আপনি কি মানুষদের থেকে নিজেকে আলাদা রাখেন?এটাই হতে পারে অ্যান্টিসোশ্যাল পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডারের প্রথম সংকেত!

আপনি কি মানুষদের থেকে নিজেকে আলাদা রাখেন?এটাই হতে পারে অ্যান্টিসোশ্যাল পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডারের প্রথম সংকেত!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

মানুষ সমাজবদ্ধ প্রাণী সম্পর্ক, আবেগ, সহমর্মিতা ও সামাজিক নিয়ম মেনে চলার মধ্য দিয়েই সভ্যতা গড়ে উঠেছে। তবে কিছু মানুষের আচরণ যেন এ ধারার বাইরে। তারা অন্যদের অনুভূতি, আইন-কানুন বা সামাজিক দায়িত্বকে গুরুত্ব দেন না। মনোবিজ্ঞানের ভাষায়, এ অবস্থাকে বলা হয় অ্যান্টিসোশ্যাল পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার (ASPD)।

অ্যান্টিসোশ্যাল পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার কী?

ASPD হলো এক ধরনের ব্যক্তিত্বজনিত মানসিক ব্যাধি, যেখানে আক্রান্ত ব্যক্তি বারবার সমাজবিরোধী আচরণ প্রদর্শন করে। যেমন— আইন ভাঙা, মিথ্যা বলা, প্রতারণা করা, অন্যের ক্ষতি করেও অপরাধবোধ না থাকা। এটি শুধু একক কোনো কাজ নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদি আচরণ ও ব্যক্তিত্বের ধরণ, যা সাধারণত কৈশোর বা তরুণ বয়স থেকেই প্রকাশ পায়।
 

উপসর্গ ও বৈশিষ্ট্য:

⇨ সহমর্মিতার অভাব: অন্যের কষ্ট বা ক্ষতি অনুভব না করা।

⇨ প্রতারণা ও চালাকি: মিথ্যা বলা, ফাঁকি দেওয়া বা সুযোগ নেওয়ার প্রবণতা।

⇨ হঠাৎ রাগ বা আক্রমণাত্মকতা: ছোটখাটো কারণে ঝগড়া বা সহিংস আচরণ করা।

⇨ দায়িত্বহীনতা: কাজ, সম্পর্ক বা প্রতিশ্রুতি পালন না করা।

⇨ অপরাধবোধহীনতা: ভুল কাজ করেও অনুশোচনা না থাকা।
 

কারণ:

মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন, ASPD একাধিক কারণে গড়ে উঠতে পারে—

⇨ জেনেটিক ফ্যাক্টর: পরিবারে এর ইতিহাস থাকলে ঝুঁকি বাড়ে।

⇨ মস্তিষ্কের গঠন: গবেষণায় দেখা গেছে, আবেগ নিয়ন্ত্রণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য দায়ী মস্তিষ্কের কিছু অংশ ASPD আক্রান্তদের ক্ষেত্রে ভিন্নভাবে কাজ করে।

⇨ শৈশবের অভিজ্ঞতা: অবহেলা, নির্যাতন, অস্থির পরিবারিক পরিবেশ বা কিশোর বয়সে অপরাধমূলক কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত হওয়া এই ব্যাধির ঝুঁকি বাড়ায়।

 

প্রভাব:

অ্যান্টিসোশ্যাল পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার শুধু ব্যক্তির নয়, চারপাশের মানুষের জীবনেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে যায়।

চাকরি ও আর্থিক জীবনে স্থিতি বজায় রাখা কঠিন হয়। অনেক ক্ষেত্রেই আইনগত সমস্যায় জড়িয়ে পড়ে।

 

চিকিৎসা ও মোকাবিলা:

ASPD পুরোপুরি নিরাময়যোগ্য নয়, তবে সঠিক পরিচর্যা করলে আচরণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

সাইকোথেরাপি: বিশেষজ্ঞ মনোবিদের সঙ্গে কাউন্সেলিং, যেখানে আচরণগত নিয়ন্ত্রণ শেখানো হয়।

⇨ কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি (CBT): নেতিবাচক চিন্তাধারা পরিবর্তন করে ইতিবাচক আচরণ শেখানো।

⇨ ওষুধ: কোনো নির্দিষ্ট ওষুধ নেই, তবে হতাশা, আক্রমণাত্মক প্রবণতা বা উদ্বেগ কমাতে ওষুধ দেওয়া যেতে পারে।

⇨ সামাজিক সহায়তা: পরিবার, বন্ধু ও সামাজিক সহযোগিতা আক্রান্ত ব্যক্তিকে সঠিক পথে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
 

কেন সচেতনতা জরুরি?

এই ব্যাধি সাধারণ মানসিক রোগের মতো সহজে ধরা পড়ে না। অনেকেই এটিকে শুধু 'খারাপ ব্যবহার' বা 'অপরাধপ্রবণতা' মনে করেন। কিন্তু আসলে এটি একটি চিকিৎসাযোগ্য মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা। সময়মতো সঠিক সহায়তা না পেলে ব্যক্তি ও সমাজ—দুজনকেই বড় ক্ষতির মুখে ফেলতে পারে।

সারসংক্ষেপে বলা যায়, অ্যান্টিসোশ্যাল পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার এমন এক মানসিক অবস্থা, যেখানে মানুষ নিজের সীমা ভেঙে সমাজের নিয়ম-শৃঙ্খলার বাইরে চলে যায়। বোঝাপড়া, সময়মতো সঠিক চিকিৎসা ও সহানুভূতি দিয়ে এই সমস্যার প্রভাব অনেকাংশে কমানো সম্ভব।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ