ঘুমাতে যাওয়ার আগে বই না মোবাইল! আপনি জানেন কি মস্তিষ্ক কোনটিকে পছন্দ করে?

ঘুমাতে যাওয়ার আগে বই না মোবাইল! আপনি জানেন কি মস্তিষ্ক কোনটিকে পছন্দ করে?
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

প্রতিদিন রাতের বেলা যখন আমরা বিছানায় শুতে যাই, হাতে থাকে আমাদের প্রিয় জিনিস কেউ মোবাইল ফোন, কেউ বই। এই সাধারণ অভ্যাসটি কেবল বিনোদন বা তথ্যের জন্য নয়, বরং আমাদের মস্তিষ্ক ও ঘুমের মান নির্ধারণে সরাসরি প্রভাব ফেলে। বিজ্ঞান বলছে, ঘুমের আগে মস্তিষ্ক কোনটিকে বেশি পছন্দ করে তা একেবারেই স্বচ্ছ।

মোবাইল এখন আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু ঘুমের আগে এর ব্যবহার আমাদের মস্তিষ্ক ও শরীরের জন্য চাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। 

⇨ মোবাইলের স্ক্রিন থেকে নির্গত নীল আলো (Blue Light) সরাসরি চোখে পড়ে। এই নীল আলো মেলাটোনিন হরমোন,যা ঘুম আনার মূল হরমোন কে দমন করে। ফলাফল: ঘুম আসতে দেরি হয়, গভীর ঘুম কমে যায়।
 

⇨ মস্তিষ্কের উত্তেজনা বৃদ্ধি-সোশ্যাল মিডিয়া, ভিডিও, নিউজ বা গেমিং—সবই মস্তিষ্ককে সজাগ ও সতর্ক রাখে। ঘুমানোর আগে মস্তিষ্ক বিশ্রাম নিতে না পেলে- রিম (REM) ঘুম ব্যাহত হয়, স্মৃতি সংরক্ষণ প্রক্রিয়া কমে যায়, মানসিক চাপ বৃদ্ধি পায়,
 

⇨ পরদিনের প্রভাব কম ঘুম বা অশান্ত ঘুমের কারণে:

◑ মনোযোগ কমে যায়

◑ স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়

◑ মেজাজ খিটখিটে হয়ে ওঠে
 

অন্যদিকে, বছরগুলো ধরে দেখা গেছে, শোবার আগে কাগজের বই পড়া মস্তিষ্ককে শান্ত ও স্নিগ্ধ করে-

⇨ রিল্যাক্সেশন ইফেক্ট: বইয়ের পাতার স্পর্শ ও চোখের ধীরে ধীরে পাঠের অভ্যাস মস্তিষ্কের স্নায়ুতন্ত্রকে শিথিল করে। হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন ধীরে আসে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত হয়।

⇨ স্ট্রেস কমানো: গবেষণায় দেখা গেছে মাত্র ৬ মিনিট বই পড়লেই মানসিক চাপ প্রায় ৬০% কমতে পারে। মস্তিষ্কের অ্যামিগডালা (Amygdala)- যা ভয়, উদ্বেগ ও উত্তেজনার জন্য দায়ী,শান্ত হয়ে যায়।

⇨ গভীর ঘুমের সহায়ক: বই পড়ার মাধ্যমে মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে ক্লান্ত হয়। স্লিপ সাইকেল (Sleep Cycle)-এর নরমাল রিদম বজায় থাকে, ফলে ঘুমের গুণমান বৃদ্ধি পায়।
 

মস্তিষ্ক কোনটিকে পছন্দ করে?

নিউরোসায়েন্সের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যায়, মোবাইল নাকি বই—মস্তিষ্ক বইকে বেশি পছন্দ করে। কারণ: মোবাইল মস্তিষ্ককে উত্তেজিত ও সতর্ক রাখে যা  ঘুমের মান খারাপ করে। আর বই মস্তিষ্ককে শান্ত ও রিল্যাক্স করে যা ঘুমের মান উন্নত করে।
 

ঘুমের আগে সঠিক অভ্যাস-

⇨ মোবাইল দূরে রাখুন: ঘুমের কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে ফোন দূরে রাখলে মেলাটোনিন প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন হয়।

⇨ নরম আলো ব্যবহার করুন: যদি বই পড়েন, হালকা আলোর ব্যবহার করুন যাতে চোখে চাপ না পড়ে।

⇨ কন্টেন্ট নির্বাচন: বই হতে পারে হালকা উপন্যাস বা নন-ফিকশন। উত্তেজক বা নেগেটিভ কনটেন্ট ঘুম ব্যাহত করতে পারে।

⇨ পদ্ধতিগত রুটিন: প্রতিদিন একই সময়ে বই পড়া বা স্ক্রিন থেকে বিরতি নেওয়া মস্তিষ্ককে ঘুমের জন্য প্রস্তুত করে।
 

ডার্মাটোলজিস্ট এবং স্লিপ থেরাপিস্টরা একমত  "মোবাইল ঘুমের আগে ব্যবহার করলে মস্তিষ্ক সচল থাকে এবং ঘুমের মান খারাপ হয়। বই পড়া মস্তিষ্ককে শান্ত করে, ঘুমের জন্য প্রস্তুত করে এবং পরদিনের কনসেনট্রেশন বাড়ায়।"

মোবাইল আমাদের জন্য তথ্য ও বিনোদনের উৎস, কিন্তু বই হলো মস্তিষ্কের শান্তির সঙ্গী। ঘুমের মান ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য রাতে মোবাইলকে সাময়িক 'বাই-বাই' করে বইয়ের পাতায় চোখ বোলানোই সর্বোত্তম।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ