সাবধান! 'অতিরিক্ত ভালো' হওয়ার নেশা যেভাবে মারাত্মক মানসিক রোগে ঠেলে দিচ্ছে আপনাকে

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
অন্যকে খুশি রাখতে গিয়ে নিজের সুখ ও মানসিক স্বাচ্ছন্দ্য ত্যাগ করলে যে চাপ তৈরি হয়, তার মানসিক প্রভাব গভীর এবং ভয়াবহ হতে পারে। "সবসময় অন্যকে খুশি করতে চেষ্টা করা কতটা নিরাপদ?" মনে হতে পারে এটি সদয়তা বা ভালোবাসা, কিন্তু যখন নিজেকে বারবার পিছনে ঠেলে দিয়ে অন্যের সন্তুষ্টির জন্য জীবনকে সাজাতে হয়, তখন তা মানসিক চাপের দিকে রূপান্তরিত হয়। অনেক মানুষ 'people pleaser' হয়ে নিজের সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্য হারান, আর সেই চাপ কখনো কখনো ভয়াবহ মানসিক ও শারীরিক সমস্যার দিকে নিয়ে যেতে পারে। আজ আমরা জানব, কেন ভালো মানুষ হওয়ার এই চাপ এত বিপজ্জনক এবং কীভাবে আমরা নিজেদের মানসিক ভারসাম্য বজায় রেখে সত্যিকারের ভালো মানুষ হতে পারি।
ভালো মানুষ হওয়ার চাপ বা অন্যের সন্তুষ্টির জন্য নিজের স্বাচ্ছন্দ্য ত্যাগ অনেকেই করে। প্রথম দিকে এটি প্রশংসনীয় মনে হলেও, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি মানসিক ও শারীরিক চাপ তৈরি করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ক্রমাগত অন্যের মন খুশি করার চেষ্টা করেন, তারা উদ্বেগ, হতাশা, স্ব-সম্মান হ্রাস এবং সম্পর্কের সমস্যা–এর মতো সমস্যায় ভোগেন।
কেন ভালো মানুষ হওয়ার চাপ ভয়ঙ্কর হতে পারে
⇨ নিজের চাহিদা উপেক্ষা করা: অন্যকে খুশি করার চেষ্টা করতে গিয়ে নিজের প্রয়োজন ও সীমানা উপেক্ষা করা হয়। ফলে ব্যক্তি শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তিতে ভোগে।
⇨ দীর্ঘমেয়াদী মানসিক চাপ: প্রতিনিয়ত নিজেকে যাচাই করার প্রক্রিয়া-"আমি কি যথেষ্ট ভালো?"-মানসিক অবসাদ ও উদ্বেগের কারণ হয়।
⇨ সম্পর্কে অসন্তোষ: নিজেকে পুরোপুরি দিতে গিয়ে ব্যক্তি সম্পর্কের ভারসাম্য হারাতে পারে।মানুষ কখনও কখনও বোঝে না যে আপনি নিজের সীমা অতিক্রম করছেন।
⇨ স্ব-সম্মান হ্রাস: যদি সব সময় অন্যের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেন, নিজের সিদ্ধান্ত ও চাহিদাকে ছোট মনে করতে শুরু করেন। এটি আত্মবিশ্বাস ও আত্মসম্মানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
ভালো মানুষ হওয়ার চাপ মোকাবেলার উপায়:
১. আত্ম-সচেতনতা বৃদ্ধি করুন: নিজের ভালো ও খারাপ দিক চিহ্নিত করুন। নিজের অনুভূতি ও সীমা সম্পর্কে সচেতন থাকুন।
২. নিজের দুর্বলতা স্বীকার করুন: ভুল করা স্বাভাবিক। নিজের ভুলগুলোকে শেখার সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করুন।
৩. ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখুন: নিজের মনকে সতেজ ও ইতিবাচক রাখলে চাপ কমে। ধ্যান, ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ ও দৈনন্দিন প্রশংসার অভ্যাস কার্যকর।
৪. ধৈর্য ও সহানুভূতির চর্চা: অন্যদের প্রতি সহানুভূতিশীল হোন, কিন্তু নিজের জন্যও একই মান বজায় রাখুন। অন্যের মন খুশি করার আগে নিজের মানসিক স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দিন।
৫. নিজের প্রতি যত্ন নিন: পর্যাপ্ত ঘুম, সুষম খাদ্য, হালকা ব্যায়াম ও হবি চর্চা রাখুন। মানসিক স্বাস্থ্যকে অবহেলা করা 'people pleaser' হওয়ার নেতিবাচক প্রভাবকে আরও বাড়িয়ে দেয়।
৬. অন্যকে সম্মান করুন, নিজের সীমা বজায় রাখুন: অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দিন, কিন্তু নিজের চাহিদা ও সীমা উপেক্ষা করবেন না। "না" বলার ক্ষমতা শেখা জরুরি।
ভালো মানুষ হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় গুণাবলী
◑ সততা: সত্য কথা বলা এবং কাজের ক্ষেত্রে সৎ থাকা।
◑ দয়া ও সহানুভূতি: অন্যের দুঃখ কষ্ট বোঝা, সহানুভূতিশীল হওয়া।
◑ অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল: মতামত, পছন্দ এবং বিশ্বাসকে সম্মান করা।
◑ বিনয় ও মার্জিত আচরণ: অহংকার কমানো এবং মার্জিতভাবে আচরণ করা।
◑ অন্যের ক্ষতি না করা: ঈর্ষা বা শত্রুতা না রাখা, কাউকে ইচ্ছাকৃতভাবে কষ্ট না দেওয়া।
ভালো মানুষ হওয়া চাওয়া স্বাভাবিক এবং প্রশংসনীয়। তবে নিজের সীমা ও মানসিক স্বাস্থ্যকে উপেক্ষা করলে 'people pleaser' হওয়ার চাপ ভয়ঙ্কর হয়ে দাঁড়ায়।আত্ম-সচেতনতা, নিজের দুর্বলতা স্বীকার, ইতিবাচক মনোভাব, ধৈর্য, সহানুভূতি এবং নিজের যত্ন—এই সব পদক্ষেপ মানসিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। ভালো মানুষ হওয়ার মানে সবসময় অন্যকে খুশি করা নয়; বরং নিজের মধ্যে সততা, সহানুভূতি ও সীমানা বজায় রাখা, এটিই প্রকৃত ভালো মানুষ হওয়ার মাপকাঠি।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।