মৌমাছি বিলুপ্ত হলে পৃথিবী কি টিকবে? গবেষকদের ভয়ংকর এক সতর্কবার্তা

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
পৃথিবীর প্রায় ৯০ শতাংশ ফল এবং অনেক খাদ্যশস্যের পরাগায়ন মৌমাছির উপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ, আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য চক্র, পুষ্টি এবং অর্থনীতির একটি বড় অংশই এই ছোট প্রাণীর ওপর নির্ভর করছে। কিন্তু যদি মৌমাছি বিলুপ্ত হয়ে যায়, তাহলে পরিস্থিতি হতে পারে ভয়াবহ।
গবেষকরা সতর্ক করেছেন, মৌমাছি ছাড়া মানব সভ্যতা ও প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্র একসাথে বিপন্ন হবে-
১. খাদ্য সংকট:
⇨ ফল ও শস্যের উৎপাদন হ্রাস: অ্যাপেল, আম, বেরি, বাদাম, চকলেটের কোকো বীন, শস্যের মধ্যে যেমন গম, জোয়া অনেকেই মৌমাছির সাহায্য ছাড়া পর্যাপ্ত উৎপাদন সম্ভব নয়।
⇨ পুষ্টির ঘাটতি: ফল ও শস্যের বৈচিত্র্য হ্রাস পেলে মানুষের ডায়েটে প্রয়োজনীয় ভিটামিন, প্রোটিন এবং ফাইবারের অভাব দেখা দেবে।
⇨ মানবজাতির খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিতে: খাদ্য উৎপাদনের কমতে থাকলে বাজারে দাম বাড়বে, খাদ্য সরবরাহ অস্থিতিশীল হবে, বিশেষত নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের জন্য এটি মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।
২. জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি: মৌমাছি শুধু খাদ্যশস্য নয়, বহু উদ্ভিদের পরাগায়নের জন্য অপরিহার্য।
⇨ উদ্ভিদের বিলুপ্তি: মৌমাছি না থাকলে অনেক ফুল ও ফলদায়ী উদ্ভিদ প্রজনন করতে পারবে না, যা ধীরে ধীরে বিলুপ্তির দিকে যাবে।
⇨ প্রাণীদের খাদ্যশৃঙ্খলে প্রভাব: এই উদ্ভিদগুলির উপর নির্ভরশীল পাখি, ক্ষুদ্র প্রাণী, এবং অন্যান্য কীটপতঙ্গও খাদ্য সংকটে পড়বে।
⇨ বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য ভেঙে যাবে: উদ্ভিদ ও প্রাণীর এই অনির্দিষ্ট ক্ষয় সামগ্রিক বাস্তুতন্ত্রের স্থিতিশীলতাকে বিপন্ন করবে।
৩. কৃষিক্ষেত্রে আর্থিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব:
মৌমাছি অনেক বাণিজ্যিক ফসলের জন্য অপরিহার্য।যদি মৌমাছি না থাকে, ফসল উৎপাদন হ্রাস পাবে, কৃষকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। দীর্ঘমেয়াদে জাতীয় অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রভাব পড়বে। উদাহরণস্বরূপ, বাদাম, আপেল বা চকলেটের দাম বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে।
৪. খাদ্য শৃঙ্খলের বিপর্যয়: মৌমাছি বিলুপ্ত হলে শুধু মানবজাতি নয়, অন্যান্য প্রাণীরও খাদ্য উৎস হ্রাস পাবে। বাদামী শুয়োর, পাখি, প্রজাপতি এবং অন্যান্য ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী মৌমাছির দ্বারা পরাগায়িত উদ্ভিদের ওপর নির্ভর করে। মৌমাছি না থাকলে এই প্রাণীর সংখ্যা কমতে থাকবে, যা খাদ্য শৃঙ্খলে সামগ্রিক ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে।
সংরক্ষণের জন্য সমাধান:
⇨ কীটনাশকের ব্যবহার কমানো:
বাণিজ্যিক কৃষিতে রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার মৌমাছির জীবনহানি ঘটায়। বিকল্প, প্রাকৃতিক পদ্ধতি ও অল্প রাসায়নিক ব্যবহার নিশ্চিত করা যেতে পারে।
⇨ জৈব ও পরিবেশবান্ধব চাষ: রাসায়নিক হ্রাস করে জৈব চাষ করা মৌমাছিকে নিরাপদ আশ্রয় দেয়। উদ্ভিদের প্রাকৃতিক বিকাশ নিশ্চিত হয়।
⇨ ফুলের দালান ও ঝোপঝাড় সংরক্ষণ: কৃষি জমির চারপাশে ফুলের দালান ও ছোট জলাধার তৈরি করলে মৌমাছি পর্যাপ্ত খাদ্য ও আশ্রয় পায়।
⇨ গবেষণা ও জনসচেতনতা বৃদ্ধি: মৌমাছির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বোঝাতে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং সংরক্ষণমূলক গবেষণা অপরিহার্য।
দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব: যদি মৌমাছি বিলুপ্তি অব্যাহত থাকে, মানবজাতির খাদ্য নিরাপত্তা, অর্থনীতি এবং বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য একসাথে বিপন্ন হবে। প্রাকৃতিক উদ্ভিদ ও প্রাণীজগৎ হ্রাস পাবে, যা পৃথিবীর জীববৈচিত্র্যের ধ্বংস ঘটাবে।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।