রাকসুতে ১১ প্যানেলের লড়াই : শিবির–ছাত্রদলসহ আলোচনায় ৬টি প্যানেল

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনকে ঘিরে আজ থেকে শুরু হতে যাচ্ছে আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা। এবারের নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবির, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, সাবেক সমন্বয়ক এবং স্বতন্ত্রপ্রার্থীদের সমন্বয়ে মোট এগারোটি প্যানেল লড়াইয়ে নেমেছে। আজ রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত ঘোষিত এই এগারোটি প্যানেলের মধ্যে শুধু ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরই পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করেছে, অন্য কোনো সংগঠন বা স্বতন্ত্র প্যানেল তা করতে পারেনি।
কমিশনের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এবারের নির্বাচনে ভিপি পদে ১৮ জন, জিএস পদে ১৩ জন ও এজিএস পদে ১৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
দীর্ঘ ৩৫ বছর পর আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রাকসু, সিনেট সদস্য ও হল সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনকে ঘিরে পুরো ক্যাম্পাসে ইতোমধ্যেই বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ। রাকসুর কেন্দ্রীয় ২৩টি পদে ৩৯৫টি, সিনেটের ৫টি পদে ৮৪টি এবং ১৭টি হলে হল সংসদ নির্বাচনের জন্য ৭৫৪টি মনোনয়নপত্র বিক্রি হয়েছে। তফসিল ঘোষণার পর মনোনয়নপত্র জমা, যাচাই-বাছাই ও প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ শেষ হয়েছে। গতকাল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময়সীমা শেষ হওয়ার পর আজ প্রকাশিত হবে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা, যার মধ্য দিয়ে শুরু হবে আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা।
এবারের রাকসু নির্বাচনে এগারোটি প্যানেল বিভিন্ন নামে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ছাত্রশিবির–সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট', ছাত্রদলের মনোনীত প্যানেল, ‘রাকসু ফর র্যাডিক্যাল চেঞ্জ’, ‘গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ’, ‘অপরাজেয় ৭১, অপ্রতিরোধ্য ২৪’, ‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’, ‘সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ’, ‘সচেতন শিক্ষার্থী পরিষদ’, ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী জোট’, 'ইউনাইটেড ফর রাইটস' এবং 'ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্টুডেন্ট অ্যালায়েন্স'।
রাকসু নির্বাচনে শীর্ষ ৬ প্যানেলের পদ প্রতিদ্বন্দ্বী:
রাকসু নির্বাচনকে ঘিরে বর্তমানে ঘোষিত ১১টি প্যানেলের মধ্যে ৬টি প্যানেল আলোচনার শীর্ষে রয়েছে। এদিকে ইসলামী ছাত্রশিবির তাদের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। কারণ, তারা শুধু তাদের দলকেন্দ্রিক প্যানেল ঘোষণা করবে বলে ধারণা করা হলেও তাদের প্যানেলে স্থান পেয়েছেন তিন নারী শিক্ষার্থী, জুলাই আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থী, সাবেক সমন্বয়ক এবং একজন সনাতন ধর্মালম্বী শিক্ষার্থী। এছাড়াও জাতীয়তাবাদি ছাত্রদলও তাদের পূর্নাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করেছেন।
ছাত্রশিবিরের সমর্থিত 'সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট' প্যানেল থেকে সহ সভাপতি (ভিপি) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন শাখা ছাত্রশিবিরের বর্তমান সভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে লড়বেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ফাহিম রেজা ও সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে লড়বেন ‘স্টুডেন্ট নেটওয়ার্ক সোচ্চারের’ সভাপতি এস এম সালমান সাব্বির।
ছাত্রশিবিরের প্যানেলে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে সাবেক সমন্বয়ক মো. ফাহিম রেজা বলেন, "স্বতন্ত্রভাবে জিএস পদে নির্বাচনের আকাঙ্ক্ষা ছিল। পরে ইসলামী ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে ইনক্লুসিভ প্যানেল করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে আমি ছাত্রশিবিরের প্যানেলে নির্বাচন করার সম্মতি দিই।"
ছাত্রদল মনোনীত প্যানেল থেকে সহ সভাপতি (ভিপি) পদে লড়বেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সহ সভাপতি শেখ নূর উদ্দিন আবির, জিএস পদে শাখা ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক নাফিউল জীবন ও এজিএস পদে শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহিন বিশ্বাস এষা লড়বেন।
ছাত্রদলের প্যানেল সম্পর্কে নাফিউল ইসলাম জীবন বলেন বলেন, "আমাদের মূল লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষা এবং তাদের মৌলিক সমস্যার সমাধান করা। ক্ষমতার রাজনীতি নয়, শিক্ষার্থীদের কল্যাণই আমাদের রাজনীতি। কারণ আমরা সবসময় শিক্ষার্থীদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেই। আবাসন সংকট সমাধান, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং শান্তিপূর্ণ শিক্ষা পরিবেশ গড়াই আমাদের প্রতিশ্রুতি।"
'আধিপত্যবিরোধী ঐক্য' প্যানেল থেকে সহ সভাপতি (ভিপি) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী সজীব, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে সালাহউদ্দিন আম্মার এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে লড়বেন আকিল বিন তালেব।
এ বিষয়ে সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী সজীব বলেন, "ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়করা সংগঠিত হলেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা কমিটি হয়নি। কেন্দ্রীয় কমিটিতে রাখা হলেও সমন্বয়করা সেখান থেকে পদত্যাগ করেছেন। ফলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়করা সাংগঠনিক সীমাবদ্ধতার বাইরে কাজ করতে পেরেছেন। শীর্ষ পদ সীমিত হওয়ায় সবাই ভিপি বা জিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার যোগ্যতা রাখলেও ঐক্য গড়া সম্ভব হয়নি। তবে সবার উদ্দেশ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কল্যাণ।"
'গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ' প্যানেলে সহ সভাপতি (ভিপি) পদে লড়বেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) কোষাধ্যক্ষ কাউছার আহম্মেদ এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে লড়বেন ছাত্র গণমঞ্চের আহ্বায়ক নাসিম সরকার।
তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে ফুয়াদ রাতুল বলেন, "আমাদের প্যানেলের মূল লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে প্রেশার গ্রুপ হিসেবে কাজ করা। আমরা সেই ফ্যাসিবাদের আমল থেকেই শিক্ষার্থীদের কন্ঠস্বর হিসেবে কাজ করছি। ক্যাম্পাসে যখন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দাড়ানোর লোক পাওয়া যেতোনা, তখন থেকেই আমরা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছি। রাকসুতে নির্বাচিত হলে আমরা সর্বাধিক গুরুত্ব দেব যেন রাকসু নিয়মিত হয় এবং অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডারে রাকসু যুক্ত হয়।"
'রাকসু ফর র্যাডিক্যাল চেঞ্জ' প্যানেলে সহ সভাপতি (ভিপি) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি মেহেদী মারুফ। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে উত্তরণ লেখক ও পাঠক সূতিকাগারের সাবেক সভাপতি আফরিন জাহান এবং সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে প্রতিদ্বন্দিতা করবেন ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আল শাহরিয়ার শুভ।
'সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ' প্যানেলে সহ সভাপতি (ভিপি) পদে লড়বেন সাবেক সমন্বয়ক এবং রাকসু নির্বাচনের ইতিহাসে প্রথম নারী ভিপি প্রার্থী তাসিন খান। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী রাজন আল আহমেদ এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন সাবেক সমন্বয়ক মাহাইর ইসলাম।
তাসিন খান বলেন, "জুলাই গণঅভ্যুত্থানে প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো রাবিতেও সম্মুখসারীতে ভূমিকা পালন করেছেন ক্যাম্পাসের নারী শিক্ষার্থীরা। গত কয়েক বছরে নারী শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বেড়েছে। নারী ভোটাররা জুলাইয়ে যেমনভাবে গণতান্ত্রিক ও অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে শামিল ছিলেন, তেমনি নেতৃত্বও দিবেন। আশা করি এবারের রাকসুতে সর্বোচ্চ নারী প্রতিনিধিত্ব আমরা দেখতে পাব।"
সার্বিক বিষয়ে রাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, “রাকসুর কার্যক্রম নিয়মিতভাবে চলছে এবং সবকিছু ঘোষিত তফসিল অনুযায়ীই অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে মনোনয়নপত্র বিতরণ, যাচাই–বাছাই ও দাখিল সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল বিকেল ৫টা পর্যন্ত ছিল প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ছিল। এ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সংসদে মোট ১১ জন এবং সিনেট সদস্য নির্বাচনে মোট ৩ জন প্রার্থী তাদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেছেন। আজকে প্রকাশ করা হবে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা। প্রার্থীরা নিজ নিজ জায়গা থেকে আচরণ বিধি মেনে আজ থেকেই প্রচারণা করতে পারবেন।"
উল্লেখ্য, আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে রাকসু নির্বাচন। এদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ভবনগুলোতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এরপর একই দিনে ভোট গণনা এবং ফলাফল প্রকাশ করা হবে।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।