যুবসমাজের নতুন মানসিকতাই এখন সমাজের চালিকাশক্তি হয়ে উঠছে!

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
সমাজের রুচি, জীবনধারা আর ভাবনার ধরণ আজ যেভাবে দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে, তার পেছনে সবচেয়ে বড় চালিকাশক্তি হলো টিনএজারদের মানসিকতা। কৈশোরকাল কেবল শারীরিক নয়, মানসিক ও সামাজিক রূপান্তরেরও সময়। এই সময়ের চিন্তাভাবনা, ভোগবিলাসের ধরণ, সংস্কৃতির প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি সবকিছুই আশেপাশের সমাজকে প্রভাবিত করে। কিন্তু কেন এই বয়সের মানুষের প্রভাব এত বেশি?
কৈশোরকালে মস্তিষ্কের প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স (যেখানে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, যুক্তি বিশ্লেষণ ও আত্মনিয়ন্ত্রণ হয়) তখনও পুরোপুরি পরিপক্ক হয় না। অন্যদিকে অ্যামিগডালা (যা আবেগ, তাড়না ও ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্তের সাথে জড়িত) অনেক বেশি সক্রিয় থাকে। ফলাফল - টিনএজাররা নতুন কিছু চেষ্টা করতে চায়, ঝুঁকি নেয়, এবং সমাজে প্রচলিত ধ্যানধারণার বাইরে চিন্তা করতে সক্ষম হয়। এই বৈজ্ঞানিক বাস্তবতাই ব্যাখ্যা করে কেন টিনএজাররা দ্রুত নতুন ট্রেন্ডে ঝুঁকে পড়ে এবং অন্যদেরও প্রভাবিত করে।
আগে কোনো নতুন ফ্যাশন বা সংগীত জনপ্রিয় হতে সময় লাগত। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে টিনএজারদের একটি ছোট্ট আইডিয়া মুহূর্তেই গ্লোবাল ট্রেন্ড হয়ে উঠতে পারে। গান, পোশাক, গেমস, এমনকি খাবারের ধরণও তাদের পছন্দ থেকে সমাজে ছড়িয়ে পড়ে।
টিকটক, ইউটিউব বা ইনস্টাগ্রামে টিনএজারদের তৈরি করা কন্টেন্ট শুধু তাদের সহপাঠী নয়, প্রাপ্তবয়স্কদেরও জীবনধারায় ঢুকে পড়ছে।
সমাজের রুচি বদলে যাওয়ার দৃশ্যমান দিক
⇨ সংগীত ও বিনোদন: ব্যান্ড মিউজিক থেকে শুরু করে কে-পপ কিংবা লো-ফাই গান সবচেয়ে আগে টিনএজাররাই গ্রহণ করে এবং জনপ্রিয় করে তোলে।
⇨ খাদ্যাভ্যাস: ফাস্ট ফুড ও ক্যাফে সংস্কৃতির বিকাশ মূলত টিনএজদের জীবনধারার সাথে যুক্ত।
⇨ ফ্যাশন: পোশাকের নকশা, হেয়ারস্টাইল বা অ্যাকসেসরিজ টিনএজাররা যে কিছু গ্রহণ করে, তা-ই দ্রুত মূলধারায় ঢুকে পড়ে।
⇨ মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গি: লিঙ্গসমতা, পরিবেশ সচেতনতা কিংবা মানসিক স্বাস্থ্যের মতো বিষয়গুলো টিনএজারদের আলোচনায় উঠে আসছে এবং পরিবার ও সমাজকেও ভাবতে বাধ্য করছে।
মানসিকতা থেকে সামাজিক প্রভাব-
এই প্রজন্মের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো চ্যালেঞ্জ ও প্রশ্ন করার প্রবণতা। তারা প্রচলিত নিয়ম বা অভ্যাসকে প্রশ্নবিদ্ধ করে,যা অনেক সময় প্রাপ্তবয়স্কদের কাছে অস্বস্তিকর মনে হতে পারে। তবে এর ফলেই সমাজে নতুন চিন্তার জন্ম হয়। উদাহরণ হিসেবে ধরা যায়, পরিবেশ রক্ষার আন্দোলন। অনেক তরুণ-তরুণীর উদ্যোগেই প্লাস্টিক ব্যবহার কমানো, টেকসই জীবনধারার মতো আন্দোলন সমাজে আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে।
পরিবর্তনের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক
একদিকে টিনএজ মানসিকতা সমাজে সৃজনশীলতা ও নতুনত্ব আনে, অন্যদিকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্তও জন্ম দেয়। অতিরিক্ত সোশ্যাল মিডিয়া নির্ভরতা, দ্রুত জনপ্রিয় হতে চাওয়া বা "ফোমো" (Fear of Missing Out) মানসিক চাপ তৈরি করতে পারে।
তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, এসবই স্বাভাবিক বিকাশের অংশ। সঠিক দিকনির্দেশনা ও সহমর্মী মনোভাব থাকলে টিনএজ মানসিকতা সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তনের শক্তি হিসেবেই কাজ করবে।
সবশেষে বলা যায়, টিনএজারদের মানসিকতা সমাজের ভবিষ্যৎ রূপরেখা আঁকছে। আজকের নতুন চিন্তা, ভিন্নধর্মী রুচি আর সাহসী প্রশ্নগুলোই আগামী দিনের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিকে গড়ে তুলবে।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।