গরম নাকি ঠান্ডা? স্নানের পানিই যেভাবে বদলে দিতে পারে আপনার ত্বকের কাঠামো!

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
স্নান শুধু শরীর পরিষ্কার রাখার জন্য নয়, বরং আমাদের মেজাজ, মানসিক চাপ, এমনকি ত্বকের স্বাস্থ্যের সঙ্গেও গভীরভাবে জড়িত। অনেকেই সকালে দিন শুরু করেন ঠান্ডা পানির ঝাপটা দিয়ে, আবার কেউ দিনের ক্লান্তি ঝরিয়ে ফেলতে চান গরম পানির স্নানে। কিন্তু প্রশ্ন হলো ত্বকের জন্য আসলে কোনটা ভালো, গরম না ঠান্ডা পানি?
গরম পানির স্নান আরামদায়ক হলেও কিন্তু কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ। গরম পানির স্নানে ঢুকলেই এক ধরনের স্বস্তি আসে। ঠান্ডা আবহাওয়ায় গরম পানি যেন শরীরের ক্লান্তি গলিয়ে দেয়।এতে -
⇨ রক্ত চলাচল বাড়ে: গরম পানি শরীরে রক্তপ্রবাহকে সক্রিয় করে। ফলে ক্লান্ত মাংসপেশি শিথিল হয়, শরীর হালকা লাগে।
⇨ ময়লা ও তেল দূর হয়: গরম পানি ত্বকের ছিদ্র খুলে দেয়। ফলে জমে থাকা ঘাম, ধুলো আর অতিরিক্ত তেল পরিষ্কার হয় সহজে।
⇨ মানসিক প্রশান্তি আনে: স্ট্রেসে ভোগা বা ঘুম না আসলে গরম পানির গোসল স্নায়ু শান্ত করে ঘুমকে সহজ করে।
কিন্তু এর বিপরীতে কিছু অসুবিধাও আছে-
⇨ ত্বক শুষ্ক হয়: বারবার গরম পানিতে স্নান করলে ত্বকের প্রাকৃতিক তেল নষ্ট হয়ে যায়। ফলাফল—রুক্ষ, টানটান আর ফাটা ফাটা ত্বক।
⇨ সংবেদনশীল ত্বকে ক্ষতি: একজিমা, সোরিয়াসিস বা অ্যালার্জি থাকলে গরম পানি ত্বককে আরও জ্বালাপোড়া করতে পারে।
অন্যদিকে ঠান্ডা পানির স্নান সতেজ তবে সবসময় উপযোগী নয়। ঠান্ডা পানির ঝাপটা শরীরের ওপর একেবারেই আলাদা প্রভাব ফেলে।যেমন-
⇨ সতেজতা আনে: সকালে ঠান্ডা পানিতে স্নান করলে শরীর সঙ্গে সঙ্গে চাঙ্গা হয়ে ওঠে, অলসভাব কেটে যায়।
⇨ ছিদ্র টাইট করে: ঠান্ডা পানি ত্বকের ছিদ্র সংকুচিত করে, ফলে ধুলো-ময়লা জমা হওয়ার সম্ভাবনা কমে।
⇨ চুল ও ত্বক উজ্জ্বল রাখে: ঠান্ডা পানি কিউটিকল শক্ত করে, ফলে চুল বেশি ঝলমলে ও ত্বক মসৃণ দেখায়।
⇨ প্রদাহ কমায়: ব্যায়াম বা দৌড়ঝাঁপের পর ঠান্ডা পানির গোসল পেশির ব্যথা ও ফোলা কমাতে সাহায্য করে।
তবে সীমাবদ্ধতাও আছে-
⇨ শীতকালে ঠান্ডা পানি সর্দি-কাশি বা হাড় কাঁপানো ঠান্ডা বাড়িয়ে দিতে পারে।
⇨ শিশু, বৃদ্ধ বা অসুস্থদের জন্য হঠাৎ ঠান্ডা পানিতে স্নান ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
তাহলে কোনটা বেছে নেবেন?
আসলে একেবারে "এইটা ভালো, ওইটা খারাপ" এমন কোনো উত্তর নেই। এটা নির্ভর করে আবহাওয়া, শরীরের অবস্থা এবং ত্বকের ধরন অনুযায়ী।
তবে কিছু বিষয় জেনে রাখা ভালো -
⇨ শুষ্ক বা সংবেদনশীল ত্বকের ক্ষেত্রে একেবারে গরম পানি এড়িয়ে চলুন। বরং হালকা গরম বা কুসুম গরম পানি ব্যবহার করুন।
⇨ তেলতেলে ত্বকে ঠান্ডা পানি বা হালকা গরম পানি ভালো কাজ করে, এতে ত্বক সতেজ থাকে।
⇨ গ্রীষ্মকালে ঠান্ডা পানি বেশি আরাম দেয় এবং ঘাম ধুয়ে শরীরকে হালকা করে।
⇨ শীতকালে হালকা গরম পানি শরীরকে আরাম দেয়, তবে একেবারেই ফুটন্ত গরম পানি নয়।
⇨ চুলের জন্য, শ্যাম্পু করার সময় কুসুম গরম পানি ভালো, কিন্তু শেষ ধোয়াটা ঠান্ডা পানিতে করলে চুল ঝলমলে হয়।
দৈনন্দিন টিপস-
স্নান ১০–১৫ মিনিটের বেশি না হওয়াই ভালো। সাবান বা শ্যাম্পু ব্যবহারের পর হালকা ময়েশ্চারাইজার লাগালে ত্বকের আর্দ্রতা ঠিক থাকে। গরম-ঠান্ডা দুই ধরনের পানির সুবিধা নিতে চাইলে "কনট্রাস্ট শাওয়ার" ব্যবহার করতে পারেন—মানে কখনো গরম, কখনো ঠান্ডা পানি দিয়ে ধোয়া। এতে রক্ত সঞ্চালন আরও উন্নত হয়।
সবশেষে বলা যায়, ত্বক চায় ভারসাম্য। খুব বেশি গরম পানি যেমন ক্ষতি করতে পারে, তেমনি খুব ঠান্ডা পানিও সবসময় উপযোগী নয়। তাই নিজের শরীরের প্রয়োজন বুঝে, আবহাওয়া অনুযায়ী, কুসুম গরম পানি-ই হতে পারে সবচেয়ে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর সমাধান।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।