প্রাচীন ইতিহাসের অজানা অধ্যায় মহেঞ্জোদারো শহরের চমকপ্রদ সব কাহিনি

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
ভাবুন তো আজ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে মানুষ এমন এক শহর গড়ে তুলেছিল, যেখানে ছিল সোজাসুজি রাস্তা, বাড়ি থেকে নর্দমায় গিয়ে মিশে যাওয়া ড্রেনেজ সিস্টেম, এমনকি ছিল সার্বজনীন স্নানাগারও। শুনতে আধুনিক কোনো শহরের বর্ণনার মতো লাগছে, তাই না? অথচ এই শহরটা তৈরি হয়েছিল সেই আদিম যুগে। নাম তার মহেঞ্জোদারো যা সিন্ধু উপত্যকা সভ্যতার অন্যতম উজ্জ্বল নিদর্শন।
১৯২০-এর দশকে পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশে প্রত্নতাত্ত্বিকরা খননকাজ শুরু করলে বেরিয়ে আসে বিশাল এক প্রাচীন নগরীর ধ্বংসাবশেষ। স্থানীয়রা এটাকে ডাকত "মৃতের ঢিবি", আর সেখান থেকেই নাম হলো মহেঞ্জোদারো। মাটির নিচে চাপা পড়ে থাকা এই শহরটা যেন হঠাৎ সময়ের ভাঁজ থেকে বেরিয়ে এলো, আর দেখিয়ে দিল মানুষের প্রাচীন মেধার বিস্ময়।
মহেঞ্জোদারোর সবচেয়ে আশ্চর্যের দিক ছিল এর নগর পরিকল্পনা। রাস্তাগুলো ছিল একেবারে সোজা আর একে অপরকে সমকোণে কেটে গিয়েছিল—যেন আধুনিক শহরের গ্রিড সিস্টেম। প্রতিটি বাড়ির সাথে ছিল আলাদা ড্রেন, যা মূল নর্দমায় গিয়ে মিশত। ভাবা যায়! আজকের অনেক শহরেও এত গোছানো ড্রেনেজ নেই। বাড়িগুলো ছিল দুইতলা, ইট দিয়ে গাঁথা মজবুত কাঠামো। সবচেয়ে চমকপ্রদ ছিল গ্রেট বাথ একটি বিশাল সার্বজনীন স্নানাগার। অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন, এটা শুধু গোসলের জন্য নয়, সামাজিক বা ধর্মীয় আচারেও ব্যবহৃত হতো।
প্রত্নতাত্ত্বিকরা এখানে পেয়েছেন খেলনা, মূর্তি, সিলমোহর, গয়না,যা প্রমাণ করে তারা শুধু প্রযুক্তিগত দিক থেকেই নয়, শিল্প-সাহিত্য আর নান্দনিকতায়ও এগিয়ে ছিল। বড় বড় গুদামঘর দেখায়, তারা কৃষি উৎপাদন সংরক্ষণে সচেতন ছিল।
সিলমোহরগুলো থেকে বোঝা যায়, তারা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যেও জড়িত ছিল।
এমনকি বিখ্যাত "ড্যান্সিং গার্ল" মূর্তি প্রমাণ করে, শিল্প আর সৃজনশীলতাও তাদের জীবনের বড় অংশ ছিল।
কেন হারিয়ে গেল এই সভ্যতা?-প্রশ্নটা আজও রহস্যময়। কেউ বলেন, বড় কোনো বন্যা বা ভূমিকম্পে শহরটি ধ্বংস হয়ে যায়। কেউ বলেন, নদীর গতিপথ বদলে কৃষি আর পানির জোগান বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আবার কেউ মনে করেন, বাইরের কোনো আক্রমণ ঘটেছিল।
কিন্তু আসল কারণ এখনও নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। হয়তো এ কারণেই মহেঞ্জোদারো আমাদের কাছে আরও আকর্ষণীয় ও রহস্যময়।
বর্তমানে মহেঞ্জোদারো ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট। তবে জলবায়ু পরিবর্তন, অবহেলা আর ক্ষয়ের কারণে এর অবস্থা ভঙ্গুর। বিজ্ঞানীরা সতর্ক করছেন—এভাবে চলতে থাকলে আমরা হয়তো একসময় পুরোপুরি হারিয়ে ফেলব মানবসভ্যতার এই অমূল্য দলিল।
মহেঞ্জোদারো শুধু একটি প্রাচীন নগরী নয়, বরং প্রমাণ—মানুষ কত হাজার বছর আগেই আধুনিক চিন্তা, পরিকল্পনা আর সমাজজীবন গড়ে তুলতে পেরেছিল। আজ আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে, তার শেকড় যে কত গভীরে গিয়ে পৌঁছে, মহেঞ্জোদারো সেটাই মনে করিয়ে দেয়।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।