রাতে কেন ঘুম আসে না? মানবদেহের ঘুমের চক্রের পেছনের বৈজ্ঞানিক রহস্য ও আধুনিক জীবনের প্রভাব

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
ঘুম এমন একটি প্রাকৃতিক অবস্থা, যেখানে শরীর ও মস্তিষ্ক সাময়িকভাবে বিশ্রাম নেয় এবং সচেতনতা অনেকটাই হ্রাস পায়। যদিও এটি কোমা বা শীতনিদ্রার মতো গভীর নয়, তবুও শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য মানসম্মত ঘুম অপরিহার্য। কিন্তু আধুনিক জীবনে ঘুমের সমস্যা যাকে আমরা অনিদ্রা বা ঘুমের ব্যাঘাত বলি,যা হতাশাজনকভাবে সাধারণ হয়ে উঠেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, রাতের ঘুম না আসার পেছনে একাধিক জৈবিক, মানসিক ও পরিবেশগত কারণ রয়েছে।
যেমন -
১. স্ক্রিন টাইম ও নীল আলো: আজকের যুগে আমাদের জীবন ঘিরে রয়েছে স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, ল্যাপটপ ও টিভি। এই ডিভাইসগুলো থেকে নির্গত নীল আলো (Blue Light) মেলাটোনিন হরমোনের উৎপাদনকে বাধা দেয়। মেলাটোনিন হল সেই হরমোন যা আমাদের শরীরকে জানায় "ঘুমানোর সময় হয়েছে।" যখন মেলাটোনিন কমে যায়, তখন আমাদের সারকেডিয়ান রিদম,যাকে ঘুমের স্বাভাবিক বায়োলজিক্যাল ঘড়ি বলা হয়—ভেঙে যায়। এর ফলে রাতের অন্ধকারেও মস্তিষ্ক সতেজ থাকে, চোখ বন্ধ করেও ঘুম আসে না।
২. মানসিক চাপ ও উদ্বেগ: ঘুমের ব্যাঘাতের আরেকটি বড় কারণ হলো মানসিক চাপ ও উদ্বেগ।
কর্মসংক্রান্ত চাপ, পারিবারিক দ্বন্দ্ব বা ভবিষ্যৎ চিন্তা আমাদের সিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম সক্রিয় করে। এটি কোর্টিসল হরমোন বাড়ায়, যা শরীরকে 'যুদ্ধ বা পালানোর অবস্থায়' রাখে। ফলস্বরূপ, মস্তিষ্ক শিথিল হতে পারে না, ঘুমের জন্য প্রয়োজনীয় গামা-অ্যামিনোবিউটারিক অ্যাসিড (GABA) এবং অন্যান্য স্লিপ-ইনডিউসিং নিউরোট্রান্সমিটার যথাযথভাবে কাজ করতে পারে না।
৩. খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারা: আমাদের খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারাও ঘুমের উপর গভীর প্রভাব ফেলে। রাতে অতিরিক্ত ক্যাফেইন বা চা-কালো কফি গ্রহণ সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমকে উদ্দীপ্ত করে। ভারী খাবার বা অ্যালকোহল খাওয়া হজমে সমস্যা সৃষ্টি করে এবং ঘুমের ডিপ স্লিপ স্টেজ ব্যাহত করে। অনিয়মিত ঘুমের রুটিনও শরীরের ঘড়িকে বিভ্রান্ত করে।
৪. শারীরিক ও হরমোনজনিত কারণ: অনিদ্রার পেছনে কখনো অদৃশ্য হরমোনাল সমস্যাও থাকতে পারে। থাইরয়েডের অতিসক্রিয়তা বা হরমোনের ভারসাম্যহীনতা ঘুমকে ব্যাহত করতে পারে। রেণিন-অ্যাঞ্জিওটেনসিন এবং মেলাটোনিন এর অনিয়ম শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে প্রভাব ফেলে, যা গভীর ঘুমকে বাধাগ্রস্ত করে। ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপও রাতে ঘুম ভাঙার সম্ভাবনা বাড়ায়।
৫. পরিবেশগত ও জীবনধারাগত প্রভাব: রাতের অত্যধিক আলো বা শব্দ, ঘরের তাপমাত্রা বেশি বা কম থাকা—এগুলো মেলাটোনিন নিঃসরণ ও ঘুমের চক্রকে ব্যাহত করে। ঘুমের জন্য আরামদায়ক পরিবেশ না থাকলে দেহ শিথিল হতে পারে না।
৬. ঘুমের জন্য বিজ্ঞানসম্মত সমাধান: বিশেষজ্ঞরা ঘুমের সমস্যার সমাধানে কিছু বৈজ্ঞানিক ও কার্যকর পরামর্শ দেন: রাতের ১–২ ঘণ্টা আগে সব স্ক্রিন ডিভাইস ব্যবহার বন্ধ করা। শিথিল করার জন্য হালকা যোগব্যায়াম, মেডিটেশন বা গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলন। ঘুমের পরিবেশকে অন্ধকার, শান্ত ও আরামদায়ক রাখা, ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত রাখা। নিয়মিত ঘুমের রুটিন মেনে চলা, এমনকি ছুটির দিনেও। অতিরিক্ত ক্যাফেইন ও ভারী খাবার রাতের আগে এড়ানো।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।