। এগুলো আমাদের বৃদ্ধি, বিপাকক্রিয়া, প্রজনন, ঘুম, মানসিক অবস্থা—সব কিছুর সঙ্গে যুক্ত। অল্পতম পরিবর্তনও শরীরে বড় প্রভাব ফেলে। যেমন ইনসুলিন রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, আবার টেস্টোস্টেরন ও ইস্ট্রোজেন যৌন স্বাস্থ্য ও শক্তি নিয়ন্ত্রণ করে।
হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণ:
⇨ শারীরিক অবস্থা: স্থূলতা, গর্ভাবস্থা, কিংবা প্রসবোত্তর সময় হরমোনের মাত্রাকে প্রভাবিত করে।
রোগ: থাইরয়েড সমস্যা বা নারীদের ক্ষেত্রে পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS) প্রধান কারণ।
⇨ জীবনযাপন: অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব ও দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ এই ভারসাম্য নষ্ট করে।
⇨ ওষুধ: জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি বা হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি হরমোনের স্বাভাবিক প্রবাহ পরিবর্তন করতে পারে।
পুরুষদের ক্ষেত্রে টেস্টোস্টেরন হ্রাস-
টেস্টোস্টেরন হলো পুরুষদের প্রধান হরমোন। এর মাত্রা কমে গেলে দেখা দিতে পারে—
◑ সবসময় ক্লান্তি ও শক্তির অভাব
◑ যৌন ইচ্ছা হ্রাস
◑ মেজাজ পরিবর্তন ও বিরক্তি
◑ পেশি শক্তি ও মনোযোগ কমে যাওয়া
এগুলো উপেক্ষা করলে দীর্ঘমেয়াদে হাড় দুর্বল হওয়া ও মেটাবলিক সমস্যা তৈরি হতে পারে।
মহিলাদের ক্ষেত্রে ভারসাম্যহীনতার লক্ষণ: নারীদের মধ্যে হরমোনের অসামঞ্জস্য দেখা দেয়—
⇨ অনিয়মিত মাসিক বা মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া
⇨ ব্রণ ও অতিরিক্ত লোম গজানো
⇨ হঠাৎ ওজন বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া
⇨ মানসিক অস্থিরতা ও অনিদ্রা
হরমোনের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার উপায়-
⇨ নিয়মিত ব্যায়াম: প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা বা শরীরচর্চা হরমোনের প্রবাহ স্বাভাবিক রাখে।
⇨ স্বাস্থ্যকর খাদ্য: প্রক্রিয়াজাত খাবার বাদ দিয়ে শাকসবজি, ফল, বাদাম, ডিম ও মাছ খাওয়া জরুরি।
⇨ পর্যাপ্ত ঘুম: প্রতিদিন ৭–৮ ঘণ্টা মানসম্মত ঘুম শরীরকে স্বাভাবিক তালমেলে আনে।
⇨ ওজন নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত ওজন কমানো বা স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা হরমোনের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনে।
⇨ স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট: যোগব্যায়াম, মেডিটেশন বা গভীর শ্বাস প্রশ্বাস মানসিক চাপ কমায়।
⇨ চিকিৎসকের পরামর্শ: নিয়মিত সমস্যা দেখা দিলে বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
কখন ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন?
যদি হঠাৎ ক্লান্তি, অনিয়মিত মাসিক, যৌন ইচ্ছা হ্রাস, চুল পড়া, ব্রণ বৃদ্ধি বা ওজন পরিবর্তনের মতো সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কারণ হরমোনের ভারসাম্যহীনতা শুধু সৌন্দর্য বা মানসিক স্বাস্থ্যে নয়, ভবিষ্যতে ডায়াবেটিস, হাড় ক্ষয় কিংবা বন্ধ্যাত্বের মতো জটিলতাও ডেকে আনতে পারে।
হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখা মানে শুধু একটি সমস্যা এড়ানো নয়, বরং সার্বিক জীবনকে সুস্থ রাখা। শরীরের ভেতরে অদৃশ্য এই কেমিক্যাল বার্তাবাহকরা নীরবে আমাদের প্রতিটি কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে। তাই শরীরের ছোটখাটো সংকেত উপেক্ষা না করে জীবনযাপনে পরিবর্তন আনুন এবং প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হোন,এটাই সুস্থ ভবিষ্যতের চাবিকাঠি।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।